|
|
|
|
রামলীলা ময়দানে অভিষেক, নেতৃত্ব হাতে নিলেন রাহুল |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
রামলীলা ময়দান আজ সাক্ষী হয়ে রইল রাহুল-লীলার।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছিল, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সমর্থনে কংগ্রেসের জনসভা। লাখো লোকের সেই সমাবেশই কার্যত রাহুল গাঁধীর অভিষেক অনুষ্ঠানে পরিণত হল। তিনি দলের কার্যকরী সভাপতি হবেন না সেক্রেটারি জেনারেল, সেই প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়ে রাহুলকে দলের প্রথম সারিতে নিয়ে এল কংগ্রেস।
তিনিই যে কংগ্রেসের অঘোষিত ‘নম্বর টু’, তা কারও অজানা ছিল না। কিন্তু গোটা দেশ থেকে জড়ো হওয়া কংগ্রেসের ছোট-বড় নেতারা এই প্রথম দেখলেন, রামলীলা ময়দানের মূল মঞ্চে সনিয়া গাঁধী, মনমোহন সিংহের পাশে প্রথম সারিতে একমাত্র রাহুল। তিনিই প্রথম বক্তা। তাঁর বেঁধে দেওয়া সুরেই প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস সভানেত্রী আর্থিক সংস্কারের পক্ষে সওয়াল, বিরোধীদের আক্রমণ করলেন।
আজ রাহুল বোঝালেন, তিনি এ বার ‘বড় দায়িত্ব’ নিতে তৈরি। ‘দিল কি বাত’ বলতে উঠে জানালেন, তিনি বোঝেন, দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল সমস্যাটা কোথায়। কংগ্রেস দলটাকেও ভাল ভাবেই জানেন। সেই অনুযায়ী এগোতে চান। |
|
রামলীলা ময়দানে মুখোশের আড়ালে রাহুল-সমর্থক। ছবি: পিটিআই |
সনিয়া তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব এটাই চাইছিলেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, কংগ্রেসের ঘরোয়া বৈঠক নয়, দলের সমাবেশেই রাহুল সামনের সারিতে আসুন। আজ সে জন্যই দেশের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য থেকে শুরু করে জেলা, ব্লক স্তরের নেতাদেরও রামলীলা ময়দানে ডাকা হয়েছিল। মনমোহনের মন্ত্রিসভা থেকে গোটা এআইসিসি-ই হাজির ছিল রামলীলায়। কিন্তু পাদপ্রদীপের আলো যাতে শুধু রাহুলের মুখেই পড়ে, তার জন্য শীলা দীক্ষিত, আহমেদ পটেল, মতিলাল ভোরার মতো হাতে গোনা ক’জন বাদ দিলে কেউই মূল মঞ্চে জায়গা পাননি। বক্তৃতা দেওয়া তো দূর।
রাহুলও আজ সেই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে চেয়েছেন। বিরোধীদের আক্রমণ থেকে শুরু করে সংস্কারের পক্ষে সওয়াল, সবেতেই নেতৃত্ব দিয়েছেন রাহুল। প্রধানমন্ত্রী বা সনিয়ার থেকে অনেক বেশি সময় নিয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি। ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’-এর মতো খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে অপপ্রচারের জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছেন। বিরোধীদের নেতিবাচক রাজনীতির সমালোচনা করেছেন। আবার সরকার যে দুর্নীতি রুখতে লোকপাল বিল পাশ করাতে বদ্ধপরিকর, তাও ঘোষণা করেছেন। আম-আদমি কেন সহজে রাজনীতিতে আসতে পারে না, রাগত স্বরে সে কথা বলে প্রতিকারের প্রতিশ্রুতিও দেন।
রাহুল আজ বারবারই পৌঁছতে চেয়েছেন তরুণ প্রজন্মের কাছে। তাঁর কুড়ি মিনিটের বক্তৃতায় বারেবারেই ঘুরে ফিরে এসেছে ‘যুবা’-র কথা। রাহুল যুক্তি দিয়েছেন, তরুণ প্রজন্ম বিদেশি লগ্নির পক্ষে। তাঁরা আর্থিক বৃদ্ধির পক্ষে। কারণ এতে কর্মসংস্থান হবে। কৃষকদেরও ক্ষতির বদলে লাভ হবে। সবুজ বিপ্লব, রাজীব গাঁধীর আমলে কম্পিউটার চালু থেকে শুরু করে মনমোহনের উদারীকরণের উদাহরণ টেনেছেন। আবার রাজনীতিতেও তরুণদের তুলে আনার কথা বলতে গিয়ে যুক্তি দিয়েছেন, “যত ক্ষণ না তরুণরা রাজনীতিতে আসবে, দেশে পরিবর্তন আসবে না।”
আজকের পরে কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, রাহুল এখন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। তিনি এখন গুরুদায়িত্ব নিতে পিছপা নন। মন্ত্রিসভার রদবদলে তাঁর ইচ্ছে মতোই তরুণ তুর্কিরা বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছেন। এ বার সাংগঠনিক রদবদলেও দলে রাহুলের প্রতিনিধিত্ব বাড়তে চলেছে।
আগামী সপ্তাহে সুরজকুণ্ডে কংগ্রেসের বৈঠক। সেখানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ইস্তাহার রূপায়ণ নিয়ে আলোচনা হবে। রাহুল শিবিরের খবর, সুরজকুণ্ডের বৈঠকে খাদ্য সুরক্ষা আইনের মতো সামাজিক প্রকল্পের প্রয়োজনের কথাও বলবেন রাহুল। বোঝাতে চাইবেন, তিনি কংগ্রেসের ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’-র সদস্য হলেও রাজনীতিতে বা সংগঠনে আম-জনতারই প্রতিনিধি। |
|
|
|
|
|