|
|
|
|
কাজ হবে পরে, আগে বাস্তু-জোরে বাঁচুক কুর্সি |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
ইলেকট্রনিক্সে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রি আছে তাঁর। ফিলাডেলফিয়া থেকে এমবিএ-ও করেছেন। এ হেন মানুষটির কাঁধে দেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন মনমোহন সিংহ।
মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে পাল্টে স্রেফ শিক্ষা মন্ত্রক করে দেওয়া হবে কি না, সেই চর্চা চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। মুরলীমনোহর জোশী, অর্জুন সিংহ, কপিল সিব্বলদের উত্তরসূরি এম এম পাল্লাম রাজুর সামনে তাই চ্যালেঞ্জটা বেশ জোরদার। কিন্তু সরকারি ভাবে সে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার আগে ইঞ্জিনিয়ার-শিক্ষামন্ত্রী তাঁর অফিসে আক্ষরিক অর্থে যে কর্মযজ্ঞ ঘটালেন, তার কিন্তু জুড়ি মেলা ভার!
দায়িত্ব নেওয়ার আগে শাস্ত্রী ভবনের দফতরে জাঁকজমক করে যজ্ঞ করলেন রাজু। গোটা অফিসঘর থেকে শুরু করে চেয়ারটা পর্যন্তও পুজো করলেন। এ জন্য তিরুপতি থেকে উড়িয়ে এনেছিলেন পূজারীকে। তাঁর আসার আগে দফতরের বাইরে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল সার সার নারকোল। সেই নারকোল ফাটিয়ে তার পর ঘরে পদার্পণ! পুজোর পর যে লাড্ডু বিতরণ করা হল, সেটিও আনা হয়েছে তিরুপতি থেকে।
মন্ত্রকে পা রাখার আগে বাস্তুমতে চেয়ার-টেবিলের অভিমুখও বদলে ফেলেছেন রাজু। বাস্তুমতে নাকি শক্তির কেন্দ্র উত্তর-পূর্বে। সেই হিসেব মেনেই অদলবদল হয়েছে আসবাব। শুধু তা-ই নয়, দায়িত্ব নেওয়ার পর সই করতে কালো রঙের কলমও ব্যবহার করেননি। পাছে অশুভ বার্তা আসে! |
|
|
|
পাল্লাম রাজু |
চন্দ্রেশ কুমারী |
চিরঞ্জীবী |
|
নিজের নিজের বিশ্বাস-আস্থার বহিঃপ্রকাশ অবশ্য রাজনীতিকদের মধ্যে নতুন নয়। অনেকেই অল্পবিস্তর কিছু না কিছু করে থাকেন। লালকৃষ্ণ আডবাণী যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন, নর্থ ব্লকে পুজোআর্চা করে এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী। এমনকী প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে ঢোকার আগেও ঘটা করে গৃহপ্রবেশ করা হয়েছে। রাজনাথ সিংহ যখন বিজেপি সভাপতি হন, তখন অশোক রোডে দলের সদর দফতরের খোলনলচে বদলে ফেলেন। তাঁরই দলের বর্ষীয়ান নেতা, কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা আবার জ্যোতিষীর কথা মেনে শপথগ্রহণই পিছিয়ে দিয়েছিলেন।
বদল ও বিলম্বের সেই রেওয়াজ জারি রয়েছে রদবদল পরবর্তী মনমোহন মন্ত্রিসভাতেও। সেখানেও অনেক নতুন মন্ত্রী পালন করেছেন জ্যোতিষীর নির্দেশ। কী রকম?
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিংহের শপথ নেওয়ার কথা ছিল দুপুর দেড়টায়। তিনি আসেন ঝাড়া এক ঘণ্টা পরে। ওই সময়টিই নাকি শুভ। নতুন আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার তাঁর মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েছেন পূর্বনির্ধারিত সময়ের পঁয়তাল্লিশ মিনিট দেরিতে। দক্ষিণী সুপারস্টার চিরঞ্জীবী শুভ মুহূর্ত দেখে শপথের চার দিন পর, ১ নভেম্বর মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েছেন। জোধপুরের রাজবাড়ির কন্যা তথা নতুন সংস্কৃতি মন্ত্রী চন্দ্রেশ কুমারী আবার মন্ত্রকের ভারই নেননি। তিনি এখনও অপেক্ষায়। কখন শুভক্ষণ আসে! এ দিকে অজয় মাকেন নতুন মন্ত্রকে গিয়েও আসবাব বদলের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। জানা গেল, শাস্ত্রী ভবনে প্রথম পা রাখার সময়ে মন্ত্রী কুমারী শৈলজাও বাস্তুমতে সব আসবাব বদলেছিলেন। গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী প্রদীপ জৈন আরও এক ধাপ উপরে। তিনি অফিসের জন্য একটি ছোট ঝর্না নিয়ে এসেছিলেন, যাতে তার কম্পন শুভ বার্তা আনে। পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলছিলেন, “পুজো-আর্চা না হয় মন্ত্রীদের নিজস্ব বিশ্বাস। কিন্তু তাঁদের মধ্যে এখন যে ভাবে বাস্তুমতে দফতর সাজানোর চল শুরু হয়েছে, তাতে আমরা আমাদের অফিসারদেরও নিয়মিত বাস্তুর প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।”
তবে এই সমস্ত উদাহরণকেই নতুন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী যে ভাবে ছাপিয়ে গিয়েছেন, সেটাই নজর কেড়েছে রাজধানীর অলিন্দে। মন্ত্রকে তাঁর কোনও পূর্বসূরিরও এমন নজির নেই। অর্জুন সিংহ বা তাঁর চেয়েও বেশি কপিল সিব্বলের বিরুদ্ধে দেশের প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ উঠেছিল। এনডিএ জমানায় শিক্ষার গৈরিকীকরণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল মুরলীমনোহর জোশীর বিরুদ্ধে। প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হওয়া রাজু সেই মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়ে নৈতিক শিক্ষায় জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন তো থেকেই যায় দফতরের আসবাবের অভিমুখ ঘোরালেও তিনি সত্যিই কি পারবেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দিশা বদলাতে? |
|
|
|
|
|