|
|
|
|
ভাবেইনি পুলিশ |
জঙ্গলে না গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
মাসে দু’ হাজার টাকার ভাতা। খাবার, কম্পিউটার, গাড়ি চালানো শেখানো থেকে নিরাপত্তা অভাব ছিল না কিছুরই। সব দায়িত্ব পুলিশের!
তবু শনিবার সকালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ লাইন থেকে সোজা কেন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে রওনা দিলেন দুই ‘আত্মসমর্পণকারী’ মাওবাদী চিরঞ্জীব মাহাতো ওরফে লম্বু (কালু এবং নির্মল নামেও পরিচিত) এবং শুকদেব মাহাতো ওরফে বাদল? কী ভাবে গেল? এই প্রশ্নটাই আপাতত নানা মহলে ঘোরাফেরা করছে।
গত ১২ জানুয়ারি ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করেন মাওবাদীদের গেরিলা বাহিনী পিএলজিএ-র বাগঘরার এরিয়া কমান্ডার শুকদেব। ৭ ফেব্রুয়ারি জেলা পুলিশ লাইনে আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহের কাছে স্ত্রী অনিমাকে নিয়ে (তিনিও মাওবাদী) ‘আত্মসমর্পণ’ করেন কাঁটাপাহাড়ি এরিয়া কমান্ডার চিরঞ্জীবও। দু’জনকেই পুলিশ লাইনে কিছু ‘আত্মসমর্পণকারী’ মাওবাদীর সঙ্গে রাখা হয়েছিল।
সরকারি ঘোষণা ছিল, প্রত্যেক আত্মসমর্পণকারীর নামে দেড় লক্ষ টাকার স্থায়ী আমানত থাকবে। আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিলে বাড়তি টাকাও মিলবে। দু’বছর নজরদারিতে থাকার পরে যদি আচরণ দেখে পুলিশকর্তাদের মনে হয় যে তিনি সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে প্রস্তুত, তখন তাঁকে সেই টাকা তাকে দেওয়া হবে। নজরদারিতে থাকার সময়ে প্রতি পরিবারকে দেওয়া হবে দু’ হাজার টাকা মাসিক ভাতা। এই ‘প্যাকেজ’ দেখেই চিরঞ্জীব, বাদল, বিভূতি মাহাতো, শোভন কারক, শোভা মাণ্ডির মতো কিছু মাওবাদী ‘আত্মসমপর্র্ণ’ করেছেন। |
|
মমতার কাছে আত্মসমর্পণ করছেন শুকদেব মাহাতো। —ফাইল চিত্র |
পুলিশ লাইনে থাকা মাওবাদীদের বেশির ভাগই সরকারের কাছে চাকরি বা অন্য কোনও কাজের ব্যবস্থা দাবি করেছেন। এখনও তা না পেয়ে ‘অস্থির’ হয়ে পড়েছেন তাঁদের কেউ-কেউ। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া চিরঞ্জীবের পৈতৃক জমি নেই। শালবনির কন্যাবালি গ্রামে ছোট্ট মাটির বাড়িতে বসে তাঁর বাবা কৃষ্ণপ্রসাদ মাহাতোও বলেন, “লোকের ঘরে মজুর খেটে সংসার চলে। ছেলেটার যদি চাকরি হয়, খুবই ভাল হবে।” জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর আশ্বাস, চুক্তির ভিত্তিতে তাঁদের কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ‘অস্থির’ হলেই কি কেউ পুলিশ লাইনের ‘নিরাপত্তা’ এড়িয়ে বেরিয়ে যেতে পারেন?
পুলিশ সুপারের বক্তব্য, “আত্মসমর্পণকারীরা বন্দি নন। ওঁদের নিরাপত্তার জন্যই পুলিশ লাইনে রাখা হয়েছে। মূলস্রোতে ফেরার জন্য কোথাও ঘুরে বেড়াতেও বাধা নেই। সেই সুযোগ নিয়েই ওই দু’জন চলে গিয়েছিলেন।” তবে পুলিশেরই একটি সূত্রের খবর, দু’জনই বহু গোপন তথ্য জুগিয়ে কর্তাদের বিশ্বাসভাজন হয়ে উঠেছিলেন। ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করায় তাঁরা মাওবাদীদের কাছে আর ফিরতে তো পারবেনই না, বরং আক্রমণের নিশানা হতে পারেন। স্বাভাবিক ভাবেই, তাঁদের উপরে নজরদারিও কম। তাঁরা যে জঙ্গলের বদলে খোদ কলকাতায় হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের দিকে হাঁটা লাগাতে পারেন, তা সম্ভবত কারও মাথায় আসেনি।
যা ঘটল, পুলিশ লাইনে আপাতত নজরদারি ফের বাড়ছে। |
|
|
|
|
|