খাস কলকাতায় সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় ঠাঁই মিলল না এক মরণাপন্ন রোগীর। মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় এসে রাতভর ঘুরে শেষ পর্যন্ত তাঁর ঠাঁই হয় এক বেসরকারি হাসপাতালে।
মুখ্যমন্ত্রী হয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতাল থেকে ফেরানো যাবে না। মুর্শিদাবাদের লালগোলার মহম্মদ আলামিন রহমানের ঘটনা ফের দেখিয়ে দিল, মুখ্যমন্ত্রী যা বলেন, বহু ক্ষেত্রেই তার বাস্তবায়ন হয় না। কেন হয় না, তার জবাবও বেশির ভাগ সময়েই থাকে
না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে।
পেশায় পার্শ্বশিক্ষক, ৩২ বছরের আলামিন অগ্ন্যাশয়ের জটিল অসুখে ভুগছেন। গত ৩০ অক্টোবর সকালে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে বহরমপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান দাদা সইদুর রহমান। অবিলম্বে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন জানিয়ে চিকিৎসকেরা কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। ওই সন্ধ্যাতেই কলকাতা পৌঁছলে এনআরএসের ইমার্জেন্সিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক আলামিনকে কয়েকটি ওষুধ দিয়ে অবজার্ভেশনে রাখেন। ঘণ্টা দুয়েক পরেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই চিকিৎসকের খোঁজ করে জানা যায়, তিনি ডিউটি শেষ করে চলে গিয়েছেন। রাতের ডিউটির চিকিৎসক আলট্রাসোনোগ্রাফি করাতে বলেন। আরও ঘণ্টা তিনেক অপেক্ষা করতে বলা হয়। সইদুরের অভিযোগ, “রাত ১১টা নাগাদ সার্জারি বিভাগের ডাক্তাররা বলেন, অপারেশন করতে হবে। তখনই ইমার্জেন্সির ডাক্তারবাবু বলে দেন, জায়গা নেই।”
কোন হাসপাতালে শয্যা খালি জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক “আমি সেটা কী করে বলব” বলে সইদুরকে ধমক দেন বলেও অভিযোগ। সইদুর বলেন, “ভাইটা যন্ত্রণায় অজ্ঞান। ডাক্তারবাবুকে বললাম, দরকার হলে মেঝেতে ভর্তি করুন। উনি বললেন, বৃথা সময় নষ্ট করে লাভ নেই।”
এর পরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে টানা ২০ মিনিটের চেষ্টাতেও ইমার্জেন্সির কোল্যাপসিব্ল গেট খোলেনি বলে অভিযোগ। কর্তৃপক্ষ জানান, রাতে বহিরাগতদের হামলার কারণে কোল্যাপসিব্ল গেট বন্ধ থাকে। রোগী এলে নিরাপত্তাকর্মীরা তৎক্ষণাৎ গেট খোলেন। ওই রাতে কেন খোলা হয়নি? কর্তৃপক্ষ সে প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি।
আলামিনকে নিয়ে যাওয়া হয় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। সইদুর বলেন, “সেখানে বলা হয়, ওই ধরনের অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো নেই। বাধ্য হয়ে ভাইকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করলাম। খরচ জোগাড় করতে ঘটিবাটি বিক্রি করতে হবে, তা জানি।” ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের অভিমত, আলামিনের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। ৩০ তারিখ ভোর থেকে মাঝ রাত টানাহেঁচড়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
কেন সমস্ত পরিকাঠামো থেকেও ভর্তি নিল না এনআরএস? সুপার স্বপন সাঁতরা জানান, গুরুতর অসুস্থ রোগীকে তাঁরা কখনওই ফেরত পাঠান না। আলামিনকে কেন অন্যত্র পাঠানো হল? কেনই বা কোথায় শয্যা রয়েছে, সেই তথ্যটুকু হাসপাতালের তরফে কেউ জানার চেষ্টা করলেন না? সুপারের জবাব, “যাবতীয় তথ্য না দেখে কিছু বলা সম্ভব নয়।” যে চিকিৎসকেরা ওই রাতে ডিউটিতে ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? সুপার জবাব দেননি।
স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এমন হওয়ার কথা নয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের চিহ্নিত করা গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “সব রোগীকে তো ভর্তি করা সম্ভব নয়। তাই চিকিৎসকদের বলা হয় বিবেচনা অনুযায়ী ‘স্ক্রিনিং’ করে গুরুতর রোগীদের ভর্তি করতে। চিকিৎসকদের একটা বড় অংশই তা করেন না। ‘শয্যা নেই’-টা তাঁদের মুখের বুলি হয়ে গিয়েছে।” |