|
|
|
|
রানিচকেই সভা, এবিজি নিয়ে সংযত শুভেন্দু |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
হলদিয়া বন্দর থেকে এবিজি-কে তাড়ানোর পিছনে ‘পরিকল্পনা’র কথা প্রকাশ্যে চলে আসায় কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার রানিচকের জনসভায় এবিজি প্রসঙ্গে শুভেন্দুর অতি ‘সংযত’ এবং ‘সংক্ষিপ্ত’ মন্তব্যেই এটা পরিষ্কার।
হলদিয়ার এই রানিচকেই দু’বছর আগে এবিজি-কে হটানোর শপথ নিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ। বন্দরের অছি পরিষদকে দিয়ে তাঁর উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়নি, শেষমেশ জঙ্গি ট্রেড ইউনিয়নকে হাতিয়ার করে এবিজি-কে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে বলে জাহাজি মহলের অভিযোগ। এবং দলীয়-সূত্রের খবর: এই ঘটনায় শুভেন্দুবাবুর ‘ভূমিকা’ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় শিল্পমহলের কাছে যে বিরূপ বার্তা পৌঁছেছে, সে ব্যাপারে সাংসদ বিলক্ষণ অবহিত।
|
রানিচকের সভায়।
—নিজস্ব চিত্র |
তাই এ দিন রানিচকে দলীয় সমর্থকদের সভায় সংবাদমাধ্যমকে নিশানা করলেও এবিজি-র বিরুদ্ধে বিশেষ ‘চোখা’ শব্দ শুভেন্দুবাবুর মুখে শোনা যায়নি। কর্মীদের পেনশন-বোনাস না-দেওয়ার প্রসঙ্গ এক বার তুলছেন বটে, তবে ২৭৬ জন ছাঁটাই শ্রমিককে সঙ্গে নিয়ে হলদিয়া বন্দরে ফের কাজ শুরু করতে এবিজি-র উদ্দেশে আহ্বানও জানিয়েছেন। যা শুনে বিস্মিত হয়েছেন এবিজি-র ছাঁটাই কর্মীদের একাংশ, যাঁরা এ দিন সাংসদের কাছে ‘আক্রমণাত্মক’ বক্তৃতা আশা করে এসেছিলেন। “ভেবেছিলাম, উনি দু’বছর আগের মতো কড়া বার্তা দেবেন। কিন্তু তেমন কিছু তো শুনলাম না!” আক্ষেপ এক কর্মীর। দু’বছর আগে রানিচকের এক সভায় এবিজি-র বিদায়ঘণ্টা বাজানোর ডাক দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে তা পুনঃসম্প্রচার হওয়ার পরে তড়িঘড়ি তিনি রানিচকে সভা ডাকেন। সেখানে তিনি ওই ভিডিও-ফুটেজ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলে সকলে মনে করছিলেন। তা কিন্তু হয়নি। তা হলে সভায় কী নিয়ে বললেন শুভেন্দুবাবু? তৃণমূল সাংসদ বক্তৃতা শুরু করেন পূর্বতন রাজ্য সরকার, সিপিএম, লক্ষ্মণ শেঠকে আক্রমণ করে। বাক্যবাণে বিদ্ধ করেন কেন্দ্রীয় সরকার, পশ্চিমবঙ্গের দুই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এবং রাজ্যের দুই কংগ্রেস নেতাকে। বেশির ভাগটা জুড়ে আক্রমণ শানান সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে এক বারই এবিজি’কে নিশানা করে বলেন, “২ এবং ৮ নম্বর বার্থে বরাত পেয়েছেন, তার পরে লক্ষ্মণ শেঠের সঙ্গে বসে চুক্তি করেছেন। হাত কাটা, নাক কাটা অনেককে চাকরি দিয়েছেন। তা নিয়ে আমরা কিছু বলছি না। আমরা বলছি ছাঁটাই হওয়া ২৭৬ জনকে আপনারা কাজে নিয়ে নিন।”
গত মঙ্গলবার কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করে এবিজি-কে রাখার জন্য বন্দর-কর্তৃপক্ষের প্রয়াসের সমালোচনা করে শুভেন্দুবাবু বলেন, “এবিজি চলে গেলে দরপত্রে যারা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দর দিয়েছিল, তাদের কাজ দেওয়া হোক। বা নতুন টেন্ডার ডাকা হোক।” এ দিন তাঁর অন্য সুর “কে কাজ করবে, আগ্রহী নই। আমরা চাই, আরও জাহাজ আসুক। ইডেন চ্যানেল দিয়ে জাহাজ ঢুকুক।” নাব্যতাকেই হলদিয়া বন্দরের মূল সমস্যা আখ্যা দিয়ে শুভেন্দু বলেন, “অন্য সমস্যা বলে যা প্রচার হচ্ছে, তা কুৎসা। রাজনৈতিক ভাবে তৈরি করা।” তবে দু’বছর আগের সেই সভায় তাঁর মুখের বক্তব্যগুলোর কোনও ব্যাখ্যা এ দিন শুভেন্দুবাবুর বক্তৃতায় মেলেনি। বরং টিভি চ্যানেলে যাঁরা ওই ‘ফুটেজে’র বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, সেই সব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে (মানস ভুঁইয়া, লক্ষ্মণ শেঠ, নির্বেদ রায়) ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণেই শব্দ খরচ করেছেন বেশি। এবিজি-র ৬৩০ জন (ছাঁটাই ও কর্মহারা মিলিয়ে) শ্রমিকের দায়িত্ব নেওয়ার কথা অবশ্য তিনি বলেছেন। আশ্বাস দিয়েছেন, “কাজ হারিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের পেটের ভাত দিতে পারব।’’ কিন্তু কী ভাবে পারবেন, তার দিশা দেননি। তৃণমূল সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে বক্তব্যের শেষে ফের সংবাদমাধ্যমকেই দোষারোপ করে শুভেন্দুবাবু বলেন, “কুকুর মানুষের পায়ে কামড়ায়। মানুষ কুকুরের পায়ে কামড়ায় না। তাই আমরা সংবাদমাধ্যমের কুৎসার জবাব দিতে চাই না। বন্দর ভাল থাকবে।” সভায় আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন ছিলেন অন্যতম বক্তা। তিনিও প্রায় আগাগোড়া সংবাদমাধ্যমকে তোপ দেগেছেন। দাবি করেছেন, “এ দিনের সভাস্থলে এবিজি-র ছাঁটাই হওয়া ২৭৬ জন শ্রমিকের পাশাপাশি কাজ হারানো অধিকাংশ শ্রমিক এসেছেন। আসেননি মাত্র ৫৫ জন, যাঁরা সিটুর লোক।” যদিও সভাস্থলের ছবিটা দোলাদেবীর কথাকে সমর্থন করেনি। দেখা গিয়েছে, এবিজি চলে যাওয়ার পরে কাজ হারানো কিছু শ্রমিক প্রথম সারিতে থাকলেও সংখ্যাটা হাতে গোনা। |
|
|
|
|
|