রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। তার আগে পশ্চিমবঙ্গের ১৮টি জেলায় ৫১৮৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ করল কেন্দ্র। সেই সঙ্গে ১৫টি জেলায় ৮৪০ কিলোমিটার সড়কের মানোন্নয়নের জন্য আরও সাড়ে চারশো কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল। এবং সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া মাত্রই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আজ ফের চিঠি লিখলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ।
মমতাকে পাঠানো তাঁর আগের দুই চিঠির মতো আজকের চিঠিতে অবশ্য কোনও কটাক্ষ ছিল না। তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত সবিস্তার জানিয়ে জয়রাম তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, “গত দশ বছরে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় পশ্চিমবঙ্গে যে পরিমাণ রাস্তা (প্রায় ১৩ হাজার কিলোমিটার) তৈরি হয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে কার্যত সেই পরিমাণ রাস্তার জন্য বরাদ্দ পেতে চলেছে রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের উন্নয়নে ইউপিএ-র গভীর দায়বদ্ধতাকেই তুলে ধরছে এই মনোভাব। রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পে ধারাবাহিক সহযোগিতার ব্যাপারে আমি আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি।”
রাজনীতির কারবারিদের মতে, জয়রামের এই চিঠি যতটা না প্রশাসনিক, তার থেকে অনেক বেশি রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। ইউপিএ থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পর তৃণমূল নেতৃত্ব কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা ও বঞ্চনার অভিযোগ তুলতে পারে বলে প্রথম দিন থেকেই কংগ্রেসের মনে আশঙ্কা ছিল। তৃণমূলের সম্ভাব্য সেই রাজনীতির মোকাবিলায় তাই আগে থেকেই সক্রিয় কংগ্রেস। এ ব্যাপারের অন্যতম পুরোধা জয়রাম।
পাশাপাশি আরও একটি কৌশল নিতে চাইছে কংগ্রেস। সেটি হল, কেন্দ্রের আর্থিক বরাদ্দে রাজ্যে যে সব প্রকল্প রূপায়ণ হচ্ছে, তার কৃতিত্ব যেন কোনও ভাবেই নিতে না পারে তৃণমূল সরকার। আর সেই কারণেই শুধু নতুন সড়ক নির্মাণে ছাড়পত্র দিয়েই জয়রাম থেমে থাকেননি।
তিনি মমতাকে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, সেটি সরকারি মহল থেকে প্রকাশও হয়ে গিয়েছে।
বস্তুত, ধারাবাহিক ভাবেই এই কাজ করে চলেছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তাঁর মন্ত্রকের তরফে একের পর এক অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে জয়রাম মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিও পাঠাচ্ছেন। যেমন, পুজোর ঠিক আগে রাজ্যে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের জন্য ৬০১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে রাজনৈতিক খোঁচাও দিয়েছিলেন জয়রাম।
কারণ, ক’দিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন “কেন্দ্রের সরকার কোমাচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে।” আর বরাদ্দ অনুমোদন করে জবাবে জয়রাম লিখেছিলেন, “কোমাচ্ছন্ন দিল্লি সরকার কতটা সংবেদনশীল, তা বোঝাতে এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রয়োজনের কথা মনে রেখেই এই টাকা পাঠানো হল।”
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের আগে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক যে প্রকল্প-ভিত্তিক অর্থ বরাদ্দ করছে তাতে দলের হাতও শক্ত হচ্ছে। কারণ, রাজ্য কংগ্রেস নেতারা গ্রামোন্নয়নে কেন্দ্রের এই সহযোগিতার কথা প্রচার করার সুযোগ পাবেন। এ ব্যাপারে প্রচারের জন্য জয়রাম নিজেও রাজ্য সফরে যাবেন।
আজ প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার ক্ষমতাশালী কমিটির বৈঠকে রাজ্যের তরফে উপস্থিত ছিলেন গ্রামোন্নয়ন দফতরের সচিব সৌরভ দাস। বৈঠকে এ-ও স্থির হয়েছে, ডিসেম্বর মাস শেষ হওয়ার আগে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আরও ২০০০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ অর্থ অনুমোদন করবে। সেই সঙ্গে আরও ১৫টি জেলায় ৪৮৯২ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির মানোন্নয়নে ছাড়পত্রও দেওয়া হবে। |