ভোট-ভাবনায় আজ আক্রমণে কংগ্রেস
রামলীলাই বলুক রাহুল চাই, চান সনিয়া
লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে আর আত্মরক্ষার চেষ্টা নয়, এ বার আক্রমণে আগ্রাসী হচ্ছে কংগ্রেস। সংস্কারে গতি আনা, সরকারের মুখ বদলের পরে এ বার দলকে সেই সুরে বাঁধতে চান সনিয়া গাঁধী। আপাতত নিজে সভাপতি পদে থাকলেও দলের লড়াইয়ে রাহুলকে সামনে তুলে আনতে চাইছেন তিনি। আগামিকাল রামলীলা ময়দানের সভা থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর এই লড়াইয়ের সাংগঠনিক পর্বটি শুরু করতে চায় কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।
ফলে সভার মুখ্য উদ্দেশ্য দু’টি। এক, রাহুলের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা। দুই, শক্তি প্রদর্শন ও কড়া ভাষায় বিরোধীদের জবাব দিয়ে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের মনোবল বাড়ানো। কালকের কর্মসূচিকে তাই নিছক দিল্লির এক জনসভার তকমায় বেঁধে রাখা হয়নি। সারা দেশ থেকে ডাকা হয়েছে দলের প্রদেশ, জেলা, এমনকী ব্লক স্তরের নেতাদেরও।
যদিও গোড়ায় এই সভার উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে যখন রাজনৈতিক উত্তাপ গনগনে, তখন সরকারের পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর উদ্দেশ্যে এই সমাবেশের কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু বদলে গিয়েছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তৃণমূল সমর্থন তুলে নেওয়ায় খাতায়-কলমে সরকার এখন সংখ্যালঘু। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০১৪ সালে লোকসভা ভোট হওয়ার কথা। কিন্তু সব যে ঠিক নেই কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও তা টের পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। দলের নেতারা মুখে যা-ই বলুন, অন্তর্বর্তী নির্বাচনের আশঙ্কা রয়েছেই। সেই কারণেই বিলম্ব করতে চাইছেন না সনিয়া। লোকসভা ভোটের লড়াই শুরু করে দিতে চাইছেন এখন থেকেই।
কড়া পাহারায় চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। শনিবার রামলীলা ময়দানে। ছবি: পি টি আই
সেই লড়াইয়ের প্রথম ধাপ দলের নেতৃত্বে রাহুল গাঁধীর আনুষ্ঠানিক অভিষেক। এমনিতে কংগ্রেস পরিবারে সনিয়ার পরই রাহুলের যে মর্যাদা ও স্থান, তা নিয়ে দলে চ্যালেঞ্জ ঠোকার কেউ নেই। তবু গাঁধী পরিবার দলের মাথায় রাহুলকে চাপিয়ে দিতে চাইছে, এমনটা মনে হোক, সেটা চান না সনিয়া। বরং তিনি চাইছেন, কাল রামলীলার ময়দান থেকেই সেই দাবি উঠুক। তার পর সেই দাবিতে সায় দিয়ে অচিরেই রাজনৈতিক মর্যাদা বাড়ানো হবে রাহুলের। মন্ত্রিসভায় রাহুল ব্রিগেডের প্রভাব বেড়েছে ইতিমধ্যেই। এর পর দলেও নবীন প্রজন্মকে নিয়ে তাঁর নতুন টিম সাজাবেন রাহুল।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, কালকের সভায় সনিয়া নবীন প্রজন্মের কথা বলবেন। সেই সঙ্গে আক্রমণ শানাবেন বিজেপি তথা বিরোধীদের উদ্দেশে। বলবেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার যে নজির রেখেছে কংগ্রেস, তা বিজেপি-র নেই। উল্টে বিজেপি এমন একটি রাজনৈতিক দল, যার এক প্রাক্তন সভাপতি দুর্নীতির দায়ে হাজতবাস করছেন। অভিযোগ উঠছে বর্তমান সভাপতির বিরুদ্ধেও। দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল জোগাতে সনিয়া এ-ও জানাবেন, কংগ্রেসের রক্ষণাত্মক হওয়ার কোনও কারণ নেই। ইউপিএ-র গত সাড়ে আট বছরের সাফল্য কিছু কম নয়। তা সে একশো দিনের কাজ হোক বা, তথ্য বা শিক্ষার অধিকারের মতো আইন পাশ। সব থেকে বড় কথা, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ বাতাবরণ গত সাড়ে আট বছর ধরে অটুট রেখেছে কংগ্রেস।
বস্তুত, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শুরু থেকেই পরের পর দুর্নীতির অভিযোগের মুখে পড়ে কংগ্রেস রক্ষণাত্মক অবস্থান নিয়ে চলছিল। কিন্তু তাতে লাভ তো হচ্ছেই না, উল্টে দুর্নীতির দাগ চেপে বসছে বুঝে সেই মনোভাব হালে ঝেড়ে ফেলেছেন সনিয়া। সংস্কারই হোক বা রাজনীতির ময়দান, কংগ্রেস এখন তাই ঢের বেশি আক্রমণাত্মক। সলমন খুরশিদের বিরুদ্ধে অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা অভিযোগ তোলা সত্ত্বেও তাঁকেই বিদেশমন্ত্রী করে ইতিমধ্যেই সেই বার্তা দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি। কালকের সভায় কংগ্রেস যে আক্রমণের সুর আরও চড়াতে চাইবে সংশয় নেই।
সনিয়ার পাশাপাশি মনমোহন সিংহ ও রাহুল বক্তৃতা দেবেন রামলীলা ময়দানের এই সমাবেশে। অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি, ভর্তুকি কমানোর মতো সংস্কার যে জরুরি ছিল, তা তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী। আর রাহুলের অগ্রাধিকার থাকবে আম-আদমির সামাজিক সুরক্ষার ওপর। সব মিলিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির নিরিখে কংগ্রেসের কাছে আগামিকালের এই সভার গুরুত্ব অপরিসীম। আর তাই শক্তি প্রদর্শনের জন্য চেষ্টায় কোনও খামতি রাখতে চাইছেন না কংগ্রেসের রাজনৈতিক ম্যানেজাররা।
বাস্তবে তা কতটা ফল দেবে, সেটা অবশ্য সময়ই বলবে। ২০০৯-এ গত লোকসভা ভোটের বছর দেড়েক আগে এই রামলীলা ময়দানেই শেষ বার সমাবেশ করেছিলেন সনিয়া-মনমোহন। ৭০ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋ
ণ মকুব ও একশো দিনের কাজ প্রকল্প রূপায়ণ করে কংগ্রেস তখন রাজনৈতিক ভাবে টগবগ করছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে বিস্তর। খাদ্য সুরক্ষার মতো নতুন সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণ দূর-স্থান, আর্থিক সঙ্কট জনমোহিনী রাজনীতির পথে বড় অন্তরায় হয়ে উঠেছে। উপরন্তু আর্থিক সংস্কারের জেরে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় জনমনে যে কিছুটা ক্ষত তৈরি হয়েছে, সেটা কংগ্রেস নেতৃত্ব তা জানেন। ফলে এ বারের পরীক্ষাটা সব দিক দিয়েই কঠিন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.