বেড়াতে এসে বৃষ্টি ভেজা বহরমপুরে আটকে পড়েছেন পর্যটকেরা। শনিবার গভীর রাত থেকে শুরু হওয়া কখনও মুষল ধারায়, কখনও ঝিরঝিরে বৃষ্টির কোপে পড়ে রবিবার প্রায় ঘরবন্দি কাটাতে হয়েছে তাঁদের।
এখন ছেলেমেয়ের স্কুলে ছুটি থাকায় দু’তিন দিনের ছুটিতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুর্শিদাবাদে বেড়াতে এসেছেন বহু পর্যটক। কেউ বহরমপুরে, কেই লালবাগের হোটেলে উঠেছেন। কিন্তু এদিনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মাটি হয়ে গিয়েছে বেড়ানো। কলকাতার দমদমের বাসিন্দা অভিষেক মুখোপাধ্যায় বলেন, “শনিবার সকালে ৬ জনের দল এসে লালবাগের হোটেলে উঠেছি। তার পরে সারা দিন ঘুরে বেড়িয়েছি। এদিন সকালে বেশ কিছু জায়গা ঘুরে দেখব ভেবেছিলাম। কিন্তু তা আর হলো কই! বৃষ্টির কারণে এখানে এসে ঘরেই কাটাতে হচ্ছে।”
এদিন সকালের দিকে বহরমপুর থেকে গাড়ি নিয়ে লালবাগ বেড়াতে গেলেও বৃষ্টির কারণে সব জায়গা ঘুরে দেখা হয়নি এমন পর্যটকের সংখ্যাও কম নয়। হাজারদুয়ারি দেখেই তাড়াহুড়ো করে হোটেলে ফিরে আসতে হয়েছে।
অনেক হোটেলের কর্তৃপক্ষ অবশ্য চেয়েছিলেন, ঘরবন্দি আবাসিকদের পছন্দের খাবার খাইয়ে অন্তত কিছুটা মন ভাল করতে। একটি হোটেলের মালিক চন্দন সরকার বলেন, “পুজোর সময় থেকেই মুরগি ও খাসির মাংস খাওয়া চলছে। এদিনের বৃষ্টি আবহাওয়ায় বেশ কয়েক জন আবাসিক শুক্তো, পোস্ত বড়া, আলু-পোস্ত এবং মাছের পাতলা ঝোল খাওয়াতে বলেন। আমরা তাই রান্না করেছি।”
কোনও কোনও হোটেলে মেনুতে ছিল ইলিশের রকমারি পদ। সরষে ইলিশ, কালো জিরে দেওয়া ইলিশ, ভাপা ইলিশ। এক হোটেল মালিক শ্রীমন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ইলিশের এমন সব পদই পর্যটকেরা বাড়িতেও খান। কিন্তু ঘটনা হল, আমরা এখানে পদ্মার যে ইলিশ পাতে দিতে পারি, তার স্বাদই আলাদা। গঙ্গার ইলিশ ও পদ্মার ইলিশ দুই-ই এই জেলায় পাওয়া যায়। এই জেলার মানুষ তাই জানেন, কোন ইলিশ কেমন ভাবে রাঁধতে হয়। ঘরবন্দি পর্যটকদের মন ভাল করতে এর থেকে ভাল ব্যবস্থা আর কিছু হতে পারে না। আশা করছি, এই পর্যটকেরা মুর্শিদাবাদের এই আতিথেয়তার টানে ফের আসবেন।” লালবাগের একটি হোটেলের মালিক আশিস রক্ষিত বলেন, “আমরাও খাবারের মেনুতে বৈচিত্র এনেছি। তাতে অন্তত পর্যটকদের দুপুরটা ভাল কেটেছে।” কোথাও সাধারণ রান্নার মধ্যেই বাড়তি কিছু করার চেষ্টা হয়েছে। টাটকা মাছ আর শাকসব্জির সেই খাবার দিয়ে পর্যটকদের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ।
এদিন সকাল থেকেই রাস্তায় ভিড় ছিল না বললেই চলে। বেসরকারি বাসও পথে নেমেছে কম। সন্ধ্যার পর থেকে হাতেগোনা কয়েকটি বাস চলেছে। সকালের দিকে বেশ কয়েকটি বাস চললেও তাতে যাত্রী সংখ্যা ছিল না বললেই চলে। ফলে দুপুরের পর থেকে অধিকাংশ রুটের বাস বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে কার্যত পথে বাস নামেনি বললেই চলে। বাস মালিক সংগঠনের পক্ষে রথীন মণ্ডল বলেন, “এদিন বৃষ্টিতে বাসে যাত্রী ছিল না। বাধ্য হয়েই জেলার বিভিন্ন রুটের বাস বন্ধ হয়ে যায়।” অন্য দিনের তুলনায় অটো ও ট্রেকারও কম চলাচল করেছে। এমনিতেই রাস্তার কারণে বহরমপুর-নিমতলা রুটে অটো চলে কম। এদিন বৃষ্টিতে সেই সংখ্যা আরও কমেছে।
সেই সঙ্গে জল-কাদায় মাখামাখি বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বহরমপুরের মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোডের বেহাল দশায় ১০ মিনিটের পথ পার হতে ঘন্টা খানেকেরও বেশি সময় লেগেছে। রাস্তা খারাপের কারণে বহরমপুর-নিমতলা রুটে হাতে গোনা কয়েকটি অটো চলছে। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পঞ্চাননতলা হয়ে চুঁয়াপুর মোড় পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে পিচ বলে আর কিছু নেই। পিচের চাদর উঠে গিয়ে ওই রাস্তায় বড় বড় খানা-খন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা ইটের টুকরো ফেলে গর্ত বোজানোর চেষ্টায় রাস্তার আরও ভয়াবহ চেহারা হয়েছে। যে কোনও সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে নিত্যযাত্রীদের আশঙ্কা। এই অবস্থায় বৃষ্টিতে ওই খানা-খন্দে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় রাস্তা ছোট-খাটো পুকুর হয়ে গিয়েছে। রাস্তা দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে যান চলাচল করতে না পারার কারণে জটে আটকা পড়ছে যান।
এদিনের বৃষ্টি মাথায় বহরমপুর স্টেডিয়াম চত্বরে বায়ুসেনার নিয়োগের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কাকভেজা হয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা চাকরিপ্রার্থীরা। সব মিলিয়ে এদিনের বৃষ্টি এক ঝটকায় কমিয়ে দিয়েছে দিনের তাপমাত্রা, যা শীতের আগমনী গান শোনায়। |