এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল নদিয়ার কল্যাণীতে করার জন্য এ বার সওয়াল করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। রবিবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি, রায়গঞ্জে ওই হাসপাতালের একটি ক্যাম্পাস করার কথাও যে রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে, সে কথাও জানান তিনি। গৌতমবাবু জানান, রায়গঞ্জে ওই ক্যাম্পাস করার জন্য খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি অবশ্য বলেন, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত মেনে রায়গঞ্জেই ওই হাসপাতাল হবে। প্রত্যন্ত এলাকায় এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল করার জন্যই জায়গাটি চিহ্নিত করা হয়েছিল।”
গৌতমবাবুর অবশ্য দাবি, “রায়গঞ্জে ওই হাসপাতাল করার ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে জমির সমস্যা রয়েছে। রাজ্য সরকার কৃষক বা অনিচ্ছুকদের কাছ থেকে জোর করে কোনও জমি অধিগ্রহণ করবে না। সে কারণে রাজ্য সরকার চাইছে সময় নষ্ট না-করে কল্যাণীতে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল গড়তে। সেখানে জমি এবং প্রয়োজনীয় অন্য পরিকাঠামো রয়েছে। কল্যাণীতে ওই হাসপাতাল হলে রায়গঞ্জে তার দ্বিতীয় ক্যাম্পাস করতে চায় রাজ্য।” |
রায়গঞ্জে ক্যাম্পাসের জন্য জমি খুঁজতে দলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী।
দীপা অবশ্য বলেন, “জমির বিষয়টি রাজ্য সরকার দেখেন তা জানি। জমি সংক্রান্ত কোনও কাজ হলে তা সংবিধান মেনেই হবে।” বস্তুত কংগ্রেসের তরফে দাবি, রায়গঞ্জের পানিশালায় যেখানে হাসপাতাল গড়ার কথা, সেখানকার জমির মালিকদের একাংশ জায়গা দিতে প্রস্তুত। অথচ রাজ্য সরকার সে ব্যাপারে আদৌ উদ্যোগী নন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকার সময় প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি রায়গঞ্জে এই হাসপাতাল গড়তে উদ্যোগী হন। তাঁর চেষ্টাতেই কেন্দ্র এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়। কংগ্রেসের দাবি, রায়গঞ্জে ওই হাসপাতাল হলে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা বাড়বে দেখেই তৃণমূল বারবার বিরোধিতা করছে।
গৌতমবাবুর যদিও দাবি, রায়গঞ্জে এই হাসপাতালের জন্য জমি ঠিকই হয়নি। অথচ আগামী মার্চের মধ্যে রায়গঞ্জে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ডেকে ওই হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে বলে বিভিন্ন জায়গায় মন্তব্য করেছেন রায়গঞ্জের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “দীপাদেবী, অধীর চৌধুরী এবং মালদহের এক সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পর যে ধরনের কথা বলছেন তা সংবিধান বিরোধী।” তিনি অভিযোগ করেন, তৃণমূল রেলের ভাড়া বাড়ায়নি, এ বার সেই ভাড়া বাড়ানো হবে। গৌতমবাবুর কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সাংসদরা রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়ে যে সমস্ত প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন, সেগুলির একাংশ করা সম্ভব হবে না বলে যে কথা নতুন মন্ত্রীরা বলছেন, তা মেনে নিতে পারছি না। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে যে ট্রেন চালু করা হয়েছে সেগুলির যাত্রাস্থান পরিবর্তনের কথাও শোনা যাচ্ছে। গৌতমবাবু হুঁশিয়ারি দেন, তেমন হলে কালী পুজোর পরেই এর প্রতিবাদে উত্তরবঙ্গ জুড়ে তৃণমূল আন্দোলনে নামবে।
গৌতমবাবুর ক্ষোভ, এইমসকে সামনে রেখে কংগ্রেস রাজনীতি করতে চাইছে। হাসপাতাল গড়ার চেয়ে তৃণমূলের বিরোধিতা করাটাই তাদের মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাতে বাম শক্তিগুলি উৎসাহিত হবে। তিনি বলেন, “বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের আঁতাত আছে।” এই প্রসঙ্গে দীপার প্রতিক্রিয়া, “আমরা কথা কম, কাজ বেশি নীতিতেই বিশ্বাসী। কোনও কাজিয়ায় যেতে চাই না। প্ল্যানিং কমিশনের সিদ্ধান্ত না মেনে কাজ করা, খেয়াল খুশি মতো উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য ঠিক করা, জেলা পরিষদের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার মতো অসাংবিধানিক কাজ গৌতমবাবুরাই করছেন।” |