আঠেরো মাসে বছরের হিসেবও হার মানল!
যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১০ সালের মাঝামাঝি, তা হল না ২০১২-তেও। কবে শেষ হবে, তারও নিশ্চয়তা নেই।
‘ন্যাশনাল গঙ্গা রিভার বেসিন অথোরিটি’ (এনজিআরবিএ) গঙ্গা এবং হাওড়া শহরের দূষণ রুখতে তিনটি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো ও উন্নয়নের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল ২০০৯ সালে। সময়সীমা দিয়েছিল দেড় বছর। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও দেখা যাচ্ছে, সে সব কাজের কোনওটায় কার্যত হাত পড়েনি। কোনওটা আবার শুরু হলেও থমকে গিয়েছে মাঝপথে। আর এর কারণ হিসাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে দায় চাপাচ্ছে হাওড়া পুরসভা ও কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)।
হাওড়া পুরসভা এলাকায় মোট তিনটি শ্মশান রয়েছে। একটি সালকিয়ার বাঁধাঘাটে। অন্য দু’টি রয়েছে মধ্য হাওড়ার বাঁশতলা ঘাট ও শিবপুর এলাকায়। এর মধ্যে বাঁশতলা শ্মশান ঘাটের অবস্থান গঙ্গা থেকে আধ কিলোমিটার দূরে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এবং শিবপুর শ্মশানটি গঙ্গার পাশেই। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, শিবপুর শ্মশানে একটি বৈদ্যুতিক চুল্লি থাকলেও মৃতদেহের অতিরিক্ত চাপের জন্য প্রায়ই অকেজো হয় পড়ে সেটি। ফলে তখন কাঠে দাহ করা ছাড়া উপায় থাকে না। এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় সিংহ বলেন, “অনেক সময়ে শবদাহের জন্য প্রয়োজন মতো কাঠ কেনার সামর্থ না থাকায় অনেক গরিব মানুষের দেহ আধপোড়া অবস্থাতেই গঙ্গায় ফেলে দেওয়া হয়। সেই মৃতদেহের উপরে চিল, শকুন বসে থাকে।”
অন্য দিকে, বাঁশতলা শ্মশানঘাটে এখনও কোনও বৈদ্যুতিক চুল্লি না থাকায় কাঠেই মৃতদেহ দাহ করা হয়। সেই সময়ে পোড়া কাঠ থেকে বেরোনো কার্বন ডাই-অক্সাইডে ভরে যায় গোটা এলাকা। অথচ এই শ্মশানের পাশেই রয়েছে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এবং ঘনবসতি। এলাকার বাসিন্দা দীনবন্ধু রায় বলেন, “শবদাহের সময়ে গোটা এলাকা কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়। তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময়ে আধপোড়া দেহের অংশ বাড়িতে নিয়ে এসে ফেলে কুকুর, শকুন।”
এই শ্মশানগুলিতে এখনও কাঠে মৃতদেহ পোড়ানোর ব্যবস্থা থাকায় শবদাহের পরে পোড়া কাঠ নিয়ে গিয়ে ফেলা হয় গঙ্গায়। ফলে দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। বছর তিনেক আগে ওই তিনটি শ্মশানের উন্নতি ও বৈদ্যুতিক চুল্লির জন্য এনজিআরবিএ একটি প্রকল্প তৈরি করে অর্থ বরাদ্দ করে। ঠিক হয় ওই টাকায় সালকিয়ার বাঁধাঘাট শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লির পাশাপাশি একটি দূষণ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসানো হবে। মেরামতি হবে বৈদ্যুতিক চুল্লিটিও। পাশাপাশি, শিবপুর ও বাঁশতলা ঘাটে আরও দু’টি বৈদ্যুতিক চুল্লি ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের ইউনিট বসানো হবে। কাজের দায়িত্ব পায় কেএমডিএ। কাজ দেখভালের ভার দেওয়া হয় হাওড়া পুরসভাকে।
কিন্তু বাস্তব চিত্রটা হল, শিবপুর শ্মশানঘাটে নতুন চুল্লির জন্য আজও একটি ইঁট পড়েনি। ফলে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যন্ত্রও বসানো যায়নি। বাঁশতলা শ্মশানঘাটে বাড়ি তৈরি হলেও চুল্লি বসেনি। কবে বসবে, তারও ঠিক নেই। তবে একমাত্র বাঁধাঘাটের বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ শেষ হয়েছে এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রও বসেছে।
বাঁশতলা ঘাট ও শিবপুর ঘাটে কাজ শেষ হল না কেন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেএমডিএ-র এক আধিকারিক বলেন, “টেন্ডার ডেকেও কারও সাড়া না পাওয়ায় বাঁশতলা ঘাটে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো যায়নি। নতুন করে টেন্ডার ডাকা হচ্ছে। অন্য দিকে, হাওড়া পুরসভা বৈদ্যুতিক চুল্লির জায়গা না দেওয়ায় শিবপুরেও কাজ শুরু করা যায়নি। এখন জায়গা পেয়েছি। কাজ শুরু হবে। দেরির জন্য হাওড়া পুরসভা দায়ী।” হাওড়া পুরসভার চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবপ্রসাদ দত্ত অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “এই অভিযোগ ঠিক নয়। ওই কাজের ভার পেয়েছিল কেএমডিএ। ওদের গড়িমসির জন্যই কাজে দেরি হয়েছে। আমাদের কিছু করার নেই।” |