বিনোদন আদালতের দিকে তাকিয়ে তিন কন্যা
‘তিন কন্যা’ বিতর্ক গড়াতে চলেছে আদালতের দরজায়।
বুকিং থাকা সত্ত্বেও স্টার থিয়েটারে ‘তিন কন্যা’র প্রদর্শন বন্ধ রাখার অভিযোগে আইনি পদক্ষেপ করতে চলেছে ছবিটির প্রযোজক-পরিবেশক সংস্থা। রবিবারেও ছবিটি স্টারে দেখানো হয়নি। প্রযোজক-পরিবেশক সংস্থার তরফে গৌতম কুণ্ডু এ দিন বলেন, “আমরা আদালতে যাব।” পুরসভা নিয়ন্ত্রণাধীন স্টার থিয়েটারে ছবি দেখানোর বিষয়টি তত্ত্বাবধান করে যে বেসরকারি সংস্থা, তার বিরুদ্ধেই মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন গৌতমবাবু।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে স্টারে ‘তিন কন্যা’ ছবিটির প্রদর্শন বন্ধ রাখা হয়েছে বলে শনিবারই অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক-প্রশাসনিক সব মহল থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। বলা হয়, স্টারে কোন ছবি দেখানো হবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করে একটি বেসরকারি সংস্থা। এর মধ্যে প্রশাসনের কোনও ভূমিকা নেই। ঘটনাচক্রে ওই সংস্থার কাছ থেকে বরাত নিয়ে ছবি দেখানোর কাজটি করেন যে ব্যক্তি, তিনিই শনিবার সকালে ফোন করে ছবি বন্ধ থাকার কথা জানিয়েছিলেন প্রযোজকদের। ঘটনায় কলকাতার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের জড়িত থাকার কথাও ওই ব্যক্তি তথা মিস্টার দাভেই জানিয়েছিলেন।
কিন্তু স্টার প্রেক্ষাগৃহের তরফে দাবি করা হয়, শুক্র-শনিবার নাটকের শো থাকার কারণেই ছবি দেখানো যায়নি। সেই যুক্তি মানলে রবিবার থেকে ছবির প্রদর্শন শুরু করতে অসুবিধা থাকার কথা ছিল না। পরিচালক অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রবিবার সকালে মিস্টার দাভে ফের ফোন করে সিনেমাটি প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে জানা যায়, প্রদর্শন ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মিস্টার দাভে-র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। সরকারের কোনও মুখপাত্র এ দিন বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
রবিবার তা হলে ছবিটা দেখানো হল না কেন? স্টার থিয়েটারের তরফে রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ছবিটি আড়াই ঘণ্টার। অন্য সিনেমার সময়ের সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না।” এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, সপ্তাহভর কোন কোন সিনেমা চলবে, পরিবেশকরা হল-কর্তৃপক্ষের কাছে সেই তালিকা পাঠানোর সময়ই ছবির সময়সীমা উল্লেখ করে দেন। তা হলে এত দেরিতে সিদ্ধান্ত কেন? সদুত্তর মেলেনি। এ বার বিষয়টি আদালতে গড়াতে চলেছে। বছর দুয়েক আগে নন্দনে ‘স্থানীয় সংবাদ’ ছবিটির প্রদর্শন নিয়েও আইন-আদালত হয়েছিল।
স্টার থিয়েটারের কৌতূহলী ভিড়। রবিবার সন্ধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র
আদালতের নির্দেশেই পূর্বনির্ধারিত চুক্তি মেনে ছবিটি নন্দনে দেখানো হয়। সে বারেও আপাত ‘টেকনিক্যাল’ কারণের পিছনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
‘তিন কন্যা’ ছবির গল্পে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের ছায়া রয়েছে। তদন্তকারী অফিসার হিসেবে এক মহিলা আইপিএস চরিত্রও রয়েছে, যা পার্ক স্ট্রিটের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের তৎকালীন গোয়েন্দা অফিসার দময়ন্তী সেনের ভূমিকার স্মৃতিকে উস্কে দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সেই কারণেই ছবিটি সরকারি প্রেক্ষাগৃহে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও শনিবারই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন, ছবিটির ব্যাপারে কোনও সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। কিন্তু শুক্র-শনির পরে রবিবারেও ঘটনার গতিপ্রকৃতি দেখে বিষয়টি তত সরল নয় বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। ছবিটির সঙ্গে জড়িত শিল্পী ও কলাকুশলীদের দাবি সরকারি হস্তক্ষেপ না থাকলে কী ভাবে ছবিটির প্রদর্শন বন্ধ হল, খতিয়ে দেখুক সরকার। অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এ দিন বলেন, “আবার করে একই ঘটনা ঘটার ফলে বোঝা যাচ্ছে, এক রকমের দাদাগিরি চলছে।”
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ছবিটির প্রদর্শন আটকাতে পরিচালকের নিকট আত্মীয় শিল্পপতি বিপিন ভোরার কাছে গিয়েছিলেন টলিউডে প্রভাবশালী রাজ্যের এক মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের ঘনিষ্ঠ এক প্রযোজক। কিন্তু বিপিনবাবু এ বিষয়ে জড়াতে রাজি হননি বলে সূত্রটি জানিয়েছেন। তবে মন্ত্রী বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। গোটা ঘটনায় সরকার-ঘনিষ্ঠ নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষের কোনও ভূমিকা আছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। অর্পিতা বলেন, “শহরের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে কোন কোন নাটক হবে, তা ঠিক করি। এর বাইরে সিনেমার ব্যাপারে আমার কোনও ভূমিকা নেই।”
অথচ স্টার থিয়েটার সূত্রেরই খবর, ‘তিন কন্যা’র অগ্রিম বুকিং শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রেক্ষাগৃহের এক মুখপাত্রের কথায়, “১০-১২টা অ্যাডভান্স বুকিং হয়েছিল। আমরা তাদের টাকাও ফেরত দিয়েছি। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে কোথাও।” কিন্তু কার সঙ্গে, কী ভুল বোঝাবুঝি, তার সদুত্তর পাওয়া যায়নি। ঋতুপর্ণা জানিয়েছেন, গত রবি ও বুধবারে ছবিটি স্টারে দেখানো হবে বলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। চুক্তি ছাড়া এই ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়া যায় নাকি, প্রশ্ন তুলছেন তিনি। বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়ার পরে স্টারের তরফে তবে আপত্তিই বা জানানো হয়নি কেন, এ প্রশ্নেরও উত্তর নেই। ‘তিন কন্যা’র পরিবেশক সংস্থার সূত্রে খবর, ৩ থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত স্টারে ‘তিন কন্যা’ প্রদর্শনের জন্য ৬০ হাজার টাকা ভাড়া জমা করেছিলেন প্রযোজকরা। স্টারের ডিজিটাল প্রোজেকশন ব্যবস্থা ইউএফও-তে ‘তিন কন্যা’ লোড করাও হয়ে গিয়েছিল। লোড করার খরচ বাবদ করসমেত ২২ হাজার টাকা ইউএফও-কেও মিটিয়ে দেন প্রযোজকরা।
এ দিন স্টারে ‘তিন কন্যা’-র প্রদর্শন শুরু হবে শুনে অনেকেই বিকেলে ওই হলের টিকিট কাউন্টারে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু টিকিট মেলেনি। কর্মীদের মুখে তাঁদের শুনতে হয়েছে, “ও সব ভুল খবর। এখানে ওই সিনেমা দেখানো হচ্ছে না।” স্টারে না চললেও এ দিন সন্ধ্যায় হাতিবাগানেরই অন্য একটি প্রেক্ষাগৃহে ‘তিন কন্যা’ হাউসফুল হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.