|
|
|
|
জয়ের বক্তৃতাই লিখে রেখেছিলেন রোমনি
সংবাদসংস্থা • বস্টন |
বিমানে বসে তখন নিজের আইপ্যাডে লিখে চলেছেন তিনি। শেষ করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন। বললেন, “সবে মাত্র জয়ের পরের বক্তৃতাটা শেষ করলাম। শব্দ সংখ্যা ১,১১৮।” প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মিট রোমনি তখনও নিশ্চিত যে, শেষ হাসিটা তিনিই হাসবেন।
এতটাই যে, উপস্থিত সাংবাদিকেরা যখন তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “যদি হেরে যান?” রোমনি জবাব দিলেন, “আপাতত আমি একটি মাত্র বক্তৃতাই লিখেছি।”
মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, দুপুর তিনটে। বিমান এর পরই পিটসবার্গের মাটি ছুঁল। শেষ লগ্নের নির্বাচনী প্রচারে নামলেন রোমনি। তাঁকে দেখতে শয়ে শয়ে মানুষ পার্কিং লটের সামনে দাঁড়িয়ে। তাঁদের উদ্দেশে হাত নাড়লেন রিপাবলিকান প্রার্থী। ভোটের দিনেও এত ভিড় দেখে অভিভূত ম্যাসাচুসেটসের প্রাক্তন গভর্নর জানালেন, মনে হচ্ছে তাঁরাই জিতবেন। বারাক হুসেন ওবামাকে হারিয়ে ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদটি ছিনিয়ে নেবেন তিনিই।
মঙ্গলবার বিকেলে ভোট গোনা শুরু হওয়ার পরও অনেক ক্ষণ পর্যন্ত ছবিটা আশাপ্রদই ছিল। ওবামা-রোমনি টক্কর চলছিল সমানে সমানে। মাঝে একটা বড় সময় রোমনি এগিয়েও গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। জয়ের হাসিটা হেসেছেন বারাক ওবামাই। সুতরাং যে বক্তৃতা তিনি তৈরি করেই রাখেননি, বস্টনে সেটাই দিতে হল মিট রোমনিকে। পরাজয় স্বীকারের বক্তৃতা। আর তা-ও আবার জয়ী প্রেসিডেন্টের আগেই। |
|
পরাজয়ের পরে। ছবি: রয়টার্স |
তবে নির্বাচনের আগে যতটা চোখা চোখা বাক্যবাণে প্রতিদ্বন্দ্বী ওবামাকে বিদ্ধ করেছিলেন, সে সবের ধারকাছ দিয়ে আজ গেলেন না রোমনি। উল্টে বললেন, “প্রার্থনা করি প্রেসিডেন্ট ওবামা আমাদের দেশকে সঠিক পথে চালনা করতে সফল হবেন।” হেরে গিয়েও মুখের হাসিটি ছাড়েননি। বস্টনের মঞ্চে সমর্থকদের ভিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বললেন, “আমি এই মাত্র প্রেসিডেন্ট ওবামাকে ফোন করে তাঁর জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছি। তাঁর স্ত্রী আর সন্তানদের জন্যও আমার শুভেচ্ছা রইল।” এক বারই শুধু বেরিয়ে পড়ল ভিতরকার বেদনা। স্ত্রীকে মঞ্চে ডাকলেন যখন। “খুব ভাল ফার্স্ট লেডি হতে পারত ও,” না বলে পারলেন না রোমনি। সঙ্গে সঙ্গে হাততালিতে ফেটে পড়ল গোটা চত্বর। পরাজিত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর জন্যই।
ভোটের লড়াইয়ে ওবামার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছেন ঠিকই। প্রচার পর্বেও যথেষ্ট বেগ দিয়েছেন তাঁকে। কিন্তু বিশ্লেষকরা একটা বিষয়ে মোটামুটি একমত ছিলেন। জনপ্রিয় নেতা বলতে যা বোঝায়, রোমনি তা নন। গত বারের ওবামার সঙ্গে তো তুলনাই চলতে পারে না। এ বারের নির্বাচনী লড়াইটা আসলে ছিল, জনপ্রিয়তা-কমে যাওয়া ওবামার সঙ্গে এমন এক জনের, যাঁর জনপ্রিয়তা সে ভাবে গড়েই ওঠেনি। বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলোও বলেছিল, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের দিক থেকে রোমনিকে অনেক পিছনে ফেলেছেন ওবামা। শিল্পপতি রোমনির ভাবমূর্তি সাধারণ মার্কিন নাগরিকের কাছে ততটা স্বচ্ছও নয়। আমেরিকার সাধারণ মানুষ ওবামাকেই তাঁদের কাছের লোক বলে মনে করেন। রোমনিকে নয়। কারণ একটা বড় অংশের মত ছিল, রোমনি আসলে উচ্চবিত্তদের হয়ে লড়তে এসেছেন।
কিন্তু ভোটের ফল বেরনোর পর কি ছবিটা খানিকটা বদলে গেল? অনেকেই কিন্তু এখন থেকেই বলতে শুরু করেছেন, আগামী নির্বাচনেও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে রিপাবলিকানদের পছন্দ থাকবেন রোমনিই। আর সে কথাটা হয়তো ওবামাও বিলক্ষণ জানেন। তাই রোমনির বক্তৃতার কিছু ক্ষণ পরেই শিকাগোতে যখন তিনি বিজয়ী বক্তৃতা দিলেন, রোমনি আর তাঁর পরিবারের ভূয়সী প্রশংসা করলেন ওবামা। বললেন, “একটু আগেই রোমনির সঙ্গে আমার কথা হল। আমি ওঁদেরও অভিনন্দন জানিয়েছি। জর্জ রোমনি থেকে মিট। রোমনি পরিবার আমেরিকার জন্য অনেক করেছে। আর কয়েক দিনের মধ্যেই আমি রোমনির সঙ্গে বসব।”
আসল কথা হল, বারাক ওবামা জিতেছেন ঠিকই। কিন্তু জিতেছেন
কান ঘেঁষে। ওবামা ৫০ শতাংশ
ভোট পেয়েছেন, সেখানে রোমনি পেয়েছেন ৪৯ শতাংশ। ফলে অনেকেই মনে করছেন, ২০১২-য় ওবামা বাজিমাত করলেও ২০১৬টা হয়তো হবে রোমনিরই। |
|
|
|
|
|