নিরাপত্তা না লোকসান, হলদিয়া-বিতর্ক চলছেই
কলকাতায় কাজ করতে চায় এবিজি
কাজের পরিবেশ আর নিরাপত্তা পেলে তারা যে এ রাজ্যে থাকতে আগ্রহী, হলদিয়া বন্দর ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পরেও সে ব্যাপারে স্পষ্ট বার্তা দিল এবিজি। হলদিয়া নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই গত ১ নভেম্বর কলকাতার নেতাজি সুভাষ ডকের ৫ নম্বর বার্থে ২টি মোবাইল হারবার ক্রেন বসাতে চেয়ে টেন্ডার জমা দিয়েছে তারা। বন্দরের চেয়ারম্যান মণীশ জৈন শনিবার এ কথা জানান।
শাসক দল তথা রাজ্যের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, হলদিয়া বন্দরের পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক। যে হেতু এবিজি-র লোকসান হচ্ছিল, সে হেতু যে কোনও একটা ছুতোনাতায় হলদিয়া ছেড়ে চলে যাওয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এবিজি অবশ্য বরাবরই বলে এসেছে, হলদিয়ায় বন্দরের স্বার্থের চেয়েও অন্য কারও স্বার্থ বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। ক্রমাগত হুমকি, মারধর, কর্মী অপহরণের জেরেই তারা হলদিয়া ছাড়তে বাধ্য হল। কলকাতা বন্দরে নতুন করে লগ্নির আগ্রহ প্রকাশ করায় স্পষ্ট হল, জঙ্গিপনা না হলে এবিজি-র এ রাজ্যে থাকতে সমস্যা নেই।
এবিজি-র হলদিয়া ছাড়ার পিছনে আইনশৃঙ্খলাই যে কারণ, সেটা শনিবারেও মানতে চাননি জৈন। তাঁর দাবি, গত ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হলদিয়া বন্দরের সর্বত্র স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। নিরাপত্তা ও অস্থিরতা সংক্রান্ত যে সব অভিযোগ এবিজি তুলেছিল, তা মেটানোর জন্য রাজ্য সরকারকে উদ্যোগী হতে বলেছিল বন্দর। কিন্তু তার পরেও এবিজি কাজ করতে রাজি হয়নি। সেই কারণে ওই সংস্থার কাছ থেকে জরিমানা আদায় করে তবেই দু’টি বার্থে থাকা তাদের যন্ত্রপাতি ছাড়া হবে বলে জানিয়েছেন জৈন।
চেয়ারম্যানের অভিযোগ নস্যাৎ করে এবিজি-র সিইও গুরপ্রীত মালহি বলেন, “বন্দর কর্তৃপক্ষ বারবার চুক্তি ভেঙেছেন। হলদিয়ায় কাজের পরিবেশ ও কর্মীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, এবিজি কর্মীদের অপহরণ করে হলদিয়া ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এ রকম অবস্থায় পড়লে কোনও সংস্থাই কাজ করতে পারবে না।
কিন্তু বন্দর কর্তাদের দাবি, এবিজি-র হলদিয়া ছাড়ার আসল কারণ ড্রাই বাল্ক জাতীয় পণ্য (কয়লা, চুনাপাথর ইত্যাদি। এবিজি-র দু’টি বার্থে এই ধরনের পণ্যই খালাস করা হয়) আসা কমে যাওয়া। এতে ওদের লোকসান হচ্ছে। তা সামলাতে না পেরেই হলদিয়া ছাড়ছে ওরা। মণীশ জৈন জানান, গত বছর হলদিয়াতে ড্রাই বাল্ক পণ্য খালাস ১১ শতাংশ কমেছিল। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে অগস্ট মাস পর্যন্ত কমেছে ১২ শতাংশ। আর অগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর (হলদিয়ায় টানা গোলমালের সময়ে) কমেছে ১৭ শতাংশ। পণ্য কমার অর্থ খালাসকারী সংস্থার রোজগার কমা। সেই কারণেই এবিজি পালিয়ে যেতে চাইছে।
রাজ্যে পণ্য খালাসের এই হাল হলে, কলকাতা বন্দরে দায়িত্ব পেতে এবিজি আগ্রহী কেন? চেয়ারম্যানের মতে, কলকাতা বন্দরের সঙ্গে হলদিয়া বন্দরের পরিস্থিতির তুলনা করা ঠিক নয়। কলকাতায় বাক্স-বন্দি পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ বাড়ছে। এখানে লাভ হবে বুঝেই এবিজি আসতে চাইছে। জৈনের পাল্টা প্রশ্ন, এ কেমন সংস্থা? কাজের পরিবেশের ধুয়ো তুলে যে সংস্থা রাজ্য ছাড়তে চাইছে, তারাই আবার কলকাতায় কাজ পেতে আগ্রহী। “ফলে কাজের পরিবেশ নয়, বাণিজ্যিক কারণেই যে এবিজি হলদিয়া ছাড়তে চাইছে, তা স্পষ্ট।” বলছেন বন্দর চেয়ারম্যান।
এই বক্তব্য অবশ্য মানতে রাজি নয় এবিজি। মালহির দাবি, “অত্যন্ত কম টাকায় কাজ ধরে এখন খেসারত দিতে হচ্ছে বলে যে প্রচার করা হচ্ছে, তা-ও মিথ্যা। দীর্ঘদিন থাকার বাসনায় উপযুক্ত দর দেওয়া হয়েছিল। তাতে প্রাথমিক ভাবে লোকসান হলেও পর্যাপ্ত পণ্য পেলে পরে লাভ হত।” তাঁর বক্তব্য, এই ভাবেই বিশাখাপত্তনম এবং তুতিকোরিনে ১৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প রূপায়ণ করছেন তাঁরা।
মালহির অভিযোগ, হলদিয়া বন্দরের উন্নতির কথা রাজ্য প্রশাসন কিংবা বন্দর কর্তাদের মাথায় ছিল না। তাঁরা সব সময় একটি কায়েমি স্বার্থের কথা ভেবেছেন। তিনি বলেন, “যে ভাবে হলদিয়া ছাড়তে হচ্ছে তাতে আমরাও বন্দরের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চাইব। সেই হিসেব তৈরি হচ্ছে।” বন্দর আবার এবিজি-র বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে। সেগুলি হল, এবিজি পণ্য রফতানিতে রাজি হয়নি। তারা শুধু আমদানি করতেই উৎসাহী ছিল। যা চুক্তিতে ছিল না। এ ছাড়া, এবিজি-র শেয়ার হোল্ডিংয়েও নানা গরমিল হয়েছে। টেন্ডারে অংশগ্রহণের সময় অংশীদার হিসেবে ফরাসি সংস্থা এলডিএ ছিল না। পরে বন্দরকে না জানিয়েই তাদের নিয়ে আসা হয়। এবিজি অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চায়নি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.