মারামারি করেও রেহাই ডেম্পো ফুটবলারদের
‘এল ক্লাসিকোয়’ চোনা ফেললেন রেফারি
ইস্টবেঙ্গল ১ (চিডি পেনাল্টি) )
ডেম্পো ১ (পিটার কার্ভালহো)
র্মান্দো কোলাসোর টিমের বিরুদ্ধে টানা সাত ম্যাচ অপরাজিত থাকার অনন্য রেকর্ড গড়ে ফেললেন ট্রেভর জেমস মর্গ্যান!
চার রাউন্ডের শেষে ডেম্পো কিন্তু রয়েই গেল লিগ টেবিলের শীষের্। মর্গ্যান টপকাতে পারলেন না আর্মান্দোকে!
গোল নষ্ট না করলে যুবভারতীতে শনিবার ইতিহাস গড়ে ফেলতে পারত ইস্টবেঙ্গল। ডেম্পোর বিরুদ্ধে জিততে পারত ৫-২ গোলে!
মাত্র দশ সেকেন্ডের তিনটে ভুলে দু’টো মূল্যবান পয়েন্ট নষ্ট হল ইস্টবেঙ্গলের! এই পয়েন্ট নষ্টের খেসারত পরে দিতে হতেই পারে লাল-হলুদ জার্সিকে।
ভারতীয় ফুটবলের এল ক্লাসিকো ঘিরে চৌম্বকে উঠে আসা এই সব চমকপ্রদ এবং আকর্ষণীয় তথ্য হঠাৎ-ই পিছনে চলে গিয়েছে ম্যাচের পর। এবং সেটা ছোট্টখাট্টো চেহারার বাঁশি মুখে মাঠে নামা এক ভদ্রলোকের জন্য। অমল দত্ত মাঠে থাকলে বলতেন, “ওই পাঁচ ফুটিয়া লোকটাই যত নষ্টের গোড়া। ওর জন্যই চমৎকার স্ট্র্যাটেজির যুদ্ধটায় চোনা পড়ে গেল।” কিন্তু মণিপুরের রেফারি অজিত মিতাইয়ের জঘন্য রেফারিংয়ের পর দেশের দুই সেরা কোচ-ই সরব হয়েছেন অনেকটা জ্যাংড়ার কোচের ঢঙে। ‘‘ঠান্ডা মাথায় আমাদের খুন করা হয়েছে। পিটার নয়, রেফারিকেই ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার দেওয়া উচিত ছিল,” তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলে দিয়েছেন শান্ত স্বভাবের ডেম্পো কোচ। আর তাঁর দশ মিনিট পর একই চেয়ারে বসে পেশাদার মর্গ্যানের পাল্টা মন্তব্য, “হয়তো পেনাল্টি ছিল। কিন্তু ওদেরও তো তিন-চার জন ফুটবলারকে কার্ড দেখিয়ে বের করে দেওয়া উচিত ছিল রেফারির।”
নাটকের যুবভারতী। রেফারিকে মারছেন ক্লাইম্যাক্সরা (বাঁ দিকে)। পেনাল্টিবক্সে পেনকে ধাক্কা। ছবি: উৎপল সরকার
চার দিন আগে চেলসি-ম্যান ইউ ম্যাচের রেফারি মার্ক ক্যাটেনবার্গের বিরুদ্ধে ফুটবলারদের গালাগালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। ম্যাচের পর তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন চেলসি কোচ দি’মাত্তি-ও। প্রিমিয়ার লিগ আর আই লিগ এক নয়। লন্ডন আর কলকাতাও আলাদা। তাই এ দিন নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর কোচ বা কর্তারা কী বলবেন, তার জন্য অপেক্ষা করেননি ডেম্পো ফুটবলাররা। ইস্টবেঙ্গলের সৌমিক দে নিজেদের বক্সে সুয়েকাকে মেরে ফেলে দেওয়ার পর মাঠেই ক্লাইম্যাক্স, পিটার কার্ভালহো, অ্যান্টনি পেরিরা, কোকোরা চড়াও হয়েছেন রেফারির উপর। ধাক্কাধাক্কি, চড়-চাপড়, হাঁটু দিয়ে পেটে গুতো কিছুই বাদ যায়নি। সতীর্থকে বাঁচাতে এসে মার খেয়েছেন সহকারী রেফারি রিকাহাও বাসুমও। টেকনিক্যাল এরিয়া ছেড়ে মাঠের মধ্যে ঢুকে চিৎকার করেছেন ডেম্পো কোচও। কিন্তু মেরুদণ্ডহীন রেফারিরা তাদের কোনও শাস্তিই দেননি। কিল খেয়ে কিল হজম করেছেন। কারা যে এই সব অযোগ্য রেফারিদের এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পোস্টিং দেয় কে জানে?
পেনাল্টি এবং রেফারি-বিতর্ক বাদ দিলে গোয়া-বাংলার দুই সেরা ক্লাবের ধুন্ধুমার যুদ্ধ কিন্তু সারাক্ষণ বন্দি হয়ে রইল স্ট্র্যাটেজির নানা অঙ্কে। মাত্র এক মাস দু’দিন আগেই শিলিগুড়িতে দেখা হয়েছিল আর্মান্দো আর মর্গ্যানের। ফেড কাপ ফাইনাল জিততে মরিয়া দুই কোচই টিম নিয়ে বোহেমিয়ান হয়েছিলেন। চাল-পাল্টা চালে জমে উঠেছিল সে দিনের কাঞ্চনজঙ্ঘা। এ দিন একেবারেই উল্টো ছবি। অতি সতর্কতায় নিজেদের টিমকে মুড়ে রেখেছিলেন দুজনেই। একটা চাল দেওয়ার পর দীর্ঘ অপেক্ষা। তারপর পাল্টা চাল। নিট ফল, ম্যাচটা কখনও হৃদয়ে দাগ কাটল না। আফসোসের মধ্যেই ডুবে রইল।
আই লিগ চ্যাম্পিয়নদের স্ট্র্যাটেজি গুলিয়ে দিতে প্রথমার্ধটা প্রেসিং ফুটবলকেই হাতিয়ার করলেন মর্গ্যান। ৪-৩-১-২ ফর্মেশনে শুরু করে। রোমিং মিডিও হলেন পেন ওরজি। কখনও মিডিও, কখনও উইঙ্গার, কখনও চিডির সঙ্গে জায়গা বদল করে স্ট্রাইকার। চাপের মুখে ডেম্পো তখন গোল বাঁচাতে ব্যস্ত। আর্মান্দো কখনও যা করেন না তাই করলেন শুরুতেই। ৪-৪-২ এর ‘রাগাশ্রয়ী’ গান ছেড়ে ‘জীবনমুখীতে’ গা ভাসালেন। ছোট দলের কোচেরা যা করেন তাই করলেন। পেনের পিছনে লাগিয়ে দিলেন তাঁর মাঝমাঠের অন্যতম সেরা অস্ত্র পিটার কার্ভালহোকে। ফলে হলটা কী ডেম্পোর বিখ্যাত মাঝমাঠ ছন্দ হারাল। মর্গ্যান তো এটাই চাইছিলেন। মেহতাব আর খাবরাকে দিয়ে তিনি মাঝমাঠটা পকেটে পুরে নিলেন। চিডি-মননদীপের সামনে তখন শুধুই গোল করার বল। চিডির শট পোস্টে লাগল। নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার একটা সহজ সুযোগ হারালেন দুর্বল হেড করে। কোভারম্যান্স ভি ভি আই পি বক্সে বসে আছেন দেখেও দুই জাতীয় দলের ফুটবলার মননদীপ-রবিনরা সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন। এর মধ্যেই প্রথমার্ধের মাঝামাঝি চিডির পেনাল্টি গোল। পেনকে নিজেদের বক্সে ফেলে দিয়েছিলেন মহেশ গাউলি।
মর্গ্যান ব্রিগেডের প্রথমার্ধের দাপট অবশ্য উধাও হয়ে গেল পরের অর্ধে। ডেম্পো তাদের আদি-অনন্তকালের ৪-৪-২ তে ফেরায়। ক্লাইম্যাক্স-পিটাররা মাঝমাঠ দখল নিতে শুরু করলেন। এতক্ষণ বলের অভাবে ঘুমিয়ে থাকা দুই স্ট্রাইকার কোকো আর সুয়েকাও গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন। গোলের গন্ধে তখন চূড়ান্ত আক্রমণাত্মক দুই ডেম্পো। সুয়েকার পেনাল্টি নাকচের পরও তাই ১-১ করে ফেলল গোয়ার অফিস ক্লাব। আব্রাঞ্চেজের কর্নারের পর দু’টো টাচে গোল করে গেলেন কার্ভালহো। মাঝের ছোঁয়াটা ক্রেসন্ত অ্যান্টাওয়ের। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার যেটা তা হল, তিন টাচে বল গোলে ঢোকানোর সময় তিন ডেম্পো ফুটবলারই ছিলেন অরক্ষিত। লাল-হলুদের ব্রিটিশ কোচ ম্যাচের পর আফসোস করে গেলেন, “দশ সেকেন্ডের পরপর তিনটে ভুল আমার দু’পয়েন্ট কেড়ে নিল।”

ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, নওবা, ওপারা, অর্ণব, সৌমিক, ইসফাক (সঞ্জু), পেন, মেহতাব, খাবরা, চিডি, মননদীপ (রবিন)
ডেম্পো: শুভাশিস, ভ্যালেরিয়ান, মহেশ (রাউলসন), ক্রেশান্ত, দেবব্রত, ক্লিফোর্ড (জোয়াকিম), ক্লাইম্যাক্স, পিটার, কোকো (রোহন), সুয়েকা।

রবিরারে আই লিগ ফুটবল
মোহনবাগান: স্পোর্টিং ক্লুব (যুবভারতী ২-০০)
প্রয়াগ ইউনাইটেড: শিলং লাজং (শিলং)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.