|
|
|
|
ভোট-যুদ্ধের প্রস্তুতি কংগ্রেসে |
হাতিয়ার তিন: সংস্কার-তারুণ্য-আক্রমণ |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
ঘুরে দাঁড়াতে তিন বার্তা।
সনিয়া গাঁধীর সাফ কথা, “মুখ লুকোনোর কিছু নেই। বরং আক্রমণাত্মক মেজাজে জবাব দিন দুর্নীতিতে ডুবে থাকা বিরোধীদের যাবতীয় ষড়যন্ত্রের। কারণ, আম-আদমির স্বার্থে বৈপ্লবিক পদক্ষেপ করে চলেছে ইউপিএ সরকার।
প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা দিলেন, আম-আদমির জন্যই আর্থিক সংস্কার কতটা জরুরি।
রাহুল গাঁধী তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানার চেষ্টা করলেন বিজেপি-র নেতিবাচক রাজনীতির বিরুদ্ধে ইতিবাচক রাজনীতির ‘মন্ত্র’ দিয়ে। সংগঠনে নবীনদের স্থান দিয়ে দলকে আরও সঙ্ঘবদ্ধ করার বার্তা দিয়ে।
আর এ ভাবেই রামলীলা ময়দানে দলের সমাবেশকে আজ লোকসভা ভোটের প্রস্তুতির কর্মশালায় পরিণত করলেন কংগ্রেসের তিন শীর্ষ মুখ।
দুর্নীতির অভিযোগ আর জ্বালানির দাম বাড়ানো নিয়ে অসন্তোষের আঁচ এই দু’টিকে পুঁজি করেই বিরোধীরা এখন কংগ্রেস-বিরোধিতাকে মজবুত ভিতে দাঁড় করাতে তৎপর। এর মোকাবিলায় দলকে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে পাল্টা আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। |
|
কানে-কানে: দায়িত্ব বাড়ল রাহুলের। রামলীলার সভায় মায়ের সঙ্গে আলোচনা। ছবি: পি টি আই |
ময়দানে লক্ষাধিক কংগ্রেস নেতা-কর্মীর সমাবেশে সনিয়া এ দিন ছিলেন যথেষ্টই আক্রমণের মেজাজে। তিনি বলেন “দলের মন পরিষ্কার, ভাবমূর্তি স্বচ্ছ, উদ্দেশ্যও স্পষ্ট। মনপ্রাণ দিয়ে গরিব, দলিত,আদিবাসী, মহিলা ও পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য কাজ করছে সরকার। তাই দৃঢ় আত্মবিশাস নিয়ে বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে নেমে পড়ুন কংগ্রেসিরা।” দলের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে সমাবেশের মঞ্চ থেকে পাল্টা প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন কংগ্রেস সভানেত্রী, “যারা সরকারের নিন্দা করছে, তাঁদের স্রেফ একটাই প্রশ্ন করতে চাই। আপনারা কেউ এমন সরকার কোনও দিনও চালিয়েছেন? যে সরকার এত অল্প সময়ে শহর ও গ্রামে আর্থিক ও সামাজিক পরিবর্তনের জন্য বৈপ্লবিক পদক্ষেপ করেছে?”
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ও খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির মতো সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতেই গোড়ায় রামলীলা ময়দানে সভা করার কথা ভেবেছিল কংগ্রেস। সেই অনুযায়ীই এ দিন সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করার দায়িত্ব নেন মনমোহন। কিন্তু সেই সংস্কারের ধাক্কাতেই শরিক তৃণমূলের সঙ্গে বিচ্ছেদের ফলে সরকার এখন সংখ্যালঘু। তাই সংস্কারের পক্ষে অর্থনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রীর সওয়ালই যে যথেষ্ট হবে না সেটা স্পষ্ট ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে। যে কারণে দলকে নিজেদের সাফল্যে উজ্জীবিত হওয়ার মন্ত্র দেওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতির প্রশ্নে বিজেপি-কে চাঁচাছোলা আক্রমণ করেন কংগ্রেস সভানেত্রী। সনিয়া বলেন, “কংগ্রেস যে এখনও ক্ষমতায় রয়েছে, সেটাই অনেকের হজম হচ্ছে না। তাই এলোপাথাড়ি অভিযোগ এনে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।” বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর নাম না করে সনিয়ার শ্লেষ, “কাল পর্যন্ত যাঁরা দুর্নীতি নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছিল, দেখা যাচ্ছে, তারাই পাকে ডুবে আছে। অন্যের জন্য যারা গর্ত খোঁড়ে, তাদের জন্য এমন ভাবেই কুয়ো তৈরি থাকে।”
তবে দুর্নীতি যে কংগ্রেসের ভাবমূর্তিতেও আঁচ ফেলছে, সে কথা স্মরণে রেখেই সনিয়া বলেন, “মানছি, দুর্নীতি হল ক্যানসার। যে রোগে বেশি মৃত্যু হয় গরিবদের। তাই দুর্নীতির প্রশ্নে কাউকে রেয়াত করা হচ্ছে না। বিজেপি বাধা দিলেও লোকপাল বিল পাশ করানোর চেষ্টা ছাড়বে না দল ও সরকার।”
সাংগঠনিক বিষয়ে জোর দিলেও চড়া সুরে বিজেপি-কে আক্রমণ করেন রাহুলও। বলেন, “বরাবরই নেতিবাচক রাজনীতি করছে বিজেপি। সরকার ভাল পদক্ষেপ করলেও তার বিরোধিতা করছে। কিন্তু কংগ্রেসের ইতিহাসই বলছে, দেশের ভাল বই মন্দ কখনও করেনি কংগ্রেস সরকার।” আর জ্বালানির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের সীমাবদ্ধতার কথা সংক্ষেপে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীও বলেন, “বিরোধীরা খামোখা বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছে।” তাঁর দাবি, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি এলে কেউই কর্মহীন হবে না। বরং কৃষকরা উপযুক্ত দাম পাবেন। সুরাহা হবে সাধারণ মানুষের। কর্মসংস্থানের প্রচুর সুযোগ সৃষ্টি হবে। তা ছাড়া আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়লে সরকার আরও বেশি করে সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণের সুযোগ পাবে।
যদিও কংগ্রেসের এই যুক্তি মানতে নারাজ বিজেপি। দলের রাজ্যসভার নেতা অরুণ জেটলির দাবি, “খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি এলে ছোট ব্যবসায়ীরা শুধু নয়, মার খাবে ঘরোয়া উৎপাদন শিল্পও।”
গত লোকসভা ভোটের আগে এই ময়দান থেকেই কংগ্রেস ভোটমুখী হয়েছিল কৃষিঋণ মকুব ও একশো দিনের কাজকে পুঁজি করে। কিন্তু ঝড়-ঝঞ্ঝা এ বার অনেক বেশি। রামলীলাকে কি ফের সফল-যাত্রার প্রথম মাইলফলক করতে পারবে কংগ্রেস? অপেক্ষা ২০১৪-র। |
|
|
|
|
|