দীপ্তি দেবী আত্মঘাতী হয়েছেন। পেনশন না-পেয়ে ধুঁকছেন আরও অনেকে। অভাবের যন্ত্রণায় দিশেহারা দশা হয়েছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বালুরঘাট ডিপোর পেনশনভোগী অন্তত শতাধিক কর্মী ও তাঁদের পরিজনের। তিন মাস হয়েছে ধার দেনা করে কোনও মতে ভাত, আলুসেদ্ধ খেয়ে দিন কাটছে তাঁদের। বৃহস্পতিবার বালুরঘাটের অবসরপ্রাপ্ত এনবিএসটিসি কর্মীর স্ত্রী দীপ্তি কর্মকার অভাবের যন্ত্রণা সইতে না পেরে আত্মঘাতী হন। ঘটনার পরে ২৪ ঘন্টা কেটে গেলেও সরকারি প্রতিনিধিদের কেউ তাঁর বাড়িতে যাননি। সংসারের রোজগেরে পেনশনভোগী মায়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তাঁর পরিবারের লোকজন। গ্যারাজ মিস্ত্রি ছেলে অসীমের অনিয়মিত কাজ। অসীমবাবুর ১৭ বছরের মেয়ে পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী। পুত্রবধূ জয়ন্তীদেবীর কথায়, “কেমন করে বেঁচে থাকব বুঝতে পারছি না।” শুক্রবার এনবিএসটিসি বালুরঘাট ডিপো পেনশনার্স অ্যসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা দীপ্তি দেবীর বাড়িতে যান। আত্মীয়দের সমবেদনা জানান। সিটু প্রভাবিত ওই সংগঠনের সম্পাদক শ্যামনারায়ণ লস্কর বলেন, “অনিয়মিত পেনশনের কারণে ডিপোর ১১৫ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর চরম সংকটে দিন কাটছে।” |
পেনশনার্স অ্যসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর নভেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত অর্ধেক পেনশন মিলেছে। অগস্ট মাস থেকে সেটাও বন্ধ। অবসরের পরে পাঁচ বছর কেটে গেলেও গ্র্যাচ্যুইটি, লিভস্যালারির টাকা অনেকে পায়নি। কেন ওই অব্যবস্থা? সংস্থার কর্তারা এ জন্য আর্থিক সমস্যাকে দুষেছেন। যেমন, এনবিএসটিসির বালুরঘাটের বোর্ড ডিরেক্টরের সদস্য তথা তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি বিপ্লব খা।ঁ তিনি বলেন, “আর্থিক সমস্যার কারণে অর্ধেক পেনশন দেওয়া হয়েছে। বকেয়া অর্ধেক পেনশনের টাকা দ্রুত দেওয়ার চেষ্টা চলছে। গত তিন মাসের পেনশনের কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে।” কিন্তু অভাবে দিশেহারা অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা সংস্থার কর্তাদের ওই আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না। তাঁদের বক্তব্য, কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে হোক। গত তিন মাস ধরে পেনশন দেওয়া বন্ধ না করে অর্ধেক দিতে কোনও অসুবিধা ছিল না। সেটা হলে দীপ্তি দেবী আত্মহত্যা করতেন না। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, আর্থিক সংকট নিয়মিত পেনশন দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হলে রাজ্য সরকার খরচের বন্যা বইয়ে কেমন করে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করছেন! দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় বলেন, “যুব উৎসব, নাট্য উৎসব, বিবেক মেলার মতো উৎসবের সময় রাজ্য সরকারের টাকার সমস্যা হয় না। সারা জীবন কাজ করার পরে কর্মীদের পেনশন দিতে যত সমস্যা। এটা মানা যায় না।” এ দিন বালুরঘাট ডিপোর অবসরপ্রাপ্ত করণিক শহরের বেলতলাপার্কের বাসিন্দা সত্তর বছরের অনিলবরণ মুখোপাধ্যায়কে ৫০ টাকা ধার করে ৩ কেজি চাল, ১ কেজি আলু কিনতে হয়েছে। ২০০৬ সালে তিনি অবসর নেন। দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে অভাবের সংসার। পেনশন না পেয়ে দিন আর চলছে না। একই দশা হয়েছে স্থানীয় পাওয়ার হাউস পাড়ার ৬৪ বছরের অখিল গোস্বামীর। তিনি ১৯৯৮ সালে অবসর নেন। ৯ মাস থেকে অর্ধেক পেনশনের সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিয়ে কোনও মতে চলছিল। গত তিন মাস থেকে পেনশন বন্ধ। উচ্চ রক্তচাপের রোগী অখিলবাবু ওষুধ কিনতে পারছেন না। তাঁর কথায়, “প্রতি মাসে ৮৫০ আমাকে টাকার ওষুধ কিনতে হয়। কী করে বাঁচব!” |