কর্মসূত্রে বাইরে থাকতে বাধ্য হন যে ভূমিপুত্রেরা, তাঁরা অনেকেই ফিরেছেন ঈদে। অনেকেই থাকবেন মহরম পর্যন্ত। রোজগার থেকে সঞ্চয় করা যে অর্থ তাঁরা নিয়ে এসেছেন, তা তাই এই মরসুমে তাই আসছে স্থানীয় বাজারে।
পরিবার-আত্মীয়স্বজনের জন্য তারা যে কেনাকেটা করেন, টাকার অঙ্কের সেই লাভের অংশ বড় ব্যবসায়ী থেকে পাড়ার মোড়ের মনোহারি দোকান মালিকের কাছেও পৌঁছয়। মুর্শিদাবাদ জেলা চেম্বার অফ কমার্সের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদ্যোৎ দে বলেন, “শুধু জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রেরই ভোটার প্রায় দু’লক্ষ মানুষ কাজের সন্ধানে জেলার বাইরে ছিলেন, তাঁদের অনেকেই দুর্গাপুজো ও ঈদুজ্জোহা উৎসবের আগে বাড়ি ফিরেছেন। ধরে নিচ্ছি তাঁদের এক এক জন গড়ে ২৫ হাজার টাকা করে নিয়ে ফিরেছেন। সেক্ষেত্রে দু’লক্ষ মানুষ ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে গ্রামে ফিরেছেন। এতে জেলার অর্থনীতি যেমন চাঙ্গা হচ্ছে, তেমনি তার সুফল ভোগ করছেন বহরমপুরের ব্যবসায়ীরাও।”
একই ভাবে জেলার অন্য এলাকার যে বাসিন্দারা কাজের জন্য ভিন রাজ্যে গিয়েছিলেন, তাঁরাও ফিরেছেন। ফলে সব মিলিয়ে কয়েক হাজার টাকা জেলায় ঢুকছে। জেলার অর্থনীতিও তাই চাঙ্গা হচ্ছে। প্রদ্যোৎবাবু বলেন, “ঈদ-দুর্গাপুজো-ঈদুজ্জোহা তিনটে বড় উৎসবকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র বহরমপুরে কয়েকশো কোটি টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে। জেলায় ওই টাকার পরিমান প্রায় এক হাজার কোটি টাকারও বেশি।”
ইসলামপুর ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক শঙ্কর মণ্ডলের সাফ কথা, “গ্রামের একটা বড় অংশের মানুষ যারা অন্য রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে যান, তাঁরাই মূলত গ্রামে ফিরে বাজার চাঙ্গা করেছেন। ইসলামপুরে অবশ্য ছোট ব্যবসায়ীদের বাস। হোলসেল মার্কেট বলে কিছু নেই। এলাকার কিছু মানুষ চাকুরিজীবী। কিন্তু তাঁদের উপরে ইসলামপুরের বাজারের কেনাকাটা পুরো নির্ভরশীল নয়। গ্রামের মানুষের উপরে, বিশেষ করে কৃষিজীবী মানুষের উপরেই ব্যবসায়ীদের লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে।” কিন্তু এ বার কৃষিজীবীদের সে ভাবে বাজারে দেখা যায়নি বলে শঙ্করবাবু জানান।
কৃষিজীবীদের সেই আর্থিক অসচ্ছলতা কিছুটা হলেও বাজার অর্থনীতির উপরে প্রভাব ফেলেছে। বেলডাঙা পাঁচরাহা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মহম্মদ সাহিদুজ্জামান বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বলা যায়, চাষের অবস্থা এই মুহূর্তে ভাল জায়গায় নেই। ধান ও পাটের ন্যায্য দাম চাষিরা পাচ্ছেন না। কেননা, কীটনাশক, বীজ, সারের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে ১০০ দিনের কাজে চলে যাওয়ায় গ্রামে শ্রমিকেরও অভাব রয়েছে। চড়া দরে চাষের কাজে লোক নিয়োগ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে চাষে লাভের পরিমাণ অনেকটাই কমে গিয়েছে।” বতর্মানে বোরো ধান ১০৩৫ টাকা এবং পাট কুইন্ট্যাল প্রতি ২৮৫০ টাকা দরে বিকোচ্ছে। তাতে চাষিদের খুব একটা লাভ থাকছে না বললেই চলে।
তবে বাইরের অর্থ জেলায় আসার ফলে অর্থনীতি কিছুটা হলেও চাঙ্গা হচ্ছে বলে বেলডাঙার ওই ব্যবসায়ী জানান। তাঁর কথায়, “ঈদ-পুজো-ঈদুজ্জোহা উপলক্ষে বেলডাঙায় বেচাকেনা ভালই হয়েছে। ঈদ ও পুজো পাশাপাশি হওয়ায় বাজারও চাঙ্গা ছিল। যাঁরা বাইরে কাজ করেন, তাঁদের সপরিবারের বেলডাঙার বাজারে কেনাকাটা করতে দেখা গিয়েছে।” কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায় বলেন, “জেলায় শিল্প বলতে কিছুই নেই। জেলার বিড়ি শিল্পের অবস্থাও খুব একটা ভাল জায়গায় নেই। ফলে মানুষের হাতে অতিরিক্ত অর্থ না থাকলে বাজার অর্থনীতি চাঙ্গা হবে কী ভাবে?” |