নিষিদ্ধপল্লি থেকে চিত্রাঙ্গদা, ‘আমিও ফেলনা নই’
ঞ্চের চড়া মেক-আপে হারানো মেয়েকে দেখে প্রথমটা চিনতেই পারেননি কমলারঙা ছাপা শাড়ির গ্রাম্য মহিলা। দর্শকাসনে কোনও মতে কুঁকড়ে বসেছিলেন তিনি।
একটু বাদেই চোখের জলে ঝাপসা হয়ে এল দৃষ্টিপথ। ঘোমটায় চোখ মুছে পাশে বসা ছোট মেয়েটার হাত ধরে বলে উঠলেন, “দেখেছিস, তোর দিদি কেমন সুন্দর নাচে!”
শুক্রবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্রসদনের মঞ্চে তখন চলছে চিত্রাঙ্গদা। সে আর নতুন কথা কী? বছরে কতবারই তো রবীন্দ্রসদনে চিত্রাঙ্গদা, শ্যামা বা শাপমোচন হয়ে থাকে। কিন্তু অস্বীকার করে উপায় নেই, দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক অজ গাঁয়ের বধূ রবীন্দ্রসদনে বসে মেয়ের অনুষ্ঠান দেখে বিহ্বল এ দৃশ্য সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না।
পাচারচক্রের ফাঁদে পরিবার থেকে ছিটকে যাওয়া ২০ জন নাবালিকাকে নিয়ে চিত্রাঙ্গদা মঞ্চস্থ করল সিআইডি এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। অন্ধকার-জীবন থেকে তাদের উদ্ধার করেছে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ। এ দিনই ছিল তাদের প্রথম অনুষ্ঠান।
মেয়েদের এমন বেশে দেখে মুগ্ধ মা-বাবাও। অনুষ্ঠান শেষ হতেই তড়াক করে লাফিয়ে উঠে সাজঘরের দিকে ছুটলেন আটপৌরে গ্রাম্য মহিলা। এক ঝাঁক সুবেশা কিশোরীর ভিড়ে খুঁজে নিলেন নিজের মেয়েকে, এত ক্ষণ যাকে চিত্রাঙ্গদার সখীবেশে মুগ্ধ চোখে দেখছিলেন। মা-মেয়ের চোখের জলে মুছে গেল বহু বছরের জমাট-বাঁধা অভিমান।
চিত্রাঙ্গদার আসরে নজরকাড়া ওই কিশোরীটির ছোটবেলাটা কিন্তু আর পাঁচটা বাচ্চার মতো ছিল না। পড়ার বই, গানের স্কুল, নাচের ক্লাস বা কম্পিউটারের তালিমে ছকে-বাঁধা শৈশবের বাইরে দারিদ্র আর বঞ্চনার আখ্যান। চোরাপথের বাঁকে ছিটকে যাওয়া বাংলার গ্রাম্য কিশোরীটির ঠাঁই হয়েছিল দিল্লির নিষিদ্ধপল্লিতে। রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতায় অন্ধকার-জীবন থেকে মুক্তি মিললেও পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচেনি। মেয়েকে ফিরিয়ে নিতে দরিদ্র মা-বাবার দ্বিধা ছিল যথেষ্টই। মেয়েও বাড়ি ফিরতে চায়নি। বরং ক’দিন আগে চিত্রাঙ্গদার মহড়ার সময়ে যন্ত্রণা-মেশা গলায় সেই মেয়েই বলেছিল, “একদিন মা-বাবাকে বুঝিয়ে দেব, আমি সত্যিই ফেলনা নই।”
নিরক্ষর মা গুছিয়ে কথা বলতে পারেন না। কিন্তু চোখের ভাষাই বলে দিচ্ছিল, মেয়ের গর্বে তাঁর বুকটা ভরে উঠেছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের এক সরকারি কর্মীর মেয়েও নিজের বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন বেশ কয়েক বছর। তাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। উদ্ধারের সময়ে তার কোলে ছিল একটা একরত্তি শিশু। প্রথমটা মেয়ের এই পরিণতি মানতে পারছিলেন না বাবা। অনুষ্ঠান শেষে দেখা গেল সেই বাবার চোখেই জল। বললেন, “এখন বুঝছি, জীবন অনেক বড়। মেয়েকে আমার কাছেই রাখতে চাই। আদালতে আবেদন করব।”
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নাচের শিক্ষিকা সঞ্চয়িতা হালদার ও সিআইডি ইনস্পেক্টর শর্বরী ভট্টাচার্যও। অর্জুনের চরিত্রে ছিলেন অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং শাখার ওসি শর্বরী। আর সোনাগাছি থেকে উদ্ধার হওয়া ভিনরাজ্যের এক নাবালিকা হয়েছিল সুরূপা চিত্রাঙ্গদা। ডিজি, সিআইডি ভি ভি থাম্বি বললেন, “ওরা যে এত তাড়াতাড়ি নাচ রপ্ত করে ফেলবে, ভাবতেই পারছি না।”
‘বাল্মীকি-প্রতিভা’র হাত ধরে জীবনের দিশা খুঁজে পেয়েছিলেন এ রাজ্যের কয়েদীরাই। চিত্রাঙ্গদাও কি পারবে? আশায় বুক বেঁধেছে ওরা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.