সম্পাদকীয় ১...
উত্তর-অ(ন)ধিকার
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনেকগুলি নূতন মুখের মধ্যে একটি মুখ বিষয়ে আগ্রহ ও কৌতূহল আপাতত প্রবল। তাঁহার নাম এম এম পল্লম রাজু কপিল সিব্বলের বিদায়ের পর মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী। এই ভার কেবল আলংকারিক নহে, বরং অতি গুরুতর, কেননা পরিবর্তিত মন্ত্রীদের মধ্যে আর কেহই সিব্বলের মতো এত প্রবল ভাবে ‘সংস্কার’-এর মহালক্ষ্যে মহাযজ্ঞ বাধাইয়া বসেন নাই। সিব্বল মনে করিয়াছিলেন, দেশের মধ্য ও উচ্চ শিক্ষা ভুবনের ভার যখন তাঁহারই উপর ন্যস্ত, যথাসত্বর যত বেশি সংস্কার তিনি সাধিয়া ফেলিতে পারিবেন, মুক্তি ও প্রগতির পথে ততই দোর্দণ্ডবেগে দৌড়াইবে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার মান। ফলক্রমে গত তিন বৎসরে ইউ পি এ সরকারের এই মন্ত্রকটিতে যে অতিসক্রিয়তা দেখা যায়, তাহা অতুলনীয়। লাগাতার এত বিতর্কও কোনও মন্ত্রী তৈরি করিতে পারেন নাই। যে কয়েকটি মৌলিক সংস্কার সিব্বলের আমলে প্রস্তাবিত ও আরব্ধ হইয়াছে, তাহার পরিণতি এখন রাজুর উপরই নির্ভর করিতেছে।
বস্তুত রাজুর পদক্ষেপের উপর নির্ভর করিতেছে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার চালচিত্র। সিব্বলের সমগ্র রচনাবলির হিসাব কষিতে বসিলে মহাভারত লিখিতে হইবে, সেই চেষ্টায় কাজ নাই। তাঁহার প্রধান দুইটি অবদান: আর টি ই (রাইট টু এডুকেশন) বা শিক্ষায় মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, এবং প্রথমে ইঞ্জিনিয়ারিং, পরে অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেশব্যাপী একটি কেন্দ্রীভূত পরীক্ষাও ভর্তি ব্যবস্থা প্রচলনের প্রস্তাব। প্রথম ক্ষেত্রে, দেশের বেসরকারি বিদ্যালয়গুলিতে ২৫ শতাংশ দরিদ্র, অনুন্নত পরিবারের ছেলেমেয়েকে স্থান দিতেই হইবে: ইহাই হইল আর টি ই আইনের মূল প্রাসঙ্গিক বক্তব্য। আইনটি দেশের সর্বত্র কাজে প্রযুক্ত হইতে শুরু করিয়াছে, এবং ফলস্বরূপ প্রবল অব্যবস্থা দেখা দিয়াছে। একটি প্রশ্নের স্বভাবতই উত্তর নাই। বেসরকারি বিদ্যালয় যে দেশে মাত্র ৭ শতাংশেরও কম, সেখানে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলির উপর নৈতিকতার মহান দায়িত্বটি চাপাইয়া সরকারি বিদ্যালয়গুলি ঠিক কী করিতেছে? বেসরকারি বিদ্যালয়গুলি তৈরিই হইয়াছিল প্রয়োজনীয় সরকারি উদ্যোগের অভাবে। এখনও কি সেই খামতি সংশোধনের যথেষ্ট চেষ্টা হইতেছে? তাহা যদি করা হইত, তবে কি মূল সমস্যার অনেকাংশেই সমাধান হইয়া যাইত না? দুর্বল ছাত্রছাত্রীরা সংখ্যাগত ভাবেও বেশি উপকৃত হইত না?
দ্বিতীয় ক্ষেত্র অর্থাৎ কেন্দ্রীকরণের প্রসঙ্গে বলিতে হয়, গোটা দুনিয়া যখন বিকেন্দ্রীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বশাসনের দিকে অগ্রসর হইতেছে, সিব্বলের সংস্কার তখন আশ্চর্য অদূরদর্শী অবিবেচনার সহিত কেন্দ্রীয় শিক্ষাশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠার ব্রতে উদ্যোগী! এত বড় দেশের সর্বত্র এমন শৃঙ্খল প্রতিষ্ঠা কি সম্ভব? না, সঙ্গত? সমস্যাটি বিশেষ ভাবে তীব্র আই আই টি-র ক্ষেত্রে। আই আই টি-গুলি যে উৎকর্ষের স্বাক্ষর রাখিয়া আসিয়াছে, তাহাতে স্বশাসন ত্যাগ করিবার আদেশের মধ্যেই অত্যন্ত অন্যায় জুলুম রহিয়াছে। আরও একটি বৃহত্তর নীতির প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক। উৎকর্ষকে বাদ দিয়া নিশ্চয়ই উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন করা চলে না। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা কেবল সংখ্যাগত বিচারে নয়, গুণগত বিচারে নির্ধারণযোগ্য। তাহাই যদি হয়, তবে উৎকৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলিকে গণতান্ত্রিকতার নীতিতে টানিয়া নামাইয়া দেশব্যাপী অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের সহিত একাসনে বসাইয়া দেওয়ার অর্থ কী? ইহা শিক্ষামানের সিঁড়ি দিয়া নয় পা উঠিয়া দশ পা নামিয়া যাওয়া নয় কি?
সিব্বলের অপর সংস্কার, সি বি এস ই বোর্ডের দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হইতে ইচ্ছামূলক করিয়া দিবার সিদ্ধান্তটিও। পরীক্ষার বিকল্প হিসাবে প্রস্তাবিত সি সি ই (কন্টিনিউয়াস অ্যান্ড কমপ্রিহেনসিভ ইভ্যালুয়েশন) নামক পদ্ধতিটির কার্যকারিতা লইয়া যখন বিদ্যালয়-স্তরেই এখনও এত সংশয়, এত অব্যবস্থা, সেখানে এই সংস্কারও শেষ অবধি অকার্যকর হইবে না কি? নূতন মন্ত্রকের ভার লইয়া রাজু এই সব গোড়ার প্রশ্নের মুখোমুখি হইলে মঙ্গল। নতুবা, দেশের শিক্ষা-ক্ষেত্রে অকার্যকর, অদূরদর্শী সংস্কার প্রচলনের দায়ভার লইয়াই মনমোহন সিংহকে নির্বাচনের আসরে নামিতে হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.