|
|
|
|
উত্তর-পূর্ব থেকে পিতৃভূমে ফিরছেন বেনে মেনাশেরা
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
আর মাত্র কয়েক সপ্তাহের অপেক্ষা। পিতৃভূমি ইজরায়েল পাড়ি দিতে চলেছে ‘বেনে মেনাশে’-দের চতুর্থ দলটি। জন্মভূমিকে কোনও দিনও নিজভূমি বলে মেনে নিতে পারেননি ওঁরা। বংশানুক্রমে মিজোরামে থেকেও ‘বেনে মেনাশে’ বা ‘নে’মেনাশে’ গোষ্ঠী নিজেদের ইজরায়েলের ভূমিপুত্র হিসেবেই বিশ্বাস করেন। ‘বেনে মেনাশে’ হিব্রু শব্দ। কথাটির অর্থ মেনাশের সন্তান। ১৯৮৯ সালে এদের প্রথম দলটি ইজরায়েলে পাড়ি দেয়। ২০০২ ও ২০০৫ সালে আরও দুই দফায় ইজরায়েল পাড়ি দিয়েছিলেন মেনাশেরা। তার পর দীর্ঘ প্রতীক্ষা। এত দিন পরে, ফের ২৭৫ জন ইহুদি, মিজোরাম ও মণিপুর ছেড়ে ইজরায়েল যেতে চলেছেন। ইহুদি সংগঠন ‘স্যাভেই ইজরায়েল’ তাঁদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে। |
|
বেনে মেনাশেদের ধর্মাচরণ। —নিজস্ব চিত্র |
উত্তর-পূর্বের ‘বেনে মেনাশে’-দের ব্যাপারে প্রথম আলোকপাত করেন ‘আমিসাভ’ সংগঠনের ‘লস্ট ট্রাইব হান্টার’ রাব্বি আভিচালি। এরপর, ইহুদিদের পবিত্র পুস্তক ‘তালমুদ’ মিজো ভাষায় অনুবাদ হয়। হাতেনাতে ‘প্রমাণ’ পেয়ে মিজো, কুকি, পইতেদের বড় একটা অংশ নিজেদের ‘বাইবেল’-এ উল্লেখিত হারিয়ে যাওয়া ১০টি উপজাতির একটি বলে দাবি জোরদার করেন। কথিত আছে, খ্রীষ্ট জন্মের ৭২১ বছর আগে আসিরিয়রা ইজরায়েল থেকে এই ১০টি আদি উপজাতিকে নির্বাসিত করেছিল। তাঁরা ‘জুডাইজ্ম’ পালন করতেন। তাদেরই একটি ধারা পূর্ব এশিয়া, ইউনান, মায়ানমার হয়ে মিজোরাম, মণিপুরে প্রবেশ করে। ‘জুদা থাওনথু’ বা ইহুদি গল্পগুচ্ছ বইয়ের লেখক, আইজলের শ্যাভেই, ইজরায়েল হিব্রু সেন্টারের অধ্যক্ষ। তাঁর মতে, জুডাইজ্ম-এর অধীনে নাগরিক ও সামাজিক আইন ও নিয়ম কানুনগুলি মিজো মেনাশেদের জানা ও মেনে চলা প্রয়োজন। গত ২৫ বছর ধরে মিজোরাম ও মণিপুরি ‘বেনে মেনাশে’-রা ‘জুডাইজ্ম’ পালন করছেন।
প্রচলিত মতে, মিজো, কুকি, পাইতেইরা মেনাশে উপজাতিরই বংশধর। মিজেরাম ও মণিপুর মিলিয়ে মেনাশেদের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। এর মধ্যে, ১৯৮৯ সালে দুই রাজ্যের প্রায় ৮০০ জন ইজরায়েল চলে গিয়েছেন। পরের দুই দফায় গিয়েছেন আরও প্রায় ৯০০ জন। অধিকাংশের ঠাঁই হয়েছে ‘গাজা স্ট্রিপ’ এলাকায়। ২০০৩ সালের পরে মেনাশেদের অভিবাসন নিয়ে ইজরায়েলে জোর বিতর্ক শুরু হয়। বলা হয়, রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্যই তাদের আনা হচ্ছে। ২০০৫ সালে ইজরায়েল সরকারের স্বীকৃতি মেলার পরে মেনাশেদের তৃতীয় দলটি ইজরায়েল পাড়ি দিয়েছিল।
এই দফায় কারা নিজভূমে ফিরতে পারবেন তার বাছাই পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। ‘স্যাভেই ইজরায়েল’-এর কর্তারা প্রথমে মণিপুরে যাবেন। সেখানে ‘মেনাশে’-দের সংখ্যা বেশি। দুই রাজ্যে ‘ইন্টারভিউ’-এর পরে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে। এ বারের তালিকায় কোনও রাব্বি বা ধর্মগুরু থাকছেন না। তবে ‘স্যাভেই ইজরায়েল’ আশ্বাস দিয়েছে, দফায় দফায় সকলেই পিতৃভূমিতে ফিরতে পারবেন।
শেষ বার, ২০০৫ সালে ধর্মপ্রধান রাব্বি স্লোমো আমার যখন মেনাশেদের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, তারপর রাব্বি আদালতের সদস্যরা মিজোরামে উড়ে এসে ২১৮ জন মিজো ও কুকির ধর্মান্তর করেছিলেন। অনুষ্ঠান হয়েছিল আইজলে। সে বার খ্রিষ্টান ধর্মগুরুরা ও বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেন। এ বার জটিলতা এড়াতে ও ভারতীয় ধর্মান্তরিতকরণ আইন মানতে ভারতে ‘মেনাশে’-দের ধর্মান্তর প্রক্রিয়া হচ্ছে না। তা হবে ইজরায়েলে পৌঁছে। নতুন দেশের রীতিনীতি বোঝার জন্য প্রথমে তাঁদের ‘শিবির’-এ রাখা হবে। মেনাশেদের ইজরায়েল নিয়ে যাওয়া ও রাখার খরচ ‘স্যাভেই ইজরায়েল’-ই বহন করবে। |
|
|
|
|
|