পুলিশকে সাধুবাদ, এসপি-কে ছুটি
দুবরাজপুরে ‘আক্রমণের মুখেও সংযত থাকা’র জন্য বীরভূম পুলিশকে ধন্যবাদ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ঘটনার পরে পরে সেই বীরভূম পুলিশেরই শীর্ষ কর্তা হৃষিকেশ মিনাকে যে ভাবে ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হল, তাতে ধন্দে পুলিশমহল। বীরভূমের পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযোগ, রাজ্যস্তরে কথা না-বলে তিনি মঙ্গলবার অভিযান চালিয়েছিলেন।
দুবরাজপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশের প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তির খেয়েও পুলিশ সংযত ছিল, ওদের ধন্যবাদ।’’ মমতার ওই মন্তব্যের সূত্র ধরেই পুলিশের একাধিক কর্তার বক্তব্য, “জেলার এসপি হৃষিকেশ মিনা দাঁড়িয়ে থেকে অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। লাঠি-তিরে রক্ত ঝরার পর বাহিনী যদি সংযত থাকে, তা হলে কৃতিত্বটা তাঁরই।” কিন্তু প্রশাসনিক তদন্তের আগে এসপি’র বিরুদ্ধেই চটজলদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে ধন্দে পুলিশের একাংশ। কেন এই অনাস্থা?
হৃষিকেশ মিনা
প্রশাসনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, “এসপিরাই জেলা গোয়েন্দা দফতরের দায়িত্বে থাকেন। খনির জন্য মাটি কাটার যন্ত্র উদ্ধারে গেলে যে বাধা আসবে, এবং তা মারাত্মক আকার নিতে পারে, সেই তথ্যের খুঁটিনাটি গোয়েন্দা-পুলিশের কাছে ছিল না। আর ছিল না বলেই গ্রামবাসীদের প্রতিরোধ সামাল দিতে পারেনি বীরভূমের পুলিশ।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একেবারেই স্থানীয় স্তরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমাদের কাছে কোনও খবর ছিল না। এমনকী, ওখানে আমাদের পঞ্চায়েত। তারাও জানত না। আমাকেই যে সব জানাতে হবে, তা নয়। কিন্তু রাজ্যস্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। তাই প্রশাসনিক তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
দীর্ঘ দিন বিভিন্ন জেলায় এসপি-র দায়িত্ব পালন করে আসা একাধিক পদস্থ পুলিশকর্তা বলেছেন, “যেখানে আট-দশটি থানার ওসিকে ডাকা হয়, দেড়শোর বেশি বাহিনীকে মজুত করা হয়েছিল, সেখানে রেঞ্জের ডিআইজি বা জোনের আইজি-কে অপারেশনের কথা এসপি জানাবেন না, তা হয় না। তাঁরাও সে বার্তা মহাকরণে দেবেন না, এমন নজির সাম্প্রতিক কালে নেই।” সরকারি সূত্রের খবর: দিন ছয়েক আগে বীরভূমের এসপি মহাকরণে এসে পুলিশ-প্রশাসনের এক কর্তার সঙ্গে দেখা করেন। তাই রাজ্য পুলিশের প্রধান কর্তা-ব্যক্তিরা অভিযানের কথা আগাম জানতেন বলেই পুলিশ-কর্তাদের একাংশের অনুমান।
এত বড় অভিযানের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একটি বেসরকারি সংস্থার একটি যন্ত্র আটকে রেখেছিলেন লোবার বাসিন্দারা। তা উদ্ধারে এত ব্যাপক অভিযানের দরকার কী ছিল, কিছু অফিসার তা বুঝতে পারছেন না। মঙ্গলবার ওই ঘটনায় গুলিতে কেউ মারা গেলে পুলিশ কী যুক্তি দিত, তা-ও ভেবে পাচ্ছেন না। এক কর্তার কথায়, “শেষে তো খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে পুলিশকে! এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা কী হতে পারে?”
কিন্তু সেই ব্যর্থতার দায় যে একা তাঁদের নয়, সে ঈঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। যে কারণে এসপি নিজে মঙ্গলবার বলেন, মেশিন উদ্ধারে তাঁর উপরে ‘বার বার চাপ আসছিল’ কে দিচ্ছিল? কোনও পুলিশ-কর্তা, নাকি রাজনৈতিক নেতা? জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, এক প্রভাবশালী মন্ত্রীই এসপি’র উপরে চাপ সৃষ্টি করছিলেন। তবে এ ভাবে ঘটনার দিনই চটজলদি এসপি’কে ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘অপেশাদার’ বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের একাংশ। এক কর্তার কথায়, “দু’দিন প্রাথমিক তদন্তের পরে শুক্র বা শনিবারেও তো ওঁকে সরিয়ে দেওয়া যেত। মঙ্গলবারেই সরিয়ে দেওয়ার অর্থ, রাজ্য নিজেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।” তাই উচ্চপদস্থ কিছু কর্তাকে বাঁচাতেই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তটি নেওয়া বলে অভিযোগ।
প্রশ্ন আছে আরও। গোলমাল হতে পারে জেনেও পুলিশ কেন হেলমেট ছাড়া ঘটনাস্থলে যায়? জেলা পুলিশ-সূত্রের খবর: বড় অভিযানের সময়ে এসপি-র নির্দেশে পুলিশলাইন থেকে গ্যাস, হেলমেট, গুলি-বন্দুক, লাঠি-ঢাল নেওয়া হয়। থানা-ফাঁড়ি থেকেও প্রয়োজনমতো পুলিশ নেওয়া হয়। কিন্তু সে দিন কোনও পুলিশকর্মী বন্দুক নিয়ে যাবেন না বলে এসপি আগাম বার্তা দিয়েছিলেন। তবে কি এত বড় গোলমালের আভাস তিনি পাননি? রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, কাকভোরে এত গ্রামবাসী কী ভাবে ইট-পাথর, তির-ধনুক নিয়ে পুলিশের উপরে চড়াও হল, দেখা হচ্ছে। রেঞ্জ ডিআইজি এবং আইজি’র রিপোর্ট দেওয়ার কথা। তার আগে প্রশাসনিক তদন্তের নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে সরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.