ঘরের মহারথীরাই কি মোহনবাগানের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিল? রবিবারের ম্যাচে যাঁরা না থেকেও ভীষণ ভাবে আছেন। করিম বেঞ্চারিফা মরক্কোয় বসে দলের রিমোট নাড়বেন। আর সাউথ সিটি-র ফ্ল্যাটে বসে টিভি-র রিমোট ঘোরাবেন টোলগে ওজবে!
কাঁধের দু’পাশে বুটজোড়া ঝুলছে। সবুজ-মেরুন টি-শার্ট যখন ক্লাব তাঁবুর মধ্যে সেঁধিয়ে যাচ্ছেন, মোহনবাগানের ঐতিহাসিক লন থেকে ভেসে এল সেই সমবেত চিৎকার। “ওও-ডাআ-ফা!” ভারতীয় ফুটবলে এ ধরনের কোরাস অপরিচিত নয়। কখনও এই চিৎকারে মিশে থাকে অপার বিস্ময়, কখনও বাড়তি আবেগ, কখনও আশাভঙ্গের বেদনা। শনিবারের বারবেলায় ক্লাব তাঁবুতে ঢোকার মুখে জনতার উল্লাসধ্বনির ‘লিরিক’ যাই হোক, বুটজোড়া দোলাতে দোলাতে একবার সে দিকে উঠল তাঁর হাত। বরাভয় দিলেন? জিতিয়ে দেবেন? খুব নিশ্চিত হতে পারছি না। একটু আগেই যে তাঁর দলের গোলকিপার কোচ হেমন্ত ডোরা একগুচ্ছ ক্যামেরার সামনে বলে গেলেন, “করিমের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। উনি বলেছেন, তোমরা জানো আমি কী চাই। সে মতো খেলাও।” হেমন্তের কথা মেনে হাঁটলে, রবিবারের ম্যাচে তিন পয়েন্ট তোলার সঙ্গে কোচের মুখ রক্ষার দায়িত্বও পালন করতে হবে ওডাফাদের। যতই হোক, বকলমে তো করিমের স্ট্র্যাটেজি মেনেই খেলবে বাগান। |
|
অদৃশ্য রিমোট করিমের হাতে। |
|
কাজটা সহজ নয়। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গড়িয়েছে টোলগে ওজবেকে চোটের জন্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে। আর হয়তো সে জন্যই চিন্তার ভাঁজ সহকারী কোচ মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কপালে স্পষ্ট ভেসে উঠছিল। বলছিলেন, “টোলগে অনুশীলনে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি ওকে বারণ করলাম। যখন খেলতেই পারবে না, তখন মাঠে এসে লাভ কী? তার চেয়ে বিশ্রাম নিক। যত তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে, ততই ভাল দলের পক্ষে। টোলগের না থাকাটা চিন্তার ব্যাপার।” চিন্তা বলতে কি বোঝাতে চাইলেন রবিবার স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়া ম্যাচে ওডাফাকে বল বাড়াবেন কে? মৃদুল এখনও দ্বিধায় প্রথম দলে জুয়েল আর ডেনসনের মধ্যে কাকে খেলাবেন, তা নিয়ে। স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে শনিবার অনুশীলনে আসেননি ডেনসন। ম্যাচের আগে তাঁকে পাওয়া গেলে সম্ভবত পাসার হিসেবে ডেনসনকেই নামাবেন মৃদুল। ওডাফা নিজেও বলছিলেন, “স্পোর্টিং ভাল দল। তিন পয়েন্টের জন্য অনেক লড়াই করতে হবে।”
শনিবার সাতসকালে গঙ্গাপারের ক্লাবে দেখা গেল, পাসিং-শক্তি বাড়ানোর দিকেই নজর মৃদুলের। প্রথম দলকে নিয়ে ‘ওয়ান টাচ’ ফুটবল খেলতে ব্যস্ত। যেখান থেকে উঠে এল নতুন একটা ফর্মেশনও। ৪-১-৪-১। নতুন ছকে কে কোথায় খেলবেন, সেটাও দেখে নেওয়া যাক। চার ডিফেন্ডার ইচে, আইবর, বিশ্বজিৎ ও নির্মল। ডিফেন্সিভ ব্লকার স্ট্যানলি (নতুন ভূমিকা)। চার মিডিও স্নেহাশিস-নবি-মৈথানি-জুয়েল/ডেনসন। একা স্ট্রাইকার ওডাফা। |
|
খাতায় কলমে ওডাফাদের নিয়ে মৃদুল, হেমন্তরা। ছবি: উৎপল সরকার |
|
শোনা গেল, ফরোয়ার্ডে একা খেলার সিদ্ধান্ত নাকি ওডাফা নিজেই নিয়েছেন। আর বাকি স্ট্র্যাটেজি? বার্তা বোধহয় মরক্কো থেকেই আগাম পার্সেল হয়ে এসেছে! অন্যান্য বছরের মতো এখনও পর্যন্ত অতিমানবীয় চমক দেখিয়ে উঠতে পারেননি ওডাফা। চার ম্যাচে মাত্র দু’বার গোলের সন্ধান দিতে পেরেছেন। কিন্তু তাতে কী? স্পোর্টিংয়ের বাধা টপকানোর জন্য বাগানের ভরসার হাত যে ওডাফা-ই, সেটা যেমন সবুজ-মেরুন ফুটবলারদের কাছে অজানা নয়, তেমনই নতুন নয় স্পোর্টিং দলের কাছেও। বিপক্ষ কোচ একেন্দ্র সিংহ বলছিলেন, “ওডাফাকে আটকাতে পারলেই, ম্যাচ পকেটে চলে আসবে।”
স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়ায় এমনিতে হাতিঘোড়া নেই। গোয়ার দল হলেও ডেম্পো কিংবা সালগাওকরের মতো ঝাঁঝও নেই একেন্দ্রের দলে। কলকাতায় এসেছেন মাত্র এক জন বিদেশি নিয়ে। শনিবার সেই কালুর মুখেও ওডাফা-বন্দনা। যুবভারতীতে অনুশীলন সেরে বেরোনোর সময় বললেন, “চার্চিলে ওডাফার সঙ্গে এক বছর খেলেছিলাম। গোলটা খুব ভাল চেনে। ম্যাচে বিপজ্জনক দিক বলতে শুধু ওডাফাই। কখন কী করে দেয়, বলা খুব কঠিন।” স্পোর্টিংয়ের সদ্য প্রাপ্তির খাতা খুললে দেখা যাবে, আই লিগে এখনও পর্যন্ত তিন ম্যাচে একটা জয়, একটা হার, এবং একটা ড্র করেছে তারা। ডেম্পোর বিরুদ্ধে পাঁচ গোলের বোঝা যেমন রয়েছে, তেমনই কোনও বিদেশি ছাড়া ইস্টবেঙ্গলকে আটকে দেওয়ার কৃতিত্বও তালুবন্দি করে রাখা। আত্মবিশ্বাসী স্পোর্টিং কোচ বলছিলেন, “ইস্টবেঙ্গলকে আটকাতে পারলে, মোহনবাগানকেও হারাতে পারব।” গোয়ার একটা দলের কাছে জিততে জিততেও আটকে গেল ইস্টবেঙ্গল। রবিবার গোয়ার আর একটা দলের বিরুদ্ধে মোহনবাগান জয়ের পতাকা ওড়াতে পারে কি না, তা জানতে অপেক্ষায় থাকতেই হচ্ছে! |