ঘটা করে উদ্বোধনের পর শুরু হয়েছিল বাস পরিষেবা। কিন্তু মাসখানেকের মধ্যেই ক্ষতির কারণ দেখিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হল। এর ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন ক্যানিং থেকে বাসে কলকাতায় আসা নিত্যযাত্রীরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে জীবনতলা বাজার থেকে ঘটকপুকুর হয়ে সল্টলেক, অন্যদিকে চন্দনেশ্বর হয়ে সোনারপুর, এই দুই রুটে গত ২৮ অগস্ট বাস পরিষেবা চালু হয়। এ জন্য ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের সাতটি বাস দেওয়া হয়। জীবনতলা বাজারে ওই বাস পরিষেবার উদ্বোধন করেন রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল। যাতায়াতের সুবিধা হবে ভেবে নতুন ব্যবস্থায় উৎসাহিত হয়েছিলেন এলাকার মানুষ। কিন্তু প্রায় এক মাস চালু থাকার পরে হঠাৎই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।
বাস পরিষেবা চালু করতে যাঁর উদ্যোগ ছিল সবচেয়ে বেশি সেই ক্যানিং-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সওকত মোল্লার কথায়, “আমরা অনেক আশা নিয়ে বাস পরিষেবা চালু করেছিলাম। কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে বলে ওই সরকারি পরিবহণ সংস্থা কয়েকদিন বাস চালিয়ে বন্ধ করে দিল। কী ভাবে ওই বাস সার্ভিস ফের চালু করা যায় তার চেষ্টা হচ্ছে।”
বাস পরিষেবা বন্ধ হওয়া নিয়ে সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল বলেন, “স্থানীয় অধিকাংশ লোকজনই বাসে বাড়া দিচ্ছিলেন না। ফলে ক্ষতি হচ্ছিল। সমস্যা মেটাতে আমি এলাকার মানুষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি। বাস পরিষেবা চালু রাখতে যাত্রীদের সহযোগিতা দরকার। তা না পাওয়াতেই বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে ফের চেষ্টা হচ্ছে তা চালু করার।” ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক শেখর সেন বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
অন্যদিকে, বাস বন্ধ হওয়ার জন্য প্রশাসনের যুক্তি মানতে নারাজ স্থানীয় বাসিন্দারা। বাস বন্ধ হওয়ায় স্পষ্টতই তাঁরা ক্ষুব্ধ। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের আক্রমণের লক্ষ্য স্থানীয় প্রশাসন ও মন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল। তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক চমক দিতেই এই বাস পরিষেবা চালু করা হয়। ওই রুটে বাস চালানোর আগে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো গড়ে তোলেনি প্রশাসন। সেই কারণেই বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া তড়িঘড়ি বাস সার্ভিস চালু করে দেওয়া হলেও তৈরি হয়নি কোনও বাসস্ট্যান্ড, যাত্রীদের জন্য প্রতীক্ষালয়, শৌচাগার। যেখানে বাসস্ট্যান্ড করা হয়েছিল সেই জায়গাও বাস চলাচলের পক্ষে অপরিসর। ফলে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এই সব কারণেই শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাস পরিষেবা। যার ফল ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদের। এখন টিকিট না কাটার অজুহাত দেওয়া হচ্ছে।”
জীবনতলা বাজার সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে থানা, ব্লক অফিস, কলেজ, স্কুল, হাসপাতাল-সহ অন্যান্য সরকারি দফতর। বাস পরিষেবা চালু হওয়ায় এই সব দফতরের কর্মীরা উপকৃত হয়েছিলেন। কিন্তু বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা ফাঁপড়ে পড়েছেন। ফের তাঁদের আগের অবস্থায় অর্থাৎ ভ্যানরিকশা, অটোর জগতে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা বীরবল মণ্ডল, তোফাজ্জেল মোল্লারা বলেন, ‘‘বাস পরিষেবা চালু হওয়ায় ভেবেছিলাম সোনারপুর ও কলকাতার মধ্যে যাতায়াতের সমস্যা মিটবে। আগে কলকাতায় পৌঁছতে হলে অটোয় তালদি স্টেশন, তারপর ট্রেন ধরে কলকাতায় পৌঁছতে হত। বাস চালু হওয়ার পরে ভেবেছিলাম জীবনতলা থেকে সরাসরি কলকাতায় যাওয়া যাবে। কিন্তু কিছুদিন চলার পরে বন্ধ হয়ে গেল বাস সার্ভিস। সেই সমস্যা থেকেই গেল।” |