|
|
|
|
ঢাকের লড়াই বাড়ির লক্ষ্মীপুজোয় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঘাটাল |
যা ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ, যাঁদের মনে পড়ে শুধু পুজোর সময়, সেই ঢাকিদের নিয়ে প্রতিযোগিতা হল গড়বেতা থানার আমলাগোড়া সংলগ্ন রাধানগরে একটি বাড়ির লক্ষ্মীপুজোয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় চন্দ্র পরিবারে ঢাকিদের নিয়ে প্রতিযোগিতার আসর বসে। শুধু এলাকারই নয়, মেদিনীপুর শহর, বাঁকুড়ার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ঢাকিরা এসেছিলেন। দর্শকও ছিলেন প্রায় হাজারখানেক। ঢাকিদের নগদ টাকা, পুষ্পস্তবক দিয়ে সম্মান জানানো হয়। প্রায় হারিয়ে যাওয়া শিল্পের প্রতি সাধারণ মানুষের এই ভালবাসায় তখন আনন্দে-আপ্লুত ঢাকিরা।
গড়বেতার রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা তাপস চন্দ্র, অশোক চন্দ্রের বাড়িতে তিন পুরুষ ধরে লক্ষ্মী পুজো হয়ে আসছে। একশো বছরেরও আগে পরিবারের প্রথম পুরুষ উপেন্দ্রচন্দ্র চন্দ্র লক্ষ্মী পুজো শুরু করেছিলেন। তাপসবাবু বলেন, “ফি বছরই পুজোর সময় আমরা এলাকার দুঃস্থদের নতুন বস্ত্র বিলি করি। সবাইকে পাত পেড়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা থাকে। নানান অনুষ্ঠান হয়। ২০১০ সালে একশো বছর পূর্তিতে নতুন কিছুর আয়োজন করব বলে ঠিক করি। তখনই ঢাকিদের নিয়ে প্রতিযোগিতা করার কথা ভাবনায় আসে।” |
|
—নিজস্ব চিত্র। |
তাপসবাবু জানান, প্রথম দু’বছর প্রচার সেরকম না হওয়ায় মনের মতো জাঁক করে করা যায়নি। এই বছর প্রায় দেড় মাস আগে থেকে বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, চন্দ্রকোনা, বাঁকাদহ, মাগুরাশোল-সহ প্রায় ৫০টির বেশি গ্রাম ঘুরে ঢাকিদের খবর দেওয়া হয়। এলাকার মানুষ জানতেন। তবুও মাইকে প্রচার করা হয়। ফলে এ বছর স্থানীয় গড়বেতা, আমলাগোড়া, জুনশোল, আমলাশুলি, ফতেসিংহপুর, হুমগড়-সহ পাশাপাশি প্রায় ২০-২৫টি গ্রাম থেকে হাজারেরও বেশি মানুষ প্রতিযোগিতা দেখতে ভিড় জমান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে শুরু হয়েছিল অনুষ্ঠান। শেষ হয় প্রায় দশটা নাগাদ। প্রায় ৪০ জন প্রতিযোগী কাহারবা, ত্রিতাল, দাদরা বিভিন্ন তালে ঢাক বাজিয়ে দর্শকদের মন জয় করে নেন। যোগদানকারী প্রত্যেককেই নগদ টাকা দেওয়া হয়। তবে বিচারকের চোখে সেরা তিন জনকে নগদ দেড় হাজার টাকা ছাড়াও বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়াও দর্শকরা যে যার মতো খুশি হয়ে টাকা দেন। এই স্বীকৃতি-সম্মানে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি মালবাঁদির স্বপন রুইদাস, বৈতলের নিমাই কেওড়া, বাঁকাদহের নিমাই পাত্র, সীতানগরের ক্ষুদিরাম রুইদাসেরা। তাপসবাবু বলেন, “ঢাকিদের নিয়ে এই প্রতিযোগিতা পুজোয় একটা অন্য মাত্রা যোগ করেছে। ঠিক করেছি প্রতি বছরই এই প্রতিযোগিতা করব।” কোলাঘাটের ধর্মাবেড় গ্রামের বাসিন্দা তথা স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিনয় বারিক প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন। বিনয়বাবু বলেন, “আমি শিক্ষক হলেও এখনও ঢাক বাজাই। এই শিল্পটি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকার কিছু ভাবে না। তাই বেসরকারি উদ্যোগে এই প্রতিযোগিতা হওয়ায় আমরা খুব খুশি।” |
|
|
|
|
|