মুম্বইয়ে আগাম দেওয়ালি এনে দিলেন সচিন
“সচিন আলা রে”! একটা কালো গাড়ি দেখেই রব উঠল ওয়াংখেড়ের প্রধান ফটকের সামনে অপেক্ষারত একঝাঁক জনতার মধ্যে থেকে। সে গাড়ি যে সচিনের নয়, তা বোঝার পরই নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি। পরে যখন সত্যিই বেরোল সচিনের বাহন, তখন ক্রিকেটের ঈশ্বরকে এক ঝলক দেখার জন্য সে কী আর্তি, কী আগ্রহ। কিন্তু আগের দিন ওয়াংখেড়ে থেকে বেরোনোর সময় তো এত সচিনপ্রেমী দেখা যায়নি। শুক্রবারের সেঞ্চুরিই কি চুম্বকের মতো টেনে আনল এত মানুষকে?
এক রঞ্জি সেঞ্চুরিতেই চুপ সারা ক্রিকেট দুনিয়া। চাঙ্গা মুম্বই। যাঁরা এত দিন ধরে তাঁর ‘ভালর জন্য’ অবসরের হয়ে সওয়াল করছিলেন, তাঁরাও যখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন, তখন সুনীল গাওস্কর কিন্তু সেই সোজা-সাপটাই। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে বারবার সচিনের স্টাম্প ছিটকে যাওয়ার দৃশ্য দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এত দিন পর রঞ্জি ম্যাচে সচিনের রান পাওয়ার খবরে বরং স্বস্তিবোধ করছেন।
শনিবার মুম্বইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে তাঁরই সম্মানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সানি যখন বললেন, “রঞ্জিতে সচিনের রান পাওয়াটা তো ভাল ইঙ্গিত”, তখন একটু অবাক হতে হল বইকী। তাঁর ব্যাখ্যা, “ওর মতো খাটিয়ে আর চিন্তাশীল ক্রিকেটার সার্কিটে ক’জন আছে? কেন বারবার বোল্ড হচ্ছে, কোথায় ভুল হচ্ছে, এ সব ভাবার যথেষ্ট সময় পেয়েছে। এই ক’দিনে পরিশ্রমও করেছে প্রচুর। এই সেঞ্চুরিটা সেই পরিশ্রমেরই ফসল।”
সুনীল গাওস্করের বলা কথাগুলোর মধ্যেই যেন ঢুকে পড়ল টেস্টে প্রথম একশো উইকেট পাওয়া ভারতীয় পেসার কারসন ঘাউড়ির কয়েকটা কথা। প্রিয় বন্ধুর কথার রেশ ধরেই এ দিন বান্দ্রা-কুরলা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে বোর্ডের অ্যাকাডেমিতে দাঁড়িয়ে বললেন, “আমি তো এখানে রোজ আসি, অ্যাকাডেমির ছেলেদের ট্রেনিং করানোর জন্য। সচিন এখানে যে ক’দিন প্র্যাকটিস করেছে, দেখেছি কী পরিশ্রমটাই না ও করত। আর যা করত একেবারে ছকে নিয়ে আসত। ক্রিকেট থেকে সব পাওয়া হয়ে গিয়েছে যার, তার এত মোটিভশন আসে কোথা থেকে কে জানে।”
কিন্তু সানি যে বলেছিলেন বয়সের ভারে সচিনের ফুটওয়ার্ক মন্থর হয়ে গিয়েছে? সে কথা তাঁকে মনে করিয়ে দিতে তিনি বললেন, “সেটা মরসুমের প্রথম দিক। কেউ কেউ একটু মন্থর থাকতেই পারে। ভারতীয় ক্রিকেটাররা সাধারণত যা পায় না, সেই দু’মাসের ছুটির পর তারা তখন মাঠে ফিরেছিল। তার পরে নিজের খেলার ভিডিও দেখে সচিন নিজেকে শুধরে নিয়েছে। এর মধ্যে কোনও বিতর্ক নেই। তবে এখন দেখতে হবে টেস্টে ও কেমন রান পায়। আশা করি পাবে। এই সেঞ্চুরিতেই তার ইঙ্গিত রয়েছে।”
অমিতাভ বচ্চনের টুইট
(শনিবার মুম্বইয়ে একটি বিদেশি ঘড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থার অনুষ্ঠানে)
আমার খুব প্রিয় বন্ধু এবং ক্রীড়াজগতের আইকন সুনীল গাওস্করকে সংবর্ধনা দিতে পেরে গর্বিত। ভারতবর্ষের এক অনন্য সন্তান। চিরকালের মত সেই আমুদে মেজাজেই পেলাম গাওস্করকে। এমন নকল করছিল যে আমরা সবাই হেসে গড়িয়ে পড়ছিলাম...
সুনীল গাওস্কর
ওর মতো খাটিয়ে আর চিন্তাশীল ক্রিকেটার সার্কিটে ক’জন আছে? কেন বারবার বোল্ড হচ্ছে, এ সব ভাবার যথেষ্ট সময় পেয়েছে। পরিশ্রমও করেছে। সেঞ্চুরিটা সেই পরিশ্রমেরই ফসল।
সচিনের শহরে এসে আগের রাতেও প্রায় একই কথা বলে গিয়েছেন আর এক প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “ইংল্যান্ডে গিয়ে সচিন ভাল খেলতে পারেনি, কারণ, তখন ও ক্রিকেটের মধ্যে ছিল না। যথেষ্ট প্র্যাক্টিস হয়নি সে বার। এ বার তো আর তা নয়। এবার ইংল্যান্ডের কাছে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে সচিন।”
শনিবারের বারেবলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মুম্বইয়ের ক্রিকেট মহলের আনাচে কানাচে ঘুরে ও খোঁজখবর নিয়ে যে ছবিটা সামনে এল, সেটা বেশ স্পষ্ট। দেওয়ালির ছুটি কাটানোর পর মায়ানগরী ফের আলোর উৎসব পালন করতে চায় ওয়াংখেড়েতে। সে জন্য চাই সচিনের শুক্রবারের ইনিংসের অ্যাকশন রিপ্লে। মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার সচিব নীতিন দালাল তো বলেই দিলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই আমার কাছে পাসের জন্য ঘন ঘন অনুরোধ আসতে শুরু করেছে। এ বার মনে হচ্ছে ওয়াংখেড়ে ফাঁকা থাকবে না।” ২৩ থেকে ২৪ নভেম্বরের এই টেস্টই সচিনের ওয়াংখেড়েতে সচিনের শেষ টেস্ট কি না জানা নেই, তবে এমনটা হোক তা চার্চগেট থেকে ভিরার-- সারা মুম্বইয়ের কেউই চান না।
চান না রমাকান্ত আচরেকরও। রোজকার মতো শনিবারও দাদারে শিবাজি পার্কের পাশেই ক্রিকেটের ভগবানের কারিগরের বাড়িতে খবরের কাগজ এসেছে। তবে অনেক দিন বাদে কাগজ পড়ে শোনানোর পর তাঁকে অনেক খুশি লাগল বলে জানালেন কন্যা কল্পনা। বললেন, “সচিনের সব খবরই বাবাকে দিতে হবে। এই তো গণপতিতে (গণেশ উৎসব) সচিনের আমন্ত্রণে বাবাকে নিয়ে গিয়েছিলাম ওর বাড়িতে। সেখানে প্রিয় ছাত্রকে কত আশীর্বাদ, আদর করলেন। আমার তো মনে হয় না, সচিনের রানের খরায় বাবা অখুশি। কারণ, উনি তো সচিনকে জানেন। জানতেন, ও ঠিক রানে ফিরে আসবে।” এই কথাগুলো অবশ্য আচরেকর স্যরের মুখ থেকে শোনার উপায় নেই। কারণ, ‘প্যারালিসিস’ তাঁর কথা বলার শক্তিটুকুও কেড়ে নিয়েছে।
অসুস্থ হলেও ওয়াংখেড়েতে গিয়ে খেলা দেখার ক্ষমতা রয়েছে বিলেতে গিয়ে সাহেবদের টেস্ট সিরিজ হারিয়ে আসা প্রথম ভারতীয় দলের অধিনায়ক অজিত ওয়াড়েকরের। যাবেনও। বললেন, “কেন যাব না। ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট আমার কাছে সবসময়ই স্পেশাল। তা ছাড়া এবার সচিনের ব্যাটিং দেখার জন্যও যেতে হবে। শনিবারের সেঞ্চুরিটা আমি দেখিনি। তবে কাগজে যা পড়লাম, তাতে মনে হল আগের সচিনই ফিরে এসেছে। নিজেকে ফেরানোর জন্য প্রচুর খেটেছে ও। তার ফল পাবেই। আমি নিশ্চিত, ইংল্যান্ড ওকে সামলাতে হিমশিম খাবে।”
ভারতীয় দলের দুই প্রাক্তন উইকেটকিপার চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত ও কিরণ মোরেরও এই নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই যে, রঞ্জির ১৭ নম্বর সেঞ্চুরিতে কুকদের জন্য রয়েছে অশনিসঙ্কেত। তাঁদের বক্তব্য, “ইয়ে তো পেহলি ঝাঁকি হ্যায়, পুরা পিকচার আভি বাকি হ্যায়।” মানে, এ তো সবে ট্রেলার, এখনও পুরো ছবি বাকি। সারা মুম্বইও এখন বলছে সে কথা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.