ব্যাঙ্কে টাকা পড়তেই আশা শেষ
কটি এসএমএসে শেষ হল সামান্য আশাটুকু। শনিবার দুপুরে মোবাইলের পর্দায় চোখ রেখে এবিজি সংস্থার অবশিষ্ট শ্রমিকরা জানতে পারলেন, তাঁদের চাকরি নেই, অনেকেরই বকেয়া পাওনা জমা পড়ে গিয়েছে ব্যাঙ্কে। চোখে জল দেভোগের মহম্মদ জাফর আলির। বললেন, “ভাবতে পারছি না কাজটা আর নেই। ঘরের ছ’জনকে কী ভাবে ভাত দেব? এটাই কি পরিবর্তন?”
হলদিয়া বন্দরের দু’টি বার্থে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পণ্য খালাসের কাজ করত এবিজি। বাম আমলে শাসক দলের চাপে অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ করার ফলে লোকসানের মুখে পড়ে তারা। লোকসান কমাতে গত ২২ সেপ্টেম্বর ছাঁটাই করে ২৭৫ জনকে। এর পর তারা পড়ে তৃণমূলের হুমকির মুখে।
নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগ তুলে সংস্থাটি হাইকোর্টে হলদিয়া ছাড়ার আর্জি জানায়। কাজ খোয়ানো শ্রমিকরা চালাতে থাকেন আন্দোলন। গত ৩০ অক্টোবর থেকে হলদিয়ার সুতাহাটার নন্দরামপুরে এবিজি-র বাকি শ্রমিকরাও অবস্থানে বসেন কাজ খোয়ানোর আশঙ্কায়। শেষ পর্যন্ত সত্যি হল তাঁদের আশঙ্কা। ওই ৩৪৮ জন শ্রমিকেরও চাকরি গেল এ বার। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বকেয়া টাকা জমা দিয়ে দেওয়ায় এবিজি-র হলদিয়ায় থেকে কাজ করার ক্ষীণ আশাটুকুও মুছে গেল। শনিবার একের পর এক সহকর্মীর মোবাইলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ার মেসেজ আসা শুরু হতেই ভেঙে পড়েন শ্রমিকরা। এবিজি-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও জানিয়ে দেয়, কর্মরত ৩৪৮ জন শ্রমিকের ব্যাঙ্কে টাকা জমা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সর্বশেষ খবর ইতিমধ্যে অন্তত ১৮৬ জনের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েছে। এর পরেও অবশ্য অবস্থান থেকে সরে না-এসে আন্দোলন জোরালো করারই পরিকল্পনা নিচ্ছে সদ্য কাজ খোয়ানো শ্রমিকরা। আন্দোলনের নেতা শেখ সিরাজের দাবি, “বন্দর ও সাংসদের চক্রান্তে আমাদের আজ এই হাল। আমরা ব্যাঙ্ক থেকে ওই টাকা তুলব না। যারা চক্রান্ত করল তাঁদের বিরুদ্ধে এ বার অনশন অবস্থান শুরু করব।” এমনকী, আইনি পথে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
সবহারা... বকেয়া মিটিয়ে দিল এবিজি। চলে গেল চাকরি। সুতাহাটার চন্দরামপুরের
অবস্থান মঞ্চে কাজ হারানো কর্মীরা। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র
কিন্তু শ্রমিক পরিবারগুলিতে নেমে এসেছে উদ্বেগের আঁধার। ব্যাঙ্কে টাকা জমা পড়ছে, জানতে পেরে স্থানীয় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে ছুটে গিয়েছিলেন মহম্মদ জাফর আলি। গিয়ে দেখেন তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ৬৩ হাজার টাকা। স্ত্রীর কাছে তখনও তিনি জানাননি সেই কথা। জাফর আলির স্ত্রী আলিয়া বিবি অবশ্য জানেন এই পরিস্থিতির কথা। তিনি বলেন, “যা চলছে শুনছি, তাতে চিন্তায় রয়েছি। ছেলে-মেয়ের পড়ার খরচ আসবে কোথা থেকে বুঝতে পারছি না।”
এত দিন যাঁরা সরাসরি ওই ছাঁটাই না-হওয়া শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দেননি, তাঁরাও এ দিন আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। দফায় দফায় চলেছে বিক্ষোভ। ফজলুল রহমান, নূর আলম, নাসির শাহরা দিশেহারা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে।
কর্মহারা সামশেদ আহমেদ খান বললেন, “বাইক কিনতে ঋণ নিয়েছিলাম। তার ছ’মাস বাকি রয়েছে। কী ভাবে শোধ করব বুঝতে পারছি না। এর জবাব শুভেন্দু অধিকারীকে দিতে হবে।” সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে ফোন করা হলেও তিনি নীরব ছিলেন।
তমলুকের প্রাক্তন সিপিএমের সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের প্রতিক্রিয়া, “শুভেন্দু অধিকারী তো বলেছিলেন তিনি শেষ করতে পারেন, সেটাই করে দেখালেন। তবে শ্রমিকদের বলব ওই টাকা না তুলতে।”
হলদিয়া বন্দর নিয়ে সিটু এ বার কেন্দ্রের দ্বারস্থ হবে। শিলিগুড়িতে শনিবার এই কথা জানান সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী। তাঁর গলায় কিছুটা আত্মসমালোচনার সুর থাকলেও তৃণমূলকে আক্রমণ করে বলেন, “পুরোটাই মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উস্কানি, উৎসাহ এবং পরিকল্পনা মাফিক হচ্ছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.