ধরা দিয়ে মেলেনি কিছুই
নালিশ জানাতে কালীঘাটে ২ মাওবাদী
মাজের মূল স্রোতে ফিরলে মিলবে আর্থিক প্যাকেজ। সরকারের এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে আর পাঁচ জন মাওবাদীর মতো আত্মসমর্পণ করেছিলেন শুকদেব মাহাতো ও চিরঞ্জীব মাহাতো। কিন্তু শনিবার সকালে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে এসে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ করলেন ওই দুই প্রাক্তন ‘মাওবাদী’।
এ দিন সকালে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে হাজির হন ওই দুই যুবক। হরিশ চ্যাটার্জি ও হাজরা রোডের সংযোগস্থলে দুই যুবককে ঘোরাঘুরি করতে দেখে তাঁদের জেরার জন্য কালীঘাট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ইনটেলিজেন্স) পার্থসারথি ঘোষ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, আত্মসমর্পণের পর প্রতিশ্রুতিমাফিক কোনও সাহায্যই পাননি ওই মাওবাদীরা। এমনকী, জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গেও তাঁদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলেও জেরায় জানান দু’জনে। পার্থবাবু বলেন, “ওঁদের কিছু অভিযোগ ছিল, তা জানাতেই কলকাতায় আসেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।”
সকালের ওই ঘটনার পর কলকাতা পুলিশ যোগাযোগ করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের সঙ্গে। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, কালীঘাট থানায় জেরার পর দু’জনকে প্রথমে লর্ড সিন্হা রোডে স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মহাকরণের পিছনের গেট দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ করানো হয়। তার পর সেখান থেকে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম মেদিনীপুরে।
চিরঞ্জীব শুকদেব
পরে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দোপাধ্যায় বলেন, “দুই আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ওঁদের প্রাপ্য দেড় লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কে জমা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও, মাসে দু’হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। চাকরির বিষয়েও ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে যাতে কোনও গাফিলতি না থাকে, সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রসচিব জানান, এ পর্যন্ত রাজ্যে ৩৩ জন মাওবাদী সরকারের কাছে আত্মসমর্পন করেছে।
ক্ষমতায় এসেই আত্মসমর্পণ ও অস্ত্র জমা দেওয়ার বিনিময়ে পুনর্বাসন ও বিকল্প আয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রতিশ্রুতি পেয়ে গত ১২ জানুয়ারি ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই আত্মসমর্পণ করেন শুকদেব। পরে অস্ত্র জমা দেন। ৭ ফেব্রুয়ারি বিস্ফোরক-সহ আত্মসমর্পণ করেন চিরঞ্জীব ও তাঁর স্ত্রী অনিমা। জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশকে তাঁরা জানান, যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রশাসন তাঁদের আত্মসমর্পণ করিয়েছিল, তার কোনওটাই পাননি। শুকদেব ও চিরঞ্জীবের মতো এমন অভিযোগ আরও কয়েক জনের রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, আত্মসমর্পণের পর শুকদেব ও চিরঞ্জীব মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে থাকত। জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ওই দু’জন মেদিনীপুর পুলিশ লাইন থেকে বেরিয়ে পড়েন। তার পর মেদিনীপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে হাওড়ায় পৌঁছন। রাতটা হাওড়া স্টেশনে কাটিয়ে সকালে পৌঁছে যান কালীঘাটে।
পুলিশ জানিয়েছে, ন’জন আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে রয়েছেন। সেখান থেকে বেরোতে হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের তা জানাতে হয়। কড়া নিরাপত্তার বেড়াজাল কেটে শুক্রবার রাতে কী ভাবে ওই দু’জন বেরিয়ে এলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে গেল কী ভাবে, তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এ দিন কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে খবর পাওয়ার আগে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ (আইবি) বা জেলা পুলিশের কেউ ব্যাপারটি জানতে পারলেন না কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের অন্দরে।
রাজ্য পুলিশের কর্তারা অবশ্য কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.