গঙ্গা-গোমতী-ব্রহ্মপুত্রকে মেলালেন সুনীল
শারীরিক ভাবে তিনি ছিলেন না। কিন্তু তাঁরই টানে এক ধারায় মিশে গেল গঙ্গা, গোমতী, ব্রহ্মপুত্র আর বরাক। গুয়াহাটির আইটিএ প্রাগজ্যোতি প্রেক্ষাগৃহে, অসম সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক, কলকাতার পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলর্স গিল্ড, ব্যতিক্রম সাংস্কৃতিক মঞ্চ শ্রদ্ধায়, আবেগে যৌথভাবে স্মরণ করল সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সুনীলকে নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য, অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য, কৃত্তিবাসের প্রাক্তনী সমরজিৎ সিংহ, কবি প্রবুদ্ধসুন্দর কর, এরশাদ আলি, শিক্ষাবিদ রঞ্জিতদেব গোস্বামী, কটন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান মিতা চক্রবর্তী।
অসমে বেশ কয়েকবার এসেছিলেন সুনীল। মুগ্ধ হয়েছিলেন মানস অরণ্য দেখে। মিতাদেবী বলেন, “ওঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, এত যে কবিতা লেখেন, প্রতিবার প্রথম লাইনটা কোথা থেকে পান বলুন তো? আকাশপানে চেয়ে সুনীলের উত্তর ছিল, ‘কবিতার প্রথম লাইনগুলো আকাশ থেকে পড়ে’। তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এমন একটা সময় ছিল, যখন নীরার শরীর খারাপ হলে আমাদের সকলের মন খারাপ হত। এইবার তো নীরা, সন্তু-কাকাবাবু সবাই শেষ। কৈশোরের ফ্যান্টাসি, যৌবনের রোম্যান্টিসিজমকে হত্যা করে চলে গেলেন সুনীল। এইবার যে আর ২৭ থেকে ৩৩ বছর বছর বয়সে নিজেকে আটকে রাখা যাবে না। আমরা যে যাঁকে ভালবাসতাম ভাবতাম তাঁরই নাম নীরা। ইচ্ছামতো শব্দকে নিয়ে খেলা করেছেন সুনীল। অন্যদের ক্ষেত্রে যা ব্যকরণভঙ্গ, সেই সবকিছু, অবলীলায় সুনীলকে মানিয়ে যেত। তিনি সাহিত্যকে শাসন করতেন।”
মঞ্চে তিনি ছিলেন, তবে ছবিতে। ছবি: রাজীবাক্ষ রক্ষিত
পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে বেড়ানো তরুণ সমরজিৎ সিংহকে কৃত্তিবাসের দফতর সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন সুনীল। সমরজিৎ বলেন, “যে ঘরে আমায় থাকতে দিলেন, সেই ঘরে প্রতি রাতে রাত ১১টায় দল বেঁধে আসতেন সুনীল, স্বাতী, শমিত ভঞ্জ, রঞ্জা ভঞ্জ, সন্দীপন, পার্থ মুখোপাধ্যায়, বেলাল চৌধরীরা। দেদার গল্প-আড্ডার ফাঁকে দেখলাম মানুষটা একেবারে অন্যরকম। একবার, গাড়িতে আমায় আর যুগব্রত চক্রবর্তীকে তুলে ঘুরতে বেরোলেন। তারপর, লেখা না আসার যন্ত্রণায় গাড়িতে হাউমাউ করে সে কী কান্না!” রঞ্জিত কুমার দেব গোস্বামী বলেন, “কেবল সাহিত্যিক নয়, গবেষক হিসাবেও সুনীলের অবদান অসীম।”ত্রিপুরার কবি প্রবুদ্ধবাবুর কথায়, “আমার শৈশবের অকাল পক্বতার সব দায় সুনীলের।”
নবজাগরণের পুরধাদের নিয়ে সুনীল ‘মন্দ কথা’ লেখায় ক্ষোভ হয়েছিল ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সুযোগ বুঝে বলে ফেললাম কথাটা। তিনি বলেন, খারাপ-ভাল নিয়েই মানুষ। বর্ণনার মধ্যে মানুষের সব বর্ণ না লিখলে মানুষ তো দেবতা হয়ে যাবে।” ৫ নভেম্বর ভূপেন হাজারিকার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। বন্ধুকে নিয়ে ক’দিন আগে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফোনে অনুভূতি জানিয়েছিলেন তিনি। আজ একই মঞ্চে, ভূপেন ও সুনীলের স্মরণসভা। ত্রিদিববাবুর স্মৃতিতে ঘুরে আসে উত্তর-পূর্ব গ্রন্থমেলা উপলক্ষে গুয়াহাটিতে আসা সুনীলের সঙ্গে রাতভর ভূপেন হাজরিকার গানের আসর। “পরপর অসমিয়া গান গাইছেন ভূপেনবাবু, সুনীলদা গাইছেন তার বাংলা সংস্করণটি।”
ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য, বলেন, “উত্তর-পূর্বের কবি হাসান রাজাকে নিয়ে কবিতায় সুনীল লিখেছিলেন, ‘এখানে এখন শুধু মুখোমুখি বসে রব আমি আর হাসন রাজা।’ উপরের কোনও আসরে, হয়তো এখন দুই বোহেমিয়ান কবি একে অন্যের সামনে বসে বুঁদ হয়ে বসে রয়েছেন ছন্দের আড্ডায়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.