রাতের বালি

দুর্লভ চিকিৎসা

দীর্ঘ কয়েক বছর আমেরিকায় থাকার পরে জন্মস্থানে ফিরে চমকে গিয়েছিলেন সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হেমন্ত রায়। কত বহুতল, শপিং মল, বিনোদন কেন্দ্র, সারি সারি মোবাইল টাওয়ার। কিন্তু ভুল ভাঙতে বেশি দিন লাগলো না। এক দিন গভীর রাতে তাঁর এক আত্মীয়ের আচমকা পেটের যন্ত্রণা শুরু হল। পারিবারিক চিকিৎসক বিদেশে। অনেক চেষ্টা করেও চিকিৎসক পাওয়া গেল না। ওষুধের দোকানও খোলা নেই। অগত্যা হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হল। কিন্তু বালিতে যে ও সব কিছুই নেই!
বালিতে অনেক সময় অনেক বাসিন্দাকে এমন কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হতে হয়। তাঁরা জানান, নগরোন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বালি পুর এলাকা ঝাঁ চকচকে হলেও রাত বাড়লে অনেক পরিষেবাই মেলে না। বিশেষ করে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে খুবই সমস্যা হয়।
দেড়শো বছরের পুরনো জনপদ বালি। এখন বালি পুর ও পঞ্চায়েত এলাকা ২৪.৯৬ বর্গ কিলোমিটারের। সীমানা পুনর্বিন্যাসে ওয়ার্ড বেড়ে হয়েছে ৩৫। এর মধ্যে রয়েছে বালি, বেলুড় ও লিলুয়া অঞ্চল। পশ্চিমে হাওড়া মেন শাখার রেললাইন পেরোলেই নিশ্চিন্দা, ঘোষপাড়া, সাঁপুইপাড়া-বসুকাঠি, দুর্গাপুর-অভয়নগর-১, দুর্গাপুর-অভয়নগর-২, চকপাড়া, আনন্দনগর পঞ্চায়েত এলাকা। দ্রুত বদলে যাচ্ছে এই জনপদের চেহারা। ফাঁকা মাঠ, গাছপালা, পুরনো দিনের বাড়ির জায়গা নিয়েছে বহুতল, বহুজাতিক সংস্থার শোরুম, শপিং মল। লিলুয়া এলাকায়ও প্রায় একই ধরনের পরিবর্তন ঘটে চলেছে।
কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে ভরসা বলতে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে জয়সোয়াল হাসপাতাল বা হুগলির উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। বেলুড় স্টেশনের কাছে বেলুড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালে জরুরি পরিষেবা কার্যত পাওয়া যায় না বলেই অভিযোগ। পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা মিঠু সাহার কথায়: “পেট খারাপ বা বমি হলে ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অনেক সময় সেখান থেকে জয়সোয়াল কিংবা হাওড়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।”
বালি এলাকায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলেও ভরসা সেই উত্তরপাড়া কিংবা জয়সোয়াল। জাতীয় সড়কের দিকে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশ কিংবা স্থানীয়েরা উত্তরপাড়ায় নিয়ে যান। আর বেলুড়ের দিকে কোনও ঘটনা ঘটলে জয়সোয়ালে নিয়ে যান। এক পুলিশকর্মীর কথায়: “দুর্ঘটনা কিংবা অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হলে চিকিৎসকদের দেখানোর জন্য বেলুড় হাসপাতালে নিয়ে যাই।” হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বাতী দত্ত বলেন, “বেলুড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পরিকাঠামোর সমস্যা রয়েছে। পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য কিছু করা যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয়েরাও প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।”
রাতে কোনও ওষুধের দোকান খোলা থাকে না বলেও অভিযোগ বাসিন্দাদের। বালির বাসিন্দা রাজু ঘোষ বলেন, “রাতে ওষুধের দরকার হলে দোকানদারকে বাড়ি থেকে ডেকে দোকান খুলিয়ে ব্যবস্থা করতে হয়। না হলে উত্তরপাড়ায় ছুটতে হয়।” বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের উত্তর হাওড়া জোনের সভাপতি শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রতিটি দোকানে এক জন ফার্মাসিস্ট আছেন। কিন্তু রাতে দোকান খুলে রাখার জন্য আরও এক জন ফার্মাসিস্ট দরকার, যা ছোট ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব নয়। ফার্মাসিস্ট ছাড়া ওষুধ বিক্রির অনুমতি দেওয়া হলে রাতে দোকান খুলে রাখা সম্ভব। তা ছাড়া জরুরি পরিষেবার হাসপাতালও নেই। তাই দোকান খোলা থাকে না।”
বালি পুরসভার চেয়ারম্যান অরুণাভ লাহিড়ী বলেন, “চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। পুরসভার যে সব মাতৃসদন রয়েছে সেখানে বেড বাড়িয়ে অন্য চিকিৎসা পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু আর্থিক সমস্যার জন্য তা বাস্তবায়িত হয়নি।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.