বাম আমলে তাঁর নাটক বন্ধ করতে পুলিশ পাঠিয়েছিল তৎকালীন সরকার। আর এখন কলকাতায় সরকারি হলে কখন কোন নাটক দেখানো হবে, তার বেশির ভাগটা কার্যত তিনিই নির্ধারণ করছেন। এমনকী কলকাতা পুরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন স্টার থিয়েটারেও।
তিনি অর্পিতা ঘোষ। সাম্প্রতিক অতীতে তাঁর ‘পশুখামার’ নাটকের মঞ্চায়ন নিয়ে পূর্বতন বাম সরকারের বাধাদানের অভিযোগে যাঁকে গর্জে উঠতে দেখা গিয়েছিল।
হাতিবাগানের স্টার থিয়েটারে ‘তিন কন্যা’-র প্রদর্শন বন্ধ করার মতো অভিযোগ অবশ্য এখনও সে ভাবে ওঠেনি নাটকের অঙ্গনে। কিন্তু কোন অধিকার বলে অর্পিতা কোন হলে কবে, কখন কী নাটক মঞ্চস্থ হবে তা ঠিক করে দেন, সেই প্রশ্ন উঠছে।
নাট্যকর্মী হিসেবে অর্পিতার পরিচিতি যথেষ্ট। নন্দীগ্রাম-পর্ব থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও তিনি ঘনিষ্ঠ। পরিবর্তনের পরেও সরকার-পন্থী বলে চিহ্নিত। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পরে ভিড় সামলানো থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে নানা অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
সরকারি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদেই অর্পিতা গিরিশ মঞ্চ, শিশির মঞ্চ, মধুসূদন মঞ্চ ও মিনার্ভার কমিটির চেয়ারপার্সন। এ রাজ্যে মহাজাতি সদন, রবীন্দ্র সদন এবং এক সঙ্গে গিরিশ মঞ্চ, শিশির মঞ্চ, মধুসূদন মঞ্চ ও মিনার্ভার জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অধীনে একটি করে সরকারি কমিটি রয়েছে। তাতে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে সংস্কৃতি জগতের লোকেরাও রয়েছেন। এই কমিটি হলগুলির অনুষ্ঠানের বিষয়ে সুপারিশ করে। তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের কর্তারা খাতায়-কলমে সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেন। মন্ত্রী তথা নাট্যকর্মী ব্রাত্য নিজে মহাজাতি সদনের কমিটির মাথায়।
মহাকরণ সূত্রে কিন্তু বলা হচ্ছে, কমিটিগুলির এক্তিয়ার কেবলমাত্র সুপারিশ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। হল কে পাবেন, তা সংশ্লিষ্ট আমলারই ঠিক করার কথা। রাজ্যের শীর্ষস্তরের এক আমলার কথায়, “কোনও ব্যক্তির এমনকী কোনও মন্ত্রীরও এ সব বিষয় ঠিক করার অধিকার নেই। ওই হলটি যাদের তত্ত্বাবধানে, সেই বিভাগের সচিব-পর্যায়ের কেউই একমাত্র এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”
এ রাজ্যে বাস্তব অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য রকম। বাম জমানাতেও সরকারের ঘনিষ্ঠ বিশিষ্টেরা সংস্কৃতি জগতে ছড়ি ঘোরাতেন। তাঁরাই ছিলেন দণ্ডমুন্ডের কর্তা। ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য এবং শাসক দলের ইচ্ছা অনুযায়ীই তাঁরা কাজ করতেন বলে অভিযোগ। আমলারা তাঁদের সিদ্ধান্তে স্রেফ অনুমোদন দিতেন। অভিযোগ, সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, স্টারে ‘তিন কন্যা’-বিতর্ক থেকে শুরু করে সরকারি হলে কবে কোন নাটক হবে তার পিছনেও সেই এক অঙ্ক কাজ করছে।
গত জুন থেকে পুরসভা পরিচালিত স্টার থিয়েটারে সিনেমা দেখানোর দায়িত্ব পেয়েছে আর্টএজ নামে একটি সংস্থা। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনেই তাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে পুর কর্তৃপক্ষের দাবি। তখনই ঠিক হয়, সপ্তাহে দু’টো দিন (বৃহস্পতি ও শনিবার) স্টারে নাটক হবে। কারা কবে এই সুযোগ পাবে, তা অর্পিতা একাই ঠিক করেন। পুরসভার পক্ষ থেকে তাঁকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
পুরসভার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, “আর্টএজ স্টারের দায়িত্ব পাওয়ার আগে হল চালানোর ব্যাপারে আমরা সাংস্কৃতিক জগতের কয়েক জনের পরামর্শ নিয়েছিলাম। যেমন ব্রাত্য, হরনাথ, প্রসেনজিত, অর্পিতা। পরে আর্টএজ নাটকের ব্যাপারে অর্পিতার পরামর্শ নেয়।” অর্পিতা বলেন, “আর্টএজ আমাকে ই-মেলে জানিয়ে দেয়, কারা স্টারে নাটক করার জন্য আবেদন করেছে। আমি ঠিক করি কাদের সুযোগ পাওয়া উচিত।” অর্পিতাকে এই দায়িত্ব দেওয়ার পিছনে কি শাসক দলের তরফে কোনও চাপ কাজ করছে? আর্টএজের কর্মী রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা নাট্যকর্মী ব্রাত্য বসু অবশ্য দাবি করছেন, পুরসভার অধীনস্থ হলগুলির জন্য এক সরকারি কমিটি আছে। যে কমিটির তিনি সভাপতি। ব্রাত্যর কথায়, “মন্ত্রিত্বের ব্যস্ততায় আমি কমিটির কাজ দেখার সময় পাই না। স্টারে সিনেমার বিষয়টি হরনাথ চক্রবর্তী এবং নাটকের বিষয়টি অর্পিতাকে দেখার জন্য বলেছিলাম।”
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় কিন্তু এমন কমিটির অস্তিত্বই মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, “কোনও কমিটি নেই। তবে অর্পিতা নাট্য জগতের এক জন। স্টারে নাট্যগোষ্ঠী ও পুরসভার মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টা তিনিই দেখছেন।” স্টারের জন্য কোনও কমিটি নেই বলে জানাচ্ছেন সরকারি আধিকারিকেরাও। সুতরাং ছড়ি ঘোরাচ্ছেন অর্পিতাই।
|
‘শক্তিমান’ সিরিয়ালের নাম চরিত্রে অভিনয়কারী মুকেশ খন্নার ছবির শ্যুটিং থামিয়ে দিলেন হস্তিনাপুর পক্ষীরালয়ে বন আধিকারিকেরা। অভিযোগ, অনুমতি না নিয়েই চলছিল শ্যুটিং। |