১৬-১-৫২-২। মুম্বইয়ের পড়ন্ত বিকেলেও ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামের স্কোরবোর্ডে তাঁর নামের পাশে এই সংখ্যাগুলো যেন বেশ উজ্বল। এ হল বুধবার যুবরাজ সিংহের সারা দিনের পরিশ্রমের খতিয়ান। যা দেখে খুশি হওয়াই উচিত ছিল ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনির।
যুবরাজের এই পারফরম্যান্সে ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকের সেঞ্চুরি বা স্পিনার সমিত পটেলের ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংস ঢাকা পড়ে যায়নি ঠিকই, কিন্তু ভারতীয় টেস্ট দলে নিজের জায়গাটা সম্ভবত পাকা করে নিলেন বাঁ-হাতি। ফার্স্ট পেপারে (ব্যাটিং) তো আগেই উতরেছেন। এ বার সেকেন্ড পেপারেও (বোলিং) উতরে গেলেন!
ব্যাটে সফল হওয়ার পরে বোলার যুবরাজের কাছেও একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। সেটা পূরণ হওয়ায় মিলে গেল চাওয়া-পাওয়ার হিসাব।
মুম্বইয়ের চড়া রোদে সারা দিন মাঠে থেকে যুবরাজ যখন ১৬ ওভার বোলিং করে গেলেন, তখন দিল্লিতে নিজের জিম উদ্বোধন করে সাংবাদিকদের কাছে ধোনি সন্দেহ প্রকাশ করছেন, আদৌ যুবি টেস্টে প্রয়োজনে টানা দু’দিন মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন কি না। ব্রেবোর্নে উপস্থিত নির্বাচকরা অবশ্য গত দু’দিন ধরে যুবরাজের গতিবিধি বেশ মন দিয়েই দেখলেন। দেখলেন, আগের দিন টানা এক ঘণ্টা চল্লিশ মিনিট ব্যাট করার পর কী ভাবে বুধবার সারা দিন ধরে বল করে গেলেন তিনি। ধোনি হয়তো নিজের চোখে এই লড়াই দেখলে বুঝতে পারতেন যুবি কতটা ফিট। নির্বাচকরা অবশ্য সেটা বুঝে নিলেন। আগামী সোমবার যখন এই শহরেই টেস্ট দল বাছতে বসবেন সন্দীপ পাটিলরা, তখন সম্ভবত তাঁদের ভোট থাকবে যুবরাজের দিকেই। তা অধিনায়ক যা-ই ভেবে থাকুন না কেন।
সেকেন্ড পেপারের চাপ বলে কথা। বেশ টেনশনে ছিলেন যুবির মা শবনম। ছেলের সঙ্গে আসেননি বলেই বোধহয় এত টেনশন। ব্রেবোর্নে থাকা এক বন্ধুর মোবাইলে দশ মিনিট বাদে বাদেই তাঁর মেসেজ আসছিল, ছেলে কেমন বোলিং করছে জানতে চেয়ে। হঠাৎ কে যেন তাঁর কানে তুলে দেন, পাঁচ উইকেট পেয়ে গিয়েছেন যুবি, তাতে উত্তেজনাটা আরও বেড়ে যায়। আরও ঘনঘন মেসেজ করতে থাকেন। তবে একটু পরেই জানতে পারেন, পাঁচ নয়, দু’টো উইকেট পেয়েছে তাঁর ছেলে। |
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে ছ’নম্বর জায়গার জন্য বোলিংটা যে বোনাস নম্বর এনে দেবে, তা বোধহয় জানতেন সুরেশ রায়নাও। তাই ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর বুধবার বল হাতে সফল হওয়ার চেষ্টা করলেন ঠিকই, তবে জোনাথন ট্রটকে ফেরানো ছাড়া তাঁর ঝুলিতে আর কোনও সাফল্য নেই। যুবরাজ বরং এ দিক থেকে রায়নার চেয়ে কিছুটা এগিয়ে। নিজের বলেই ক্যাচ নিয়ে ফেরান শুরু থেকে মারমুখী মেজাজে থাকা কেভিন পিটারসেনকে। ইয়ান বেলকেও ফেরান যুবি। ইংল্যান্ড টিমে স্পিন খেলতে পারার ব্যাপারে সবথেকে দক্ষ দুই ব্যাটই যুবির বাঁ হাতি স্পিনের শিকার। এর মধ্যে কুক যখন ৮৮-তে তখন স্টাম্পের পিছনে ঋদ্ধিমান তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে আসা ক্যাচ না ফেললে তিন উইকেট হয়ে যেত যুবরাজের। ঋদ্ধিমান এ দিন সমিত পটেলের দেওয়া ক্যাচও ফেলেন তাঁর ২৯ রানে।
মনোজের কীর্তির ধারাবাহিকতা বরং কিছুটা হলেও ধরে রাখতে পারলেন অশোক দিন্দা। দলের চার পেসারের মধ্যে তাঁর পারফরম্যান্সই সেরা। যদিও ১৬-২-৪৬-১-এর বিশ্লেষণ সেই কথা বলছে না। তবে পাঠান, বিনয়, আওয়ানার চেয়ে দিন্দাকে শুধু বেশি গতিশীল দেখায়নি, ছন্দময়ও দেখিয়েছে। সমিত পটেলও ম্যাচের পর ভারতীয় পেস বিভাগকে ভাল নম্বরই দিয়ে গেলেন।
কিন্তু নির্বাচকদের ভোট যদি যুবির দিকেই থাকে, তা হলে রায়না-মনোজের ভবিষ্যৎ কী? এই লড়াইয়ে নির্বাচকরা বুধবার রাত পর্যন্ত মনোজের দিকেই ঝুঁকে। তবে ধোনি তাঁর চেন্নাই সুপার কিংসের সতীর্থকে বাদ দিতে চাইবেন কি না, সেটাই প্রশ্ন। ৫ তারিখ টেস্ট দল নির্বাচনী বৈঠকে ধোনির ভোট কোন দিকে যায়, তার উপর মনোজ, এমনকী হয়তো বা যুবরাজের ভাগ্যও ঝুলে থাকতে পারে।
সুরেশ রায়না অবশ্য মানতে রাজি নন, তিনি ফর্মে নেই। বিকেলে খেলার পর বললেন, “আমি নিজের ব্যাটিং নিয়ে চিন্তিত নই। এই ইনিংসে রান পাইনি, পরের ইনিংসে পাব।” তবে মনোজের প্রশংসা না করে পারলেন না। বললেন, “দারুণ ব্যাট করেছে মনোজ। ওর ফিল্ডিংটাও যথেষ্ট ভাল।”
এখন একটাই প্রশ্ন, অধিনায়কের ভোট কোন দিকে যাবে?
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত এ ৩৬৯। ইংল্যান্ড এ ২৮৬-৪ (কুক ১১২ ব্যাটিং, সমিত ৮২ ব্যাটিং)। |