|
|
|
|
ব্যাটিং-ব্যর্থতায় ম্যাচ ডিগবাজি খেয়ে ‘থ্রিলার’ |
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
নেহাত নিস্তরঙ্গ স্ক্রিপ্টেও যে এমন নাটকীয় মোচড় লুকিয়ে বসে, কে জানত!
দুপুর আড়াইটের ক্লাবহাউস। জনা পঁচিশেক ময়দানি কর্তা এ-দিক ও-দিক ছড়িয়ে। খোশগল্প চলছে। রবিবাসরীয় আড্ডার মেজাজ। চ্যাম্পিয়নদের চুপ করিয়ে বাংলা মন্দ এগোচ্ছে না। স্কোরবোর্ডে আশি উঠেছে, গিয়েছে একটা উইকেট, তবে আসল ব্যাটিংটাই বাকি। পাঁচ পয়েন্ট না হোক, পকেটে তিন তো ঢুকছে। কিন্তু পরের এক ঘণ্টায় চোখের সামনে তো শুধু হিচককের ‘থ্রিলার’। পুরো ‘কহানি মে টুইস্ট’!
মাঝে কুড়িটা রান জমার খাতায়। আর খরচ? চার-চারটে উইকেট! ৮০-১ থেকে বাংলা এক ঝটকায় ১০০-৫! পঙ্কজ সিংহের ‘আউটগোয়িং’ ডেলিভারি মনোজের ব্যাটে চুমু খেয়ে জমা কিপারের গ্লাভসে। জয়জিৎ, ঋতম পোড়েল শুধু ‘সম্ভাবনা’ হিসেবেই থেকে গেলেন। দলীপ কাঁপানো অনুষ্টুপ মজুমদারও পারলেন না। এবং উপরের স্কোরবোর্ড যদি ১০৯-৫-এর বদলে ১০৯-৬ দেখাত, কারও কিছু বলার থাকত না। লক্ষ্মীরতন শুক্ল কিন্তু টিকে আছেন স্রেফ কপালজোরে। |
|
জাতীয় নির্বাচকেরা কি মুখ তুলে চাইবেন? ইডেনে
সাবা করিমের সঙ্গে মনোজ। ছবি: উৎপল সরকার |
সোজা কথায়, রবিবারের ইডেনে রাজপুত যোদ্ধারা ম্যাচের আগল খুলে দিলেন। আপাতত বাংলার ‘লিড’ ২০৬। সামনে তিনটে সম্ভাবনা। এক, বাংলা লিডের অঙ্ক এমন জায়গায় নিয়ে গেল যে, সরাসরি জয়ের ঝুঁকির রাস্তায় গেল না রাজস্থান। তখন বাংলার তিন পয়েন্ট, কানিতকররা পাবেন এক। দুই, বাংলাকে তাড়াতাড়ি সাফ করে জয়ের জন্য ঝাঁপাল রাজস্থান। তুলল ছ’পয়েন্ট। তিন, বঙ্গ-ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতা ফের ঢেকে দিলেন পেসাররা। বাংলা ম্যাচটা জিতল, পুরো পয়েন্টও এল।
সন্ধের নিঝুম ইডেন ছেড়ে বেরনোর সময় ঋদ্ধিমান সাহা আসল কথাটা বলে গেলেন। “লক্ষ্মীর সঙ্গে আমার পার্টনারশিপের ওপরেই দাঁড়িয়ে সব কিছু। কাল যতটা সম্ভব টানতে হবে। অন্তত তিনশো না হলে...।”
আশঙ্কাটা ঠিক। তিনশো না হলে কপালে দুর্ভোগ আছে। সম্ভাবনা তিনকে বিশেষ কেউ পাত্তা দিচ্ছেন না। বরং বাংলা ‘থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের’ কেউ কেউ জানাচ্ছেন, মহানাটকীয় কাণ্ডকারখানার আশা না করে সোমবারের প্রথম ঘন্টাটা উতরে দেওয়া দরকার। তাতে তিন পয়েন্ট অন্তত নিশ্চিত হবে। কিন্তু সাত-তাড়াতাড়ি বাকি ব্যাটিং ‘পপাত ধরণীতল’ মানে, অ্যাডভান্টেজ রাজস্থান। ৬০ ওভারে ২৪০ চাই, অঙ্কটা এমন দাঁড়ালে ক’জন বুক ঠুকে বাংলার হয়ে বাজি ধরবেন? উইকেটও তখন তত পেসার-বন্ধু থাকবে না।
রঞ্জির প্রেক্ষিতে তো বটেই, সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটেও দিনটা বাংলার বিশেষ সুবিধার গেল না। মনোজদের রঞ্জির শুরুটা কেমন হয় ছাড়াও চলতি ম্যাচে আরও একটা প্রশ্ন ছিল, পূর্বাঞ্চল নির্বাচক সাবা করিমের সামনে মনোজ-দিন্দা কেমন করেন? সোমবারই তো ইংল্যান্ড সিরিজের দল নির্বাচন। চা-বিরতিতে মনোজের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা চলল সাবার। তখনও মনোজ আউট হননি। দু’ইনিংসে বাংলা অধিনায়কের রান ৪২ ও ৬। আর দিন্দা? ১৬ ওভারে ৪২ রান দিয়ে কোনও উইকেট নেই। ভাল বিজ্ঞাপন কি?
বাংলা নির্বাচক কমিটিরও এ বার একজনকে নিয়ে সংশোধনী বিল পাস করা উচিত। তিনি সৌরভ সরকার। ‘ভাল খেলিয়াও টিমে ব্রাত্য’ লাইনটা যাঁর ক্রিকেটজীবনে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনও আগের রাতে জানতে পারেন খেলতে হবে। কখনও চার-পাঁচটা করে উইকেট তুলেও শোনেন, তিনি ‘ফোর্থ সিমার’! “পুরো মরসুম নিয়ে আর ভাবি না। ম্যাচ পিছু ভাবি এখন,” বলছিলেন সৌরভ। এ দিন বোলার লক্ষ্মী যথারীতি কৃপণ ছিলেন, ইরেশ সাক্সেনার বাঁ-হাতি স্পিনও দু’টো উইকেট দিল, কিন্তু রাজপুত-বধের কাজটা হল ‘অন্য’ সৌরভের হাত ধরে। যাঁর ময়দানি নাম আবার ‘দাদি’!
পারফরম্যান্স রবিবারও যথেষ্ট ভাল। সব মিলিয়ে ২০-৪-৬২-৪। ইডেনে ওই ঘণ্টা-দুয়েকের ‘সরকার-রাজ’ ছাড়া আজ আর ছিলও বা কী বাংলার?
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা: ২৫৮ ও ১০৯-৫ (জয়জিৎ ৪৮, ঋতম ৩৭, পঙ্কজ-৩-১৫)
রাজস্থান: ১৬১ (ক্ষত্রি ৪৯, সৌরভ ৪-৬২, লক্ষ্মী ৩-২১) |
|
|
|
|
|
|