তিন বান্ধবীর সাহায্যে বিয়ে রুখল নাবালিকা
বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে কনে নিজেই জানিয়েছিল, সে বিয়ে করতে চায় না। তার তিন বান্ধবী তখন স্থির করে, এই বিয়ে ভেঙে দিতে হবে।
মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এলাকা সুতির রঘুনাথপুরের রেশমা খাতুন নামে ওই কিশোরী অবশ্য জানত, কাজটি সহজ নয়। নিজের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে সে-ই প্রথম তার বান্ধবীদের বলে, এখনই বিয়ে করতে চায় না। কিন্তু বাবা-মা সে কথা শুনবেন না। তাই বাধ্য হয়েই তাকে বিয়েতে রাজি হতে হয়েছে। তবে তখনই তার তিন বান্ধবী রিম্পা খাতুন, সাহানারা খাতুন এবং তাজমিরা খাতুন তাকে কথা দিয়েছিল, সে একা নয়, তারাও পাশে থাকবে। অরঙ্গাবাদ বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ওই তিন ছাত্রী তারপরে দল বেঁধে যায় রেশমার বাড়িতে। ওই বাড়িতে এমনিতে তাদের অবারিত দ্বার। কিন্তু রেশমার বিয়ে বন্ধের আর্জি শুনে তাদের মুখের উপরেই প্রথমে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন ওই কিশোরীর মা আমিনা বিবি। তাজমিরা বলে, “রেশমার মা আমিনা চাচি প্রথমে আমাদের উপরে খুব রেগে যান। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেও বলেছিলেন। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি।”
চার সহপাঠী মিলে এরপর সিদ্ধান্ত নেয়, বারবার একই কথা বলে যেতে হবে। রেশমার তিন বান্ধবী নিত্য দিন
রেশমা খাতুন।
—নিজস্ব চিত্র।
তাদের বাড়িতে হাজির হত সকাল বিকেল। ছোটবেলা থেকে এক সঙ্গে বড় হয়েছে তারা। মেয়ের বন্ধুরাও মেয়েরই মতো। তাই বারবার তাদের মুখে একই কথা শুনে শেষ পর্যন্ত আমিনা বিবি নরমও হন। বিয়ে ভেঙে দেন। তাঁর কথায়, “মেয়ে প্রথম থেকেই নারাজ ছিল। কিন্তু আমি আমল দিচ্ছিলাম না, কারণ এমন ভাল সম্বন্ধ বারবার আসে না। কিন্তু ওর তিন বন্ধু যখন বারবার এসে বোঝাতে লাগল, রেশমার জীবনটাই বরবাদ হয়ে যাবে, ও আরও পড়তে চায়, তখন রাজি হয়ে গেলাম।”
আমিনা বিবিই বিড়ি বেঁধে তাঁদের সংসার চালান। তাঁর দুই মেয়ে। রেশমা বড়। স্বামী ঝাইটন শেখ খুবই অসুস্থ। আমিনা বলেন, “আমারও খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল। তাই অল্প বয়সে বিয়ের খারাপ দিকগুলো ভালই জানি। মেয়ে আরও পড়ুক। ও সাবালিকা হলে তবেই বিয়ের কথা ভাবব।” পঞ্চায়েত প্রধান কংগ্রেসের আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, রেশমার পড়াশোনার দায়িত্ব তাঁরাই বহন করবেন।
মুর্শিদাবাদে ২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১২ জুন পর্যন্ত অন্তত ৯ জন নাবালিকার বিয়ে রোখা সম্ভব হয়েছে। তবে ডোমকলের শিবনগর গ্রামের আসফা খাতুন, ওই গ্রামেরই পূর্ণিমা খাতুন, হাবাসপুর মাঠপাড়ার খালিদা খাতুন, বাগলপাড়ার আলেয়া খাতুন, রেজিনগরের রাজনেহার খাতুন, কালীগঞ্জের রিঙ্কু হালদার, গোয়ালজান নিয়াল্লিশপাড়ার বীথিকা দাস, কান্দির রাজনিহার খাতুন বা সুতিরই টুম্পা খাতুনের বিয়ে রোখার ক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল হয় প্রশাসন বা গ্রামের কোনও পরিবার অথবা কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। রেশমার বিয়ে রোখার কৃতিত্ব কিন্তু প্রধানত তাদের তিন সহপাঠীরই। সাহানারার কথায়, “রেশমার পরিবার তার বিয়ে ভেঙে দেওয়ায় সারা গ্রামেই নাবালিকা মেয়েদের বিয়ের কথা
এখন অন্তত আর উঠবে না।” আর এক বন্ধু রিম্পা বলে, “আমরা জানতাম যে, এত কথার পরেও রেশমার বিয়ে হয়ে গেলে, আমাদের প্রতিবাদ গুরুত্বহীন হয়ে যেত। তাই প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলাম রেশমার মা’কে বোঝাতে। তিনি রেশমার বিয়ে ভেঙে দেওয়ায় সারা এলাকারই লাভ হল।”
বিড়ি শ্রমিকদের গ্রাম রঘুনাথপুরের অধিকাংশ বাড়িতেই বিদ্যুৎ আসেনি। কাছাকাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত নেই। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। তিন কিলোমিটার দূরের অরঙ্গাবাদে স্কুলে যেতে হয় সাইকেলে বা হেঁটে। রেশমার কথায়, “যত দূর যেতে হয় যাব, নিজের পায়ে দাঁড়াই, তারপরে বিয়ে করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.