মৃত বেড়ে ৫৯
স্যান্ডির ধাক্কা সামলাতে নাজেহাল আমেরিকা
কেউ কেঁদে চলেছেন অঝোরে। কেউ বা গভর্নরকে সামনে পেয়ে হাহাকার করছেন নাগাড়ে। হারিকেন স্যান্ডির দাপটে মাত্র দু’দিনেই বদলে গিয়েছে এঁদের জীবন। ঘর-বাড়ি-প্রিয়জন স্যান্ডি কেড়ে নিয়েছে সব কিছুই।
ছবির মতো সাজানো গোছানো শহরগুলোকে দুমড়ে-মুচড়ে, ইতিহাসের যাবতীয় রেকর্ড ভেঙে, স্যান্ডি এখন অনেকটাই নিস্তেজ। দেশ জুড়ে রেখে গিয়েছে শুধু তার তাণ্ডবের নানা চিহ্ন। এখনও পর্যন্ত ৫৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। শুধু মাত্র নিউ ইয়র্কেই প্রাণ গিয়েছে অন্তত ২৪ জনের। স্যান্ডির হানায় সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ ইয়র্ক আর নিউ জার্সি। অনাবাসী ভারতীয়দের অধিকাংশই থাকেন এই দুই শহরে। জলে ডুবে থাকা বাড়ি-ঘর থেকে তাঁদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উত্তর সালেমে নিজেদের ঘরে বসেছিল এগারো ও তেরো বছরের দুই বন্ধু। ঝোড়ো হাওয়ায় ৯০ ফুট লম্বা একটি গাছ তাদের ঘরের উপর ভেঙে পড়লে বাড়ির মধ্যেই মারা যায় তারা। অন্য দিকে পনেরো মাসের একটি শিশু-সহ সাত আত্মীয়কে বাঁচিয়েও বাড়ির বেসমেন্ট থেকে আর নিজে বেরিয়ে আসতে পারেননি এক পুলিশ কর্মী। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আজ শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ।
স্যান্ডি আছড়ে পড়তে পারে যে কোনও মুহূর্তে, এই সতর্কবার্তা ছিলই। কিন্তু প্রকৃতির রোষের সামনে খাড়া করা যায়নি বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ। বরং ২৪ ঘণ্টারও বেশি পেরিয়ে যাওয়ার পর দু’হাজার কোটি ডলার ক্ষতির খতিয়ান দিয়েছে প্রশাসন।
ধ্বংসস্তূপ। স্যান্ডির দাপটে বেহাল নিউ জার্সির সমুদ্র সৈকত। ছবি: এপি
এক দিকে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ও ওহায়ো ৩ ফুট উঁচু বরফের চাদরে ঢেকে গিয়েছে। আবার কুইন্সে একশোরও বেশি বাড়ি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন প্রদেশে নিষ্প্রদীপ প্রায় ৮০ লক্ষ বাড়ি। আলো ফিরতে আরও তিন-চার দিন সময় লাগবে বলে ধারণা কর্তৃপক্ষের।
গত দু’দিন ধরে বন্ধ রয়েছে সদাব্যস্ত নিউ ইয়র্কের সাবওয়ে। মেট্রোপলিটন পরিবহণ সংস্থার এক কর্তা জানান, যতটা ভাবা হয়েছিল স্যান্ডি ছাপিয়ে গিয়েছে তাকে। লোয়ার ম্যানহাটনের ১ নং লাইনের দিকে সাউথ ফেরি সাবওয়ে স্টেশনের মধ্যে ঢোকা জল ছুঁয়েছে ছাদের মাথা। লাইন জলের নীচে থাকায় এবং বিদ্যুৎ না থাকায় বিঘ্নিত রেল যোগাযোগ।
জন এফ কেনেডি ও লা গার্ডিয়া বিমানবন্দরের রানওয়ে জলের তলায়। ফলে বাতিল উড়ানের সংখ্যা ছাপিয়ে গিয়েছে ১৮ হাজার। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, আজ অল্প সময়ের জন্য এক বার খোলা হয়েছিল কেনেডি বিমানবন্দর। কাল ভারত থেকে নিউ ইয়র্কগামী জেট এয়ারওয়েজ ও এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ছাড়বে।
আর ছ’দিন পরই আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। স্যান্ডির পর অবশ্য নির্বাচনী প্রচার আপাতত শিকেয় তুলে পরিস্থিতি সামল দিতে ব্যস্ত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কুড়ি জন গভর্নরের সঙ্গে কনফারেন্সে কথা বলেছেন তিনি। বুধবার নিউ জার্সির গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টির সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখবেন ওবামা। নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সির জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি নিউ ইয়র্ক ও রড আইল্যান্ডে ত্রাণের জন্য ১ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার অনুদান ঘোষণা করেছে ওবামা প্রশাসন।
তবে চারিদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই কিছুটা হলেও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে ওয়াশিংটন, ফিলাডেলফিয়া, বস্টনের মতো অঞ্চল। ১৮৮৮ সালের পর এই প্রথম দু’দিন বন্ধ ছিল মার্কিন শেয়ার বাজার। আজ নিউ ইয়র্কের মেয়র মিশেল ব্লুমবার্গ ঘণ্টা বাজিয়ে খুলে দেন শেয়ার বাজারের দরজা। সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে বসানো হয়েছে জেনারেটর। খোলার পর পরই শেয়ার বাজারের মুখ ছিল উপরের দিকে। দিনের শুরুতেই ডাও জোন্স সূচক বাড়ে ৬৫ পয়েন্ট। তবে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতর বন্ধ থাকছে আজও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.