প্রতারণার অভিযোগে ১৬ সপ্তাহের লটারির বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গ জুড়ে অভিযানে নামল পুলিশ। গত তিন দিন ধরে শিলিগুড়িতে অভিযান চলছে। বুধবার সকালে মালবাজারের ক্যালটেক্স মোড়ের একটি পেট্রোল পাম্পে হানা দিয়ে লটারির ব্যানার সহ একটি দশ চাকার ট্রাকের চেসিস, দুটো ছোট গাড়ি, দুটো বাইক, ৪টি রেফ্রিজারেটর, ৭টি ওয়াশিং মেশিন, ৯টি ইন্ডাকশন কুকিং ওভেন এবং বেশ কয়েকটি সিলিং ও টেবিল ফ্যান আটক করে। এদিকে, মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ ভক্তিনগড় থানার শক্তিগড়ে উজ্জ্বল সঙ্ঘ ক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দাদের একাংশ। সেই সময় ওই ক্লাবের পুজো মণ্ডপ এবং সেখানে চলতে থাকা একটি মেলার আসর ভেঙে তা ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তা আটকে রাখেন বাসিন্দারা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শিলিগুড়ির ডেপুটি কমিশনার ও জি পাল বলেন, “লাইন্সেস ছাড়া যে লটারি খেলার আয়োজন করা হয়েছিল সেগুলি বন্ধ করে দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেশ কিছু জিনিসত্র আটক করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার “অবৈধ লটারির বিরুদ্ধে জেলা জুড়েই অভিযান চলছে। জলপাইগুড়ি শহর থেকে কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মালবাজারেও অভিযান চালানো হয়েছে। এর পেছনে জড়িতদের বিরুদ্ধেও আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশ সূত্রের খবর, শুধু শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি নয়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকাতেই ১৬ সপ্তাহের লটারি খেলার আয়োজন করা হয়েছে। ১৬ সপ্তাহের প্রতি সপ্তাহে ১৬ হাজার টিকিট বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হাওড়া ও মালদহের একটি চক্র ওই খেলার ছক কষে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। দুর্গা পুজোর সময় তারা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ক্লাবকে ব্যবহার করে খেলার আয়োজন করে। ইতিমধ্যেই কয়েক কোটি টাকা তারা বাজার থেকে তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ি কমিশনারেটের পুলিশ ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ২ জনকে গ্রেফতার করলেও হাওড়ার শিবপুর ও মালদহের প্রধান দুই অভিযুক্ত এখনও ফেরার। মালবাজারে গোল্ডেন অ্যারো ও হ্যাপি চেম্বার নামে দুটি ক্লাবের পরিচালনায় ওই লটারি চলছিল। ইতিমধ্যে সেখানে দ্বিতীয় সপ্তাহের খেলা হয়ে গিয়েছে। শিলিগুড়িতে জেলার তৃণমূল নেতারা ওই খেলার বিরোধিতা করলেও মালবাজারের ওই দলের কয়েকজন নেতা লটারি খেলার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠেছে। গোল্ডেন অ্যারো ক্লাবের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক তথা মালবাজার ব্লক তৃণমূল নেতা শুভাশিস ঘোষ বলেন, “মালবাজারে মানুষ লটারির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি। তা সত্ত্বেও কেন খেলা বন্ধ করানো হল বুঝতে পারছি না।” ওই ক্লাবের লটারি কমিটির সভাপতি দেবায়ন ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা স্বচ্ছ ভাবে দু’সপ্তাহ খেলা চালিয়েছি।” হ্যাপি চেম্বার ক্লাবের সভাপতি হিসেবে বিকাশ দে বলেন, “ভিন জেলার উদ্যোক্তারা এসে খেলা চালাতে অনুরোধ করেছিলেন বলে রাজি হয়েছিলাম। তখন ওই লটারি যে আসলে অবৈধ তা বুঝতে পারিনি। তবে আমরা স্বচ্ছ ভাবে খেলা করিয়েছি।” মঙ্গলবার রাতে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের পুলিশ শিবমন্দির ও প্রধাননগর এলাকায় অভিযান চালায়। সেখানেও দুটি ক্লাবে লটারি খেলার আয়োজন করা হয়েছিল। পুলিশ অবশ্য কাউকে খুঁজে পায়নি। রাত ১১টা নাগাদ উজ্জ্বল সঙ্ঘের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে লটারি কেনার টাকার দাবি করেন বাসিন্দাদের একাংশ। |