জমা মামলার শুনানিতে কোর্ট চলল ভোর পর্যন্ত
ধ্যরাতেও চলছে আদালত। শনিবার তারই সাক্ষী থাকল দুর্গাপুর। সকাল ১০টা থেকে ভোর সাড়ে ৩টে, এই সাড়ে ১৭ ঘণ্টায় প্রায় ১৭০টি জামিন ও আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি হল! যার মধ্যে রইল দুর্গাপুর সিটিসেন্টারের গণধর্ষণ মামলাও।
পুজোর ছুটির মাঝে প্রতিবারই বসে ‘ভ্যাকেশন বেঞ্চ’ বা অবকাশকালীন বেঞ্চ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই বেঞ্চের কাজকর্ম শেষ হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। তবে এ বার সব কিছুকে ছাপিয়ে দুর্গাপুর শহরে শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া আদালত চলেছে ভোররাত পর্যন্ত। খোলা থাকল আশপাশের হোটেল, দোকানপাট। বিচারক, আইনজীবী, আদালতের কর্মী, বাদী-বিবাদী পক্ষের লোকজনসব মিলিয়ে রাতভর গমগম করল আদালত চত্বর। রাজ্যের প্রাক্তন ডিরেক্টর (পাবলিক প্রসিকিউশন) তাজ মহম্মদের প্রতিক্রিয়া, “এই ধরনের বেঞ্চ সাধারণত রাত ১০টা পর্যন্ত চলার নজির রয়েছে। তবে ভোর সাড়ে ৩টে পর্যন্ত শুনানি চলা খুবই বিরল। ইতিবাচকও বটে।”
ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট চালু থাকলেও মহালয়া থেকে ভাইফোঁটা পর্যন্ত ছুটি থাকে জেলা জজ কোর্ট। পুজোর মধ্যে নানা থানায় অনেক অভিযোগ দায়ের হয়। গ্রেফতার হন অনেকে। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে জামিনের আবেদন খারিজ হলে উচ্চ আদালতে আবেদনের সুযোগ পান না অভিযুক্তেরা। তাঁদের সেই সুযোগ দিতেই ছুটির মাঝে বসে ‘ভ্যাকেশন বেঞ্চ’। জেলা-মহকুমা সদরের আদালতে এই বেঞ্চ বসে। হাজতে থাকা অভিযুক্তদের জামিনের আবেদনের সঙ্গে সেখানে আগাম জামিনের আবেদনের সুযোগও মেলে। বিচারের দায়িত্বে থাকেন কোনও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক। বর্ধমান জেলা আদালতে এ বার ইতিমধ্যেই দু’দিন এমন বেঞ্চ বসেছে। আসানসোল আদালতেও এক দিনএই বেঞ্চের কাজ হয়েছে। কোথাও রাত ৮টার বেশি কাজকর্ম গড়ায়নি। দু’জায়গাতেই আরও এক দিন করে ‘ভ্যাকেশন বেঞ্চ’ বসার কথা রয়েছে। তবে দুর্গাপুরে এ বার এমন বেঞ্চের জন্য নির্দিষ্ট ছিলএকটি দিন।
বিশেষ দিনটি নিয়ে প্রশাসনিক তোড়জোড় শুরু হয়েছিল আগে থেকেই। শনিবার দুর্গাপুর আদালত চত্বরে অতিরিক্ত আলোর ব্যবস্থা হয়। রাতভর বাড়তি পুলিশি পাহারার ব্যবস্থাও ছিল। সকাল ১০টা থেকে বেঞ্চ বসে। দায়িত্বে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক বিশ্বরূপ চৌধুরী। মোট প্রায় ১৭০টি মামলা ওঠে। হাজির ছিলেন ১৬ জন সরকারি আইনজীবী। উৎসবের মরসুমে নানা দুষ্কর্মের অভিযোগে ধৃত অনেকে জামিন পেলেন। জামিনের আবেদন নামঞ্জুরও হল অনেকের। তাদের অন্যতম সেপ্টেম্বরে সিটিসেন্টারে জাতীয় সড়কের পাশে এক তরুণীকে গণধর্ষণে অভিযুক্তেরা। সব মামলার শুনানি যখন শেষ হয়, তখন ভোর প্রায় সাড়ে ৩টে।
বর্ধমানের নানা আদালত থেকে মক্কেলদের নিয়ে হাজির হয়েছিলেন আইনজীবীরা। তাঁরা জানান, কাজের চাপে অন্য আদালতে কর্মরত বন্ধু আইনজীবীদের সঙ্গে সারা বছর দেখা হয় না। এই দিনটি তাঁদের কাছে মিলন উৎসবও বটে। চলে খাওয়া-দাওয়ায়। দুর্গাপুরের আইনজীবী দেবব্রত সাঁইয়ের কথায়, “সবাই মিলে চুটিয়ে উপভোগ করি দিনটা।” তবে কাজে ঢিলেমির কোনও সুযোগ থাকে না। সরকারি আইনজীবী কল্লোল ঘোষ বলেন, “এই দিন কাজকর্ম চলে ঘণ্টারপর ঘণ্টা। অন্য সব দিনের মতোই সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়।”
ব্যস্ত ছিলেন আদালত-কর্মীরাও। ল-ক্লার্ক বিবেক বসু বলেন, “ভোর সাড়ে ৩টেতেও আমার কাজ শেষ হয়নি।” অন্য দিন সন্ধ্যা ৬টার পরে সুনসান হয়ে যায় আদালত চত্বর। শনিবার অবশ্য রাতভরই বিক্রিবাটা হয়েছে। হোটেল মালিক কালু মণ্ডলের কথায়, “পুজোর মরসুমে কোর্ট বন্ধ থাকায় রোজগার তো বিশেষ হয় না। তবে এই একটা দিন খানিকটা পুষিয়ে দেয়। এ বার তো ভালই রোজগার হল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.