|
|
|
|
|
|
কুবের উবাচ |
জয়দীপ পাল (৩৫) স্ত্রী আশাকণা (৩০) মা চম্পা পাল (৬৬) ছেলে সৌম্যদীপ (৪)
• কর্তা ব্যবসায়ী • মা অংশীদার • গিন্নি গৃহবধূ • ছেলে পড়ে লোয়ার কেজি-তে
• ইচ্ছে দু’তিন বছরে বাড়ি-গাড়ি
• লক্ষ্য, ছেলের উচ্চশিক্ষার টাকা জোগাড়ও
|
জয়দীপ
মাসে নিট আয় ৫০,০০০ |
টাকা রাখেন (বছরে) |
• পিপিএফ
৫০,০০০ |
• জীবন বিমা (এনডাওমেন্ট)
৫০,০০০ বিমার মূল্য ১২ লক্ষ |
• চিল্ড্রেনস প্ল্যান
২২,০০০ |
• বিমার মূল্য ৫ লক্ষ |
• পরিবারের স্বাস্থ্য বিমা
১২,৫০০ |
• বিমার মূল্য ২.৫ লক্ষ |
• মিউচুয়াল ফান্ড (এসআইপি)
১,৮০,০০০(নিজের, স্ত্রীর এবং মায়ের) |
মাসে খরচ (সংসার খরচ বাদে) |
• ৩৫,০০০ |
সম্পদ |
• স্থায়ী আমানত
২,৫০,০০০(বাবার থেকে পাওয়া) |
• পরিকাঠামো বন্ড
৩০,০০০
(২০১০-’১১ ও ২০১১-’১২ সালের) |
• এসবিআই গোল্ড ফান্ড
১,০০,০০০(শ্বশুরমশাইয়ের থেকে পাওয়া) |
• রিলায়্যান্স গোল্ড সেভিংস ৫০,০০০(শ্বশুরমশাইয়ের থেকে পাওয়া) |
|
|
|
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
জয়দীপ এখন থেকেই স্পষ্ট করে ফেলেছেন নিজের লক্ষ্য। দু’তিন বছরের মধ্যে বাড়ি ও গাড়ি কিনতে চান। টাকা জমাতে চান সে জন্য। ব্যবসায় ওঠা-পড়ার কথা মাথায় রেখে ভবিষ্যতের সঞ্চয়ের দিকেও নজর রয়েছে তাঁর। চিন্তা রয়েছে ছেলের পড়াশোনারও। আসুন, এই সব লক্ষ্য পূরণের পথ খুঁজি।
লক্ষ্য
গাড়ি কেনা
ধরে নিচ্ছি জয়দীপ মাঝারি দামের (৫ লক্ষ টাকা) গাড়ি কিনতে ইচ্ছুক। ২০% (এক লক্ষ) ডাউনপেমেন্ট করেই তা কেনা সম্ভব। বাকিটা ৫ বছরের মাসিক কিস্তিতে দিতে পারেন। দেখি, সেই ডাউনপেমেন্ট জোগাড় হবে কী ভাবে।
উপায় ১: ওভার ড্রাফট বা ঋণ
স্থায়ী আমানত থেকে ওভার ড্রাফট বা ঋণ নিতে পারেন। এ ভাবে প্রায় ৯০% পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। দিতে হয়
না নির্দিষ্ট মাসিক কিস্তিও। শুধু আমানত থেকে যা সুদ পাচ্ছেন তার থেকে ২% বেশি শোধ দিতে হয়। বাকি থাকছে ৪ লক্ষ টাকা। এ জন্য কিস্তি পড়তে পারে প্রায় ৯ হাজার। তবে ব্যবসার মূলধনে হাত না দিয়েই এই সুবিধা নিতে হবে।
উপায় ২: সংস্থার নামে গাড়ি
চাইলে নিজের সংস্থার নামে গাড়ি কিনতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সংস্থার খরচের খাতায় এই ব্যয়টিও যোগ হবে। কর দেওয়ায় সুবিধা পাবেন আপনি।
বাড়ি কেনা
এখন ২৫ লক্ষ টাকা দামের বাড়ি কিনতে হলে জয়দীপকে ডাউনপেমেন্ট করতে হবে প্রায় ৫ লক্ষ (দামের ২০%)। কিছু ক্ষেত্রে তা ১৫%-ও হতে পারে। এ ক্ষেত্রেও ওভার ড্রাফটের সুবিধা নিতে পারেন। সঙ্গে যোগ হতে পারে মিউচুয়াল ও গোল্ড ফান্ডের টাকা।
এ বার মাসিক কিস্তির অঙ্ক হিসাব করে দেখি
ঋণ: ২০ লক্ষ
মেয়াদ: ২০ বছর
মাসিক কিস্তি: ২০,০০০ টাকার বেশি
এই মুহূর্তে কী আদৌ জয়দীপের পক্ষে এই কিস্তি দেওয়া সম্ভব?
আসুন দেখি
• জয়দীপ ও তাঁর মায়ের মোট আয় মিলিয়ে হয়তো কিস্তি দেওয়া সম্ভব। কিন্তু এটি পারিবারিক সিদ্ধান্ত।
• ডাউনপেমেন্টের অঙ্ক বাড়িয়ে ঋণের পরিমাণ কমানো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে এসআইপি বা অন্যান্য খাতে লগ্নি কমাতে হবে। কিন্তু তা ভবিষ্যতের সঞ্চয়কে সমস্যায় ফেলতে পারে।
• পাল পরিবারের নিজেদের বাড়ি রয়েছে। ফলে সমাধান রয়েছে দু’টি
(১) জয়দীপ চাইলে সেই বাড়ি বিক্রি করে ডাউনপেমেন্টের প্রয়োজন মেটাতে পারেন।
(২) বাড়ির অংশ ভাড়া দিয়ে মাসিক কিস্তি দিতে পারেন।
পারিবারিক চাহিদা এবং আর্থিক ক্ষমতার কথা মাথায় রেখেই জয়দীপের বাড়ি কেনায় হাত দেওয়া উচিত। এখনই কিনলে, টাকা জোগাড়ের জন্য কোমর বাঁধতে হবে। আবার কয়েক বছর পরে কিনলে টাকা জমানোর সুযোগ মিললেও দাম বাড়বে বাড়ির।
ধরা যাক, ৩ বছর পর বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিলেন জয়দীপ। আর তখন বাড়ির দাম বেড়ে দাঁড়াল ৩০ লক্ষ টাকা। ফলে তখন ডাউনপেমেন্ট করতে হবে ৬ লক্ষ। এর জন্য রেকারিং ডিপোজিট খুলে রাখা যায়। বাজারের দোলাচলে কম মেয়াদের এসআইপি এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়। অতএব
৩ বছর পরে প্রয়োজন: ৬ লক্ষ টাকা
সুদ: ৮.৭৫%
প্রতি মাসে লগ্নি: ১৪,৫০০ টাকা
কিন্তু এখনকার আয় ও ব্যয়ের হিসেবে ৩ বছরে এই টাকা জোগাড় করা সমস্যা হতে পারে জয়দীপের পক্ষে। ফলে সব বুঝেশুনে তবেই বাড়ি কেনার সময় ঠিক করতে হবে তাঁকে। |
|
পাল পরিবারের ছবিটি তুলেছেন সুদীপ্ত ভৌমিক |
সৌম্যদীপের পড়াশোনা
ছেলের বয়স এখন ৪। সুতরাং আরও ১৪ বছর পর সে কলেজে যাবে। ধরে নিচ্ছি স্নাতক-স্নাতকোত্তর স্তর মিলিয়ে এখনকার হিসেবে পড়ার খরচ ২০ লক্ষ টাকা। মূল্যবৃদ্ধি মাথায় রাখলে তা হবে প্রায় ৪৫ লক্ষ। এখন থেকেই কী ভাবে তার জন্য তৈরি হতে পারেন জয়দীপ?
উপায় ১: চাইল্ড প্ল্যান
ধরে নিচ্ছি, চাইল্ড প্ল্যানে কভারেজ-এর উপর জয়দীপের গুরুত্ব বেশি। কারণ তিনি বাড়ির প্রধান উপার্জনকারী। বেশির ভাগ প্ল্যানেই কয়েকটি ভাগে টাকা ফেরত পাওয়া যায় (যেমন বাচ্চার বয়স ১৬, ১৮ বা ২১ বছর হলে)। ফলে বছরে ২২ হাজার করে দিলে সৌম্যদীপের ২১ বছর হওয়া পর্যন্ত ৮-১০ লক্ষ টাকা জমবে।
উপায় ২: মিউচুয়াল ফান্ড
পাল পরিবারের ৫,০০০ টাকা করে মোট ৩টি সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি) রয়েছে। মায়ের নামে যে এসআইপি আছে, তা ভবিষ্যতের হঠাৎ প্রয়োজনের জন্য তুলে রাখা যায়। অন্য দু’টি এসআইপি-তে ইতিমধ্যেই ১,২০,০০০ টাকা জমেছে। সৌম্যদীপের ১৮ বছর হওয়া পর্যন্ত এই লগ্নি বজায় রাখলে তা হলে কত জমতে পারে?
মেয়াদ: ১৪ বছর
লগ্নি: মাসে ১০ হাজার
মেয়াদ শেষে প্রাপ্য: ৪৩ লক্ষ টাকা (রিটার্ন ১২% ধরে)
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সব মিলিয়ে ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করা কঠিন হবে না জয়দীপের পক্ষে।
অবসর পরিকল্পনা
জয়দীপ স্থায়ী চাকরি করেন না। আলাদা ভাবে পেনশন প্রকল্পও নেই। তাই অবসরের আয় হিসেবে কাজে আসবে সঞ্চয়ের অর্থই। কী ভাবে সেই তহবিল তৈরি করতে পারেন তিনি?
উপায়: চার প্রকল্পে মেপে লগ্নি
(১) পিপিএফে বছরে এক লক্ষ টাকা করে রাখলেও ১৫ বছরে তা বেশ বড় একটি অঙ্কে দাঁড়াবে।
(২) এনডাওমেন্ট পলিসিতে রিটার্ন তুলনায় কম। কিন্তু যেহেতু তাঁর বিমা মূল্য ১২ লক্ষ টাকা, তাই অবসরের সময় তা বড় রিটার্ন দেবে।
(৩) পেনশন প্রকল্পে মোটা অঙ্কের লগ্নির কথা ভাবুন।
(৪) আলাদা ভাবে নিতে পারেন টার্ম পলিসি এবং তুলনায় কম অঙ্কের পেনশন প্রকল্পও।
স্বাস্থ্য বিমা
পরিবারের জন্য ২.৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা যথেষ্ট নয়। আমার মতে, এই অঙ্ক ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা হওয়া উচিত। তাই ধীরে ধীরে এই কভারেজ বাড়ান।
আপৎকালীন ব্যবস্থা
জয়দীপ ব্যবসায়ী। তাই আপৎকালীন অবস্থার জন্য সব সময়ই প্রস্তুত থাকা জরুরি। কী ভাবে?
উপায়: ৩ রাস্তায় হাঁটা
(১) কিছু নগদ অর্থ এবং গোল্ড ফান্ডের টাকা সরিয়ে রাখা।
(২) রেকারিং ডিপোজিট খোলা।
(৩) মেয়াদ ফুরোলে পরিকাঠামো বন্ডের অর্থ স্থায়ী আমানত হিসেবে ব্যাঙ্কে রাখা। |
|
|
|
|
|