|
|
|
|
শর্মিলার অনশনের এক যুগ |
আফস্পা উঠলে তবে মেয়ের সঙ্গে দেখা করব, পণ মায়ের |
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
তাঁর সুদীর্ঘ লড়াইয়ের সম্মানে জীবিত অবস্থাতেই শর্মিলা চানুর নামে চালু হল স্কলারশিপ। এই নভেম্বরের ৪ তারিখ কেন্দ্রের অস্বস্তি বাড়িয়ে মণিপুরের ইরোম শর্মিলা চানু-র অনশন আন্দোলনের ১২ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে তাঁর নামে স্কলারশিপ শুরু করেছে মহারাষ্ট্রের পুণে বিশ্ববিদ্যালয়-অনুমোদিত চারটি কলেজ। চল্লিশ বছরের শর্মিলার বয়সের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রথম বছর এই স্কলারশিপ পাচ্ছেন পুণেতে পড়তে আসা ৪০ জন মণিপুরি ছাত্রী।
উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন বা ‘আফস্পা’ প্রত্যাহারের দাবিতে ১২ বছর অনশন চালাচ্ছেন শর্মিলা। জোর করে তাঁর নাকে নল গুঁজে শরীরে খাবার ঢোকানো হচ্ছে। ইম্ফলের কোঙ্গপাল কোঙ্গহাম লেইকাই এলাকায় জওহরলাল নেহরু হাসপাতালের এক তলার কেবিনে নাকে নল আটকানো শর্মিলা ওই ভাবেই লড়াই চালাচ্ছেন। |
|
|
শর্মিলা চানু |
মা সখীদেবী |
|
শর্মিলার বড় ভাই ইরোম সিংহজিতের এখনও স্পষ্ট মনে আছে বারো বছর আগের দিনটার কথা। ২০০০ সালের ২ নভেম্বর। ইম্ফলে তাঁদের বাড়ি থেকে একটু দূরে মালোম-এ অসম রাইফেলস-এর গুলিতে প্রাণ হারান ১০ জন। তার মধ্যে ১৭ বছরের এক কিশোরও ছিল। প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে। সিংহজিতের কথায়, “বৃহস্পতিবার ছিল। সে দিন শর্মিলা কিছু খেল না। পরদিন রাতে একটু মিষ্টি আর পেস্ট্রি খেল। তার পর বাড়ির সবাইকে ডেকে, মাকে প্রণাম করে আন্দোলন শুরু করার কথা বলল।” ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হল অনশন। “এটা সম্পূর্ণ ওর সিদ্ধান্ত। নয় ভাইবোনের মধ্যে ও-ই সবচেয়ে ছোট।” সিংহজিত বলে চলেন, “শর্মিলা আমাদের সঙ্গে বেশি দেখা করতে চায় না। বাড়ির লোকেদের কথা, মায়ের কথাও জিজ্ঞাসা করে না। হয়তো ভাবে মন দুর্বল হয়ে যেতে পারে।” শেষ দেখা হয়েছিল ৯ অক্টোবর। “ওকে বলা হয়নি যে, আমাদের বাহাত্তর বছরের মা-ও একটা সমান্তরাল আন্দোলন চালাচ্ছেন।”
কী আন্দোলন করছেন শর্মিলার মা? গত ১২ বছর ভাত খাননি। দু’বছর হল শর্মিলার সঙ্গে দেখা করাও বন্ধ করেছেন সখীদেবী। এ বছর এক বার অসুস্থ অবস্থায় জওহরলাল নেহরু হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন। গভীর রাতে যখন ঘুমিয়ে ছিলেন তখন নিঃশব্দে দেখে যান শর্মিলা। সখীদেবী জানতে পারেননি, কথাও হয়নি। মায়ের পণ, যখন সরকার ‘আফস্পা’ প্রত্যাহার করবে, সে দিন দেখা করবেন মেয়ের সঙ্গে। তাঁর হাত থেকেই খাবেন ভাত। এক যুগ পার করে সেই প্রতীক্ষাতেই এখনও ইম্ফলের রাস্তায় ‘আফস্পা’-বিরোধী মিছিলে পা মিলিয়ে স্লোগান তোলেন বাহাত্তর পেরোনো বৃদ্ধা।
কিন্তু যে আন্দোলনকে হাসপাতালের চার দেওয়ালে বন্ধ রাখতে প্রশাসনের তরফে চেষ্টার কসুর নেই, তার আঁচ মহারাষ্ট্রের এক শহরে গিয়ে পড়ল কী করে? সিংহজিতের বক্তব্য, “পুণেতে প্রতি বছর অসংখ্য মণিপুরি ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যায়। এই সুতো ধরেই শর্মিলার লড়াইয়ের কথা ওখানে ছড়িয়েছে।” বছরখানেক আগে পুণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে শর্মিলার নামে একটি স্কলারশিপ চালু করতে চাওয়ার আবেদন রাখে দেশের সীমান্ত এলাকার মানুষদের নিয়ে কাজ করা একটি সর্বভারতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কেন? সংগঠনের তরফে সঞ্জয় নাহারের উত্তর, “শর্মিলার আন্দোলনের ১২ বছর পূর্ণ হওয়ার মুহূর্তকে স্মরণীয় রাখতে, সবাইকে শর্মিলা সম্পকের্র্ ওয়াকিবহাল করতেই এই প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।” সরকারি অনুমোদন পাওয়া সহজ ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র ও মহারাষ্ট্র সরকারের অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। উপাচার্য বাসুদেব গার্দে বলেন, “অগস্ট মাস নাগাদ অনেক কষ্টে ছাড়পত্র জোগাড় করা গেল। তখনই দক্ষিণের কয়েকটা রাজ্যের পাশাপাশি পুণেতেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলা শুরু হল। ফলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।” কিন্তু সফল হওয়া গিয়েছে অবশেষে। চারটি কলেজে শর্মিলার নামে স্কলারশিপের টাকায় পড়াশোনা করবেন মণিপুরের ছাত্রীরা।
|
—নিজস্ব চিত্র |
|
|
|
|
|