মৃত বেড়ে ৯০
জ্বালানি নিয়ে মারামারি স্যান্ডি-বিধ্বস্ত আমেরিকায়
যেন হলিউডের কোনও ছবির দৃশ্য। পেট্রোল পাম্পের সামনে লম্বা গাড়ির লাইন। ফুরিয়ে যাচ্ছে পেট্রোল। আর তখনই শুরু হচ্ছে গোলমাল। ডাকতে হচ্ছে পুলিশ। নিউ ইয়র্ক-সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানা প্রান্তে অবশ্য এটাই এখন একেবারে বাস্তব চিত্র। ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডির দাপটের পরে বিদ্যুৎহীন অবস্থা ও অন্যান্য অসুবিধার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পেট্রোলের নিদারুণ অভাব। ফলে, কখনও কখনও জরুরি পরিষেবা ও উদ্ধারকার্যও বাধা পাচ্ছে।
স্যান্ডি আছড়ে পড়ার আগেই নিউ ইয়র্ক এলাকার বেশ কিছু বন্দর ও তেল শোধনাগার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে সেগুলি। পাশাপাশি অনেক পেট্রোল পাম্পে বিদ্যুৎ না থাকায় তেল নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে, পেট্রোল নিয়ে হাহাকার দেখা দিয়েছে।
নিউ জার্সির একটি পেট্রোল পাম্পের মালিক অভিষেক সোনি। ৩৬ ঘণ্টা ধরে মোট ১৭ হাজার গ্যালন তেল পাম্প করেছেন তিনি। জানালেন, রীতিমতো অসুস্থ বোধ করছেন। বৃহস্পতিবার রাতে তেল নিয়ে তাঁর পাম্পে গোলমাল হয়েছে। পুলিশ ডাকতে হয়েছে সোনিকে।
নিউ ইয়র্কের এক পেট্রোল পাম্পে লম্বা লাইন। শুক্রবার রয়টার্সের ছবি।
গাড়ির পাশাপাশি অনেকে জেনারেটর চালাতেও জ্বালানির খোঁজ করছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় নভেম্বরের শীতে আলো আর উত্তাপের জন্য জেনারেটরের উপরে নির্ভর করা ছাড়া পথ নেই। ফলে, আরও চাপ পড়েছে পেট্রোল ও ডিজেলের সরবরাহের উপরে।
বৃহস্পতিবার রাতে অভিষেক সোনির পাম্পের মতো চিত্র দেখা গিয়েছিল ম্যানহাটনের হেস পাম্পেও। আটটি ব্লক জুড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল গাড়ির লাইন। হঠাৎ মারামারি শুরু হয় ক্রেতাদের মধ্যে। তিন জন অফিসারকে পাঠাতে বাধ্য হয় পুলিশ। এখন অনেক পাম্পেই গাড়ির লাইন ও গোলমাল সামলাতে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।
পেট্রোলের খোঁজে নিজের রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে মাইলের পর মাইল চলে যাচ্ছেন অনেকে। টুইটারে চেষ্টা করছেন কোন পাম্পে তেল আছে তার খবর নিতে। সে ভাবেই দু’মাইল দূরের ভ্যালি স্ট্রিমের একটি পাম্পের খবর পেয়েছিলেন কুইন্সের বাসিন্দা জ্যাসন ব্রাউন। অবশ্য সেখানেও এক মাইলের বেশি লম্বা লাইন। ব্রাউনের কথায়,“ যে ভাবেই হোক আজ পেট্রোল জোগাড় করতে হবে।”
কেবল ব্যক্তিগত গাড়ি নয়, দমকল, পুলিশের মতো জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রেও পেট্রোলের অভাব সমস্যা তৈরি করছে।
সমস্যা মেটাতে অবশ্য চেষ্টার কসুর করছে না প্রশাসন। ইতিমধ্যেই নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সির বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বাইরের সংস্থার কাছ থেকে পেট্রোল কেনার বিষয়ে নিউ জার্সিতে কিছু বাধানিষেধ আছে। সেগুলিও আপাতত শিথিল করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা দফতর মারফত আড়াই লক্ষ গ্যালন পেট্রোল ও পাঁচ লক্ষ গ্যালন ডিজেল নিউ জার্সিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
আজ কিছুটা হলেও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরেছে নিউ ইয়র্কে। তবে দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনও মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০। এখনও বিদ্যুৎহীন ৩০ লক্ষ গ্রাহক। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫ হাজার কোটি ডলার। এই হিসেবে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
স্যান্ডির তাণ্ডবের আগে নিউ ইয়র্কের অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ ছিল রাষ্ট্রপুঞ্জও। বৃহস্পতিবার থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জ দফতরের ক্ষয়ক্ষতির হিসেব শুরু করেছেন অফিসাররা। স্যান্ডির সময়ে জলোচ্ছ্বাসের ফলে জল ঢুকে এসেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের দফতরে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও অন্যান্য কিছু বৈদ্যুতিক যন্ত্র। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রেসের অবস্থাও শোচনীয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার হলের মাথা একটি প্লাস্টিকের চাদর দিয়ে ঢাকা থাকে। চাদরটি ছিঁড়ে গিয়েছে। হলের সামনের দরজাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান-কি মুনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, উদ্ধারকার্যের বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির পাশেই আছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে সক্রিয় রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিবাহিনী ও অন্যান্য প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ বজায় আছে বলেও জানান তিনি। তাঁর দাবি, কয়েক দিনের মধ্যেই রাষ্ট্রপুঞ্জ দফতর পুরো দমে কাজ শুরু করবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.