নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
এত দিন রাজ্যের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের অভাবকেই লগ্নি আসার সমস্যা বলে ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু হলদিয়ায় শনিবার রাতে যে ঘটনা ঘটে গেল, তাতে এ রাজ্যকে এ বার বিপজ্জনক গন্তব্য হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে শিল্প ও বণিকমহল।
হলদিয়ায় এবিজি-র তিন কর্তাকে (এক জনকে সপরিবার) অপহরণের ঘটনায় শিল্পমহল বিস্মিত শুধু নয়, এই ঘটনা তাদের কাছে রীতিমতো উদ্বেগজনক। আইনের অনুশাসন নিয়েই প্রশ্ন তুলছে তারা। রাজ্যের লগ্নি টানার ক্ষমতা নিয়ে সংশয় তো ছিলই। তার উপরে এ বার যেন ভীতির একটা পরত চেপে বসছে। শ্রম-অসন্তোষকে ঘিরে অপহরণের ঘটনার কোনও নজির শিল্প-কর্তারা খুঁজে পাচ্ছেন না স্মরণকালের মধ্যে। সিঙ্গুরে গোলমালের সময় টাটা মোটরস-এর কর্মীদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হলেও কোনও সংস্থার পদস্থ কর্তাদের আবাসনে ঢুকে তাঁদের পরিবার-সহ অপহরণের ঘটনা শিহরণ জাগাচ্ছে বণিকমহলে। অতীতে রাজ্যে জঙ্গি শ্রমিক আন্দোলনের কথাও মনে পড়িয়ে দিচ্ছে তাদের।
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য রবিবার বলেন, “পুরো বিষয়টি না জেনে কোনও মন্তব্য করব না।’ তবে তাঁর অভিযোগ, এই সমস্যা নিয়ে এবিজি-র কেউ তাঁর কাছে আসেনি। যদিও এবিজি-র দাবি, আলোচনার জন্য তারা শিল্পমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিল। তবে এই চাপানউতোর ছাপিয়ে রাজ্যে লগ্নির পরিবেশ ও আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টিই এখন শিল্পমহলের কাছে মাথাব্যথার কারণ। এবং তা এতটাই যে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের লগ্নিকারীদের একাংশ তাঁদের শঙ্কার কথা সরাসরি বলতেও চাইছে না। এক সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্তার বক্তব্য, “লগ্নির জন্য আইনের অনুশাসন জরুরি। আর্থিক সুবিধা বা জমিই শুধু লগ্নির পূর্ব-শর্ত নয়। বরং লগ্নির পরিবেশ কেমন, সেটা আগে যাচাই করেন লগ্নিকারীরা। তা না থাকলে কোন ভরসায় কেউ লগ্নি করবেন?” |
অ্যাসোচ্যামের কর্তা ডি এস রাওয়াত, মার্চেন্ট চেম্বারের প্রেসিডেন্ট দীপক জালান বা বেঙ্গল চেম্বারের কর্তা পি রায়, সকলেই আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হিসেবে দেখছেন গোটা বিষয়টিকে। এবং তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, আইন-শৃঙ্খলা যে-হেতু রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়, তাই তাদেরই তা নিশ্চিত করতে হবে। রাওয়াত বলেন, “রাজ্য সরকার যখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য নয়া লগ্নি আনার ব্যাপারে দায়বদ্ধ, তখন এই ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
বস্তুত, এ রাজ্যের শিল্প-বিরোধী ভাবমূর্তির কারণে এখানে টাকা ঢালার ব্যাপারে এত দিন দু’বার ভাবতে হয়েছে লগ্নিকারীদের। এই পরিস্থিতিতে কার্যকর পরিবর্তন আসার আগেই ফের অপহরণের ধাক্কা। দীপকবাবুর বক্তব্য, এবিজি-র সঙ্গে ফরাসি সংস্থার গাঁটছড়া থাকায় আন্তর্জাতিক মহলেও অন্য রকম বার্তা যেতে পারে। ফলে ক্ষতি শুধু রাজ্যের নয়, দেশেরও।
রাজ্য সরকার অবশ্য দাবি করেছে, লগ্নিকারীদের আগ্রহ এখন বেড়েছে বই কমেনি। বহু বিনিয়োগও এসেছে। রাজ্যের দাবি যা-ই হোক না কেন, লগ্নিকারীদের আস্থা ফিরে পাওয়া নিয়ে সংশয় স্পষ্ট বণিকসভার কর্তাদের বক্তব্যেই।
বেঙ্গল চেম্বারের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হর্ষ ঝা বলেন, “সরকার সহযোগিতার যে আশ্বাস দিয়েছে তা আমিও বিশ্বাস করি। কিন্তু তার পরও দেখা যাচ্ছে, বছর দুয়েকের মধ্যে বড় কোনও লগ্নি আসেনি। রাজ্যের শিল্পায়ন ও আর্থিক উন্নয়ন কার্যত থমকে রয়েছে।” লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরাতে লগ্নিকারীদের যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যের এখনও অনেক কিছুই করার বাকি রয়েছে বলে মনে করেন রাওয়াতও। কোথাও আইনের অনুশাসন নিয়ে সংশয় থাকলে লগ্নিকারীরা সেখানে বিনিয়োগ করার আগে দু’বার ভাববেন। তাই দেরি হওয়ার আগে অবিলম্বে প্রশাসনকে কঠোর হাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন বণিক সভার কর্তারা। তাঁদের দাবি, “যারা আইন ভাঙছে তাদের গ্রেফতার করতে হবে। যারা আইন মেনে চলছেন, তাঁদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে।”
বাংলার শিল্পায়নের অতীত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি চান না কেউই। তবু প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে লগ্নিকারীদের মানচিত্রে এ রাজ্য ফের ব্রাত্য হয়ে পড়বে বলেই আশঙ্কা শিল্প ও বণিকমহলের।
|
আন্তঃরাজ্য মোটরসাইকেল পাচারচক্রের এক পাণ্ডা গ্রেফতার হল। ধৃতের নাম আজিজুল শেখ। শনিবার রাতে দক্ষিণ শহরতলির ভাঙড় থানা এলাকা থেকে তাকে ধরা হয়। পুলিশ জানায়, দিন তিনেক আগে ঘটকপুকুরে এক দম্পতিকে মারধর করে বাইক ছিনতাই করেছিল তিন দুষ্কৃতী। তদন্তে নেমে পুলিশ আজিজুলকে গ্রেফতার করে। ধৃতের বাড়ি আদতে উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ায়। মাস ছয়েক ধরে ঘটকপুকুর এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিল সে। ধৃতকে জেরা করে বাকি দুষ্কৃতীদের খোঁজ করা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় আজিজুল জানিয়েছে, বাইক ছিনতাই করে বাংলাদেশে বিক্রি করত সে। |