সন্ধে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সিএবি-র বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে ফোটোগ্রাফারদের ধাক্কাধাক্কি দেখতে দেখতে বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলে উঠলেন, “মোটামুটি মেরেই এনেছে। রাজস্থান ব্যাটিং তো প্রায় শেষ। বাংলা এর পরেও পয়েন্ট না পেলে আর কবে পাবে?”
ধাক্কাধাক্কি যাঁদের নিয়ে, তাঁরা তখন দাঁড়িয়ে পাশাপাশি। অশোক দিন্দা, অনুষ্টুপ মজুমদার এবং ইরেশ সাক্সেনা। দলীপ জয়ের তিন নায়ক। মুখে আলগা হাসি। কিন্তু তা দেখে ড্রেসিংরুমের চেহারাটা বোঝা যাবে না। সেখানে কিছুটা হলেও ছড়াচ্ছে টেনশন। বাড়ছে রক্তচাপ।
কেন?
হৃষিকেশ কানিতকরের রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন রাজস্থান নয়, বরং রঞ্জির উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলার সামনে সবচেয়ে বড় ‘হার্ডল’ হিসেবে হাজির কলকাতার আবহাওয়া। সারা দিন আকাশের মুখ ভার, কমে আসছে আলো। দিনে খেলা হচ্ছে টেনেটুনে ঘণ্টাচারেক। বারবার বেরিয়ে পড়ছে লাইটমিটার। দু’দিনে ওভার নষ্টের সংখ্যা কত? না, আশি! শনিবার শেষ বিকেলে আবার এক পশলা বৃষ্টিও হয়ে গেল।
বাংলা শিবিরের কেউ কেউ ধরেই নিচ্ছেন, যা পরিস্থিতি তাতে ম্যাচ থেকে পাঁচ পয়েন্ট তোলা মুশকিল। তিন পয়েন্ট বরং অনেকটাই ধরাছোঁয়ার মধ্যে। কারণ ল্যাপটপে দেখে নেওয়া হয়েছে, আগামী দু’দিন ভাল বৃষ্টির সম্ভাবনা। ব্যাটিং ব্যর্থতা পুষিয়ে বাংলার সংসারে দিনের শেষে ‘লক্ষ্মীলাভ’-এর অন্যতম নায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল বলছিলেন, “যা অবস্থা দেখছি, তাতে এক ইনিংসের ম্যাচ হবে। দেড়শোর মধ্যে ওদের শেষ করে দিতে হবে। তিন পয়েন্ট আগে চাই।” |
দুই নায়ক। ছবি: উৎপল সরকার |
আবহাওয়ার খামখেয়ালি মেজাজ সহ্য করতে হচ্ছে বলে, নইলে মনোজদের চাওয়া-পাওয়ার অঙ্কটা পাল্টাতে পারত। ইডেনের পিচে রঞ্জি ম্যাচে শেষ কবে এমন সবুজ আভা দেখা গিয়েছে, তা নিয়ে বিতর্কসভা বসতে পারে। বল উঠছে বুক পর্যন্ত, এক-দেড় হাত সুইং করে ভিতরে ঢুকে ছিটকে দিচ্ছে স্টাম্প। কিংবা এলবিডব্লিউ। সোজা কথায়, পেসারদের পোয়াবারো। যা সামলাতে রঞ্জি চ্যাম্পিয়নরা পর্যন্ত হিমসিম। নইলে আর ২৫৮-র জবাব দিনের শেষে ৬৩-৪ হয়? রাজপুতদের টপ অর্ডার ধুয়েমুছে সাফ। নামীদের মধ্যে পড়ে শুধু অশোক মেনারিয়া (১৩ ন.আ.)। আলো-বিভ্রাটের ‘এপিসোড’ লাগাতার না চললে বলে দেওয়া যেত, ম্যাচে একটা জিনিসই ঘটছে। হয় এস্পার, নয় ওস্পার। আর এ দিন খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত তো ‘অ্যাডভান্টেজ’ বাংলাই ছিল। পাঁচ পয়েন্টের উপর বাজি ধরলেও তখন খুব ভুল হত কি?
আর এর পর থেকে সৌরভ সরকারের উপর বাজি ধরলেও সম্ভবত ঠকতে হবে না। হালফিলে বাংলা ক্রিকেটে সবচেয়ে ‘আন্ডাররেটেড’ পেসার হিসেবে যাঁর নামটা সবার আগে আসে। আজ পর্যন্ত রঞ্জির কুড়িটা ম্যাচে উইকেটসংখ্যা ৭২। উইকেটপিছু খরচ পঁচিশ রান। গত মরসুমে রঞ্জিতে মাত্র একটা ম্যাচ খেলেছিলেন। তাতেই পাঁচ উইকেট। কিন্তু তবু দলে তাঁর বার্থ ‘রিজার্ভড’ নয়। এই ম্যাচেও সামি আহমেদ খেললে তাঁর ড্রেসিংরুমে বসার কথা। বাংলার মিডল ও লোয়ার অর্ডারের কাঁপুনি (৭১ রানে শেষ ৬ উইকেট চলে যায়, ব্যতিক্রম শুধু ঋদ্ধিমানের ৫৯) যে দু’জন আজ বল হাতে সামাল দিলেন, তাঁদের একজন সৌরভ। যাঁর বোলিং দেখতে ইডেনে এসেছেন পূর্বাঞ্চল নির্বাচক সাবা করিম, সেই অশোক দিন্দা এ দিন উইকেট পেলেন না। কিন্তু সৌরভের (২-২৬) ইনসুইংয়ে পরের পর উইকেট পড়তে থাকে। লক্ষ্মী এসে বাকিটা করলেন। বিজয় হাজারের ফাইনাল থেকেই বোলার লক্ষ্মীকে চেনা মেজাজে দেখা যাচ্ছে। এ দিনের হিসেব: ৬ ওভারের অর্ধেক মেডেন, মাত্র সাত রান দিয়ে দু’উইকেট।
তবে এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, ‘ট্রেলর’ মাত্র। কাজ এখনও বাকি। রবিবার বাংলা বোলিংয়ের শো ফ্লপ হলে এই ট্রেলর আর ক’জন মনে রাখবেন? |
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ২৫৮ (শুভময় ৯৫, ঋদ্ধিমান ৫৯)
রাজস্থান ৬৩-৪ (লক্ষ্মী ২-৭, সৌরভ ২-২৬) |
উইকেট পেলেন না জাহির, চোট সহবাগের
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অজিঙ্ক রাহানে (১২৯) এবং অভিষেক নায়ারের (১০৭) জোড়া সেঞ্চুরিতে রেলওয়েজের বিরুদ্ধে ৫৭০ তুলল মুম্বই। তবে এ দিন বল হাতে স্বচ্ছন্দ দেখাল না জাহির খানকে। প্রথম স্পেলে পাঁচ ওভারে ১১। দ্বিতীয় স্পেলে চার ওভারে দুটো মেডেন। তবে উইকেট পেলেন না। দ্বিতীয় দিনের শেষে রেল ৮৬-২। এ দিকে, সহবাগের দিল্লির বিরুদ্ধে ভাল জায়গায় মহম্মদ কাইফের উত্তরপ্রদেশ। দিল্লির প্রথম ইনিংসে ২৩৫ রানের জবাবে কাইফরা প্রথম ইনিংসে আপাতত ২৯২-৬। মুরলী ডাগর (১১৬) এবং কাইফকে (৯১) আটকাতে পারেননি ইশান্ত শর্মা (২-৬৩) এবং আশিস নেহরা (০-৬৪)। স্লিপে ফিল্ডিং করার সময় আঙুলে চোটও পেলেন সহবাগ। তবে গুরুতর নয়। অন্য ম্যাচে ভিভিএস লক্ষ্মণের হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে জোড়া সেঞ্চুরি করলেন পঞ্জাবের দুই ওপেনার জিয়ানজোৎ সিংহ (১১৬) ও করণ গোয়েল (১০৬)। হায়দরাবাদের প্রথম ইনিংসে ২৫৮-র জবাবে পঞ্জাব আপাতত ২৪৩-০। গুজরাতের ৩৫৫-র জবাবে মধ্যপ্রদেশ ২১২-৮। গুজরাতের পেসার আনন্দ রাজন ৭-৭৭। অন্য দিকে মুম্বই ‘এ’-র বিরুদ্ধে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে ভাল জায়গায় ইংল্যান্ড। জনি বেয়ারস্টো (১১৮) ও ইয়ন মর্গ্যানের ৭৬-র সুবাদে ইংল্যান্ড ৩৩৮-৬। |