দুষ্কর্ম বাড়ছে নিয়ামতপুরে, ক্ষোভ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায়
পরাধ আর সীমাবদ্ধ নেই রাতের অন্ধকারে। প্রকাশ্য দিনের আলোতে জনবহুল এলাকাতেও যথেচ্ছ লুঠপাট চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। এর কারণ হিসেবে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করছেন কুলটি থানার নিয়ামতপুরের বাসিন্দারা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ামতপুর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় গত ১৫ দিনে তিনটি বড়সড় লুঠপাটের ঘটনা ঘটেছে। মোটরবাইক চুরি-সহ ছোটখাটো অপরাধ তো চলছেই। বাধা দিতে দুষ্কৃতীদের হাতে প্রহৃত হচ্ছেন বহু বাসিন্দা। দুষ্কৃতীদের এহেন দৌরাত্ম্যের পিছনে পুলিশি নিস্ক্রিয়তাকেই দায়ী করেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। প্রতিকারের দাবিতে থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম। যদিও পুলিশের দাবি, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত চলছে। দু’একটিতে সাফল্যও মিলেছে।
শনিবার বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ জিটি রোড লাগোয়া নিয়ামতপুর বাজার সংলগ্ন একটি বেসরকারি লগ্নি সংস্থায় লুঠপাট চালায় একদল দুষ্কৃতী। সংস্থার শাখা ম্যানেজার অমিতকুমার সিংহ অভিযোগ করেন, অন্তত সাত জনের একটি দল ভবনটির তিন তলায় তাঁদের কার্যালয়ে ঢোকে। প্রথমে তারা সংস্থার নিরাপত্তাকর্মী পরেশ মুদিকে মারধর করে ও মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ঘরের এক কোনায় উল্টোমুখে বসিয়ে রাখে। এর পরে সেখানে কর্তব্যরত আরও পাঁচ জন কর্মীকে বন্দুক দেখিয়ে বসিয়ে রাখে। শাখা ম্যানেজারের কাছ থেকে ভল্টের চাবি নিয়ে মজুত টাকা বের করে নেয়। মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই পুরো কাজটি সেরে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। প্রসঙ্গত, যে লগ্নি সংস্থায় লুঠপাট চালানো হয়েছে, সেই এলাকাটি জনবহুল। মাত্র দুশো মিটার দূরেই রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। ঘটনাস্থল থেকে কয়েক গজ দূরে নিয়ামতপুর চৌমাথায় ওই সময়ে একটি পুলিশের জিপও দাঁড়িয়েছিল বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান আসানসোল দুর্গাপুর কমিশনারেটের এসিপি (পশ্চিম) তন্ময় মুখোপাধ্যায়। তন্ময়বাবু বলেন, “তদন্ত চলছে। দুষ্কৃতীরা যাতে পালাতে না পারে তার জন্য সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
পুলিশের জিপ দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও নিয়ামতপুরে এই চৌরাস্তার
কাছেই একটি লগ্নি সংস্থায় লুঠপাট হয় শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
এ ধরনের লুঠপাটের ঘটনা এই প্রথম নয়। গত ১৫ দিনে এলাকায় দু’বার ঘটে গিয়েছে এই ধরনের অপরাধ। দুর্গা পুজোর ঠিক মুখেই ১৯ অক্টোবর ভোররাতে সীতারামপুরের বিদায়গড় এলাকায় অরুণ সাউ নামে এক ব্যক্তির বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে পরিবারের লোকজনকে বেঁধে রেখে লুঠপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। ঠিক সাত দিন পরে, ২৬ অক্টোবর ভোররাতে সীতারামপুরের রেল আবাসন এলাকায় রেলকর্মী বিনোদ হেলার বাড়ির দরজা ভেঙে লুঠপাট চালানো হয়। তদন্ত শুরু হলেও দু’টি ঘটনারই কোনও কিনারা হয়নি।
নিয়ামতপুর এলাকায় পরপর এমন ঘটনা ঘটার জন্য পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাতেই দায়ী করেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, উৎসবের দিনগুলিতেও তাঁরা চোরের উপদ্রবে ঘর খালি রেখে বেরোতে পারছেন না।
এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই অবনতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত। পুলিশকে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।” এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ কুলটি পুরসভার উপপ্রধান তথা কংগ্রেস নেতা বাচ্চু রায়। তাঁর অভিযোগ, “নিয়ামতপুর এলাকায় প্রতিদিনই মোটরবাইক চুরি-সহ বিভিন্ন অপরাধ ঘটছে। পুলিশকে জানিয়েও ফল মিলছে না।” তাঁর দাবি, “প্রতিকারের দাবিতে আমরা নিয়ামতপুর ফাঁড়ি ঘেরাও করার কর্মসূচী নিয়েছি।” আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে বৃহৎ আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএমও। দলের কুলটি জোনাল কমিটির সম্পাদক সাগর মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “নিয়ামতপুর এলাকার নিরাপত্তা তলানিতে ঠেকেছে। পুলিশ নিষ্ক্রিয়।”
তবে এমন অভিযোগ ঠিক নয় বলেই দাবি পুলিশের। এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় একটি পরিসংখ্যানে জানান, নিয়ামতপুর এলাকায় সংগঠিত চুরি-ছিনতাইয়ের তদন্তে নেমে পুলিশ প্রচুর চোরাই জিনিস উদ্ধার করেছে। গ্রেফতারও হয়েছে কয়েক জন। তদন্ত এখনও চলছে। বাকিরাও ধরা পড়বে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.