নওদা থানার আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে ঢুকলেই চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে অপরিচ্ছন্নতার ছবি। নওদা ব্লকের কেন্দ্রস্থলে আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের ভবনটির প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই বাঁ দিকে আবর্জনার স্তূপ। দুর্গন্ধের চোটে নাকে রুমাল না বেঁধে হাসপাতালে ঢোকাই দায়। আর একটু ভিতরে মূল ভবনে যেতেই চোখে পড়ল দু’দিকে প্রচুর আগাছা। দীর্ঘ দিন পরিষ্কারের অভাবে নিজের মতো বাড়তে পারছে।
এই হাসপাতালের পরিষেবা সম্পর্কিত গাফিলতির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ডাক্তারেরা অনেকেই নিয়মিত আসেন না। তার মধ্যে হোমিওপ্যাথির চিকিৎসক সপ্তাহের অর্ধেক দিনই অনুপস্থিত থাকেন। হাসপাতালের নিজস্ব কোনও অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নেই। এক্স-রে হয় না নিয়মিত। মহিলাদের সাধারণ প্রসব ছাড়া কিছুই হয় না। লাইগেশনের মতো পরিষেবাও এখানে সহজে মেলে না। অপারেশন থিয়েটার রয়েছে কিন্তু অস্ত্রোপচার হয় না। শিশুদের জন্য একটি আলাদা ওয়ার্ড তৈরি হয়ে পড়ে থাকলেও চালু হয়নি। পৃথক ওয়ার্ড থাকলেও সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই ডায়েরিয়া আক্রান্তদেরও চিকিৎসা হয়। এ ছাড়াও সামান্য কিছু হলেই রোগীকে ৪০ কিলোমিটার দূরের বহরমপুরের হাসপাতালে রেফার করার অভিযোগও দীর্ঘ দিনের। |
নওদার বিধায়ক কংগ্রেসের আবু তাহের খান বলেন, “এই হাসপাতাল নেই রাজ্যে পরিণত হয়েছে। হাসপাতালে নিকাশী ব্যবস্থা বলে কিছুই নেই। বাইরের ড্রেনের সঙ্গে হাসপাতালের ড্রেনের কোনও যোগ নেই। রাত্রিতে আলো জ্বলে না। ৫ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৩ জন। নার্স ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীর সংখ্যাও অনেকটাই কম।” কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনারা কী করছেন? তার জবাবে আবু তাহের খান বলেন, “রোগীকল্যাণ সমিতির তহবিলের টাকা দিয়ে প্রাথমিক ভাবে সাফাইয়ের কাজ শুরু করতে চাই।” নওদার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আব্দুল বারি মোল্লার দাবি, “অনেক পরিষেবাই এখানে পাওয়া যায় না। এক্স রে সব সময় হয় না। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীর অভাবে হাসপাতাল অপরিচ্ছন্ন থাকে।” নওদার বাসিন্দা পারুল বিবি বলেন, “নবমীর দিন আমি মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলাম। কিন্তু ডাক্তার না-থাকায় বহরমপুর যেতে বাধ্য হই।”
নওদা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বোধাদিত্য বক্সী বলেন, “কর্মীর অভাবে আমাদের হাসপাতালে প্রচুর সমস্যা আছে। তবে অন্য পরিষেবার বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে, সমস্যা মিটে যাওয়ার কথা। আমরা দেখছি কত দ্রুত কী করা যায়।” তাঁর কথায়, “প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও কর্মীর অভাবই সমস্যার মূলে। সে কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের বক্তব্য, “কর্মীর সমস্যা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে।” |