|
|
|
|
|
|
|
কখনও মুগ্ধ কখনও বীতশ্রদ্ধ |
সুনীল ও চলচ্চিত্র |
আমার রচনার চলচ্চিত্র রূপের যে কয়েকটি আমি দেখেছি তার চেয়ে না-দেখা চলচ্চিত্রের সংখ্যাই বেশি। বলেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বহু কাহিনি নিয়ে ছবি হয়েছে, কিন্তু সে সবের অধিকাংশ সম্পর্কেই বীতশ্রদ্ধ ছিলেন তিনি। বলেছেন ‘‘কয়েকটি এমনই শোচনীয় যে আগে থেকে অন্যদের মুখে রিপোর্ট পেয়ে দেখতেই যাইনি। যেমন অনেককাল আগে আমার ‘অর্জুন’ উপন্যাসটি, একটি বাংলা চলচ্চিত্ররূপ পেয়েছিল। যখন শুনলাম আমার প্রিয় অর্জুন চরিত্রটিকে খুবই বিকৃত করা হয়েছে তখন আমার আর দেখারই ইচ্ছে হয়নি।” তবে তাঁর ‘মনের মানুষ’ উপন্যাস থেকে তৈরি গৌতম ঘোষের ছবিটি দেখে রীতিমতো মুগ্ধ ছিলেন তিনি: ‘আমি লালনকে যেভাবে কল্পনায় দেখেছি, চলচ্চিত্রের লালনও তার সঙ্গে খুব মিলে গেছে।... গৌতম দারুণ পরিশ্রম করেছে এই ছবিটি নির্মাণ করার ব্যাপারে।’ এর আগে গৌতমের সঙ্গে তাঁর ‘দেখা’ ছবির চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন সুনীল। ’৮৪-তে দূরদর্শনের জন্যে তাঁর কাহিনি নিয়ে হিন্দিতে ছবি করেন মৃণাল সেন ‘তসবির আপনি আপনি’। |
|
’৭৯-তে তপন সিংহ করেন ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’, বলেন যে ‘গল্পে সুনীলবাবু আন্দামানের নিবিড় একাকীত্বের সৌন্দর্যময় প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলে দেশের সভ্যসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বন্য জারোয়াদের অকৃত্রিম মানবপ্রীতিকে বিবৃত করেছেন অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে। আমি ওই মানবিক ভাবনাকেই সিনেমায় ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি।’ তাঁর কাহিনি থেকে ’৬৯-এ তোলা সত্যজিতের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ দেখে কিন্তু পছন্দ হয়নি সুনীলের। পরের বছরই অবশ্য সত্যজিতের তৈরি তাঁর ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ দেখে পছন্দ হয়েছিল: ‘‘এখানে গল্পের মূল স্পিরিটটা চলচ্চিত্রেও পাওয়া গেছে। লেখক হিসেবে এই চলচ্চিত্রের ব্যাপারে আমি খুশি।” ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’-র ইংরেজি অনুবাদের ভূমিকায় সত্যজিৎ রায় লিখেছিলেন: সুনীলের কাহিনি নেওয়ার একটা কারণ হচ্ছে সুনীলের সংলাপ ও সিচুয়েশনগুলো ফিল্মের পক্ষে অনেকটা সুবিধাজনক। সঙ্গের ছবিতে কলকাতার রাস্তায় ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’-র শুটিংয়ে ধৃতিমান ও সত্যজিৎ।
|
সুকুমার স্মরণ |
হযবরল-য় আছে, বয়স কি ‘কেবলি বেড়ে চলবে নাকি? তাহলেই তো গেছি’। তা বলে বয়স থমকে থাকা সেই সুকুমার রায়ের জন্মের একশো পঁচিশ বছরটা কি আমরা ভুলে যেতে পারি? ৩০ অক্টোবর তাঁর জন্মদিন স্মরণে আবৃত্তির ব্যান্ড ‘মহুল’ সুকুমারের জীবন-সাহিত্য ও দুর্লভ চিত্র নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় (৩০-৩১, ৩-৮টা)। আগামী কাল বিকেল সাড়ে চারটেয় এর সূচনা করবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দু’দিনই রবীন্দ্রসদন মুক্তমঞ্চে আছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা। পত্রিকা ‘স্বপ্নকল্পক’ (সম্পা: সত্রাজিৎ বসু) তাদের সূচনা সংখ্যায় বিশেষ বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছে সুকুমার রায়ের নাটক-কবিতা-বিজ্ঞান চেতনার বিভিন্ন দিক। জানা যাবে ঘরোয়া সুকুমারকেও। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁকে নিয়ে লেখার একটি তালিকা করে দিয়েছেন সন্দীপ দত্ত। এ দিকে বেলতলা শক্তি সঙ্ঘের পুজোয় পরিমল রায়ের পরিকল্পনায় ছিল সুকুমার-তর্পণ, আবোল তাবোল-এর বিখ্যাত সব চরিত্রের ছবি আর প্রচ্ছদে সাজানো (সঙ্গে তারই একটি)।
|
ফিরে দেখা |
শুটিংয়ের আগে গোটা দার্জিলিঙ শহরটা যেন তার সব রঙ নিয়ে উঠে এসেছিল সত্যজিতের চিত্রনাট্যের খাতায়। ষাটের দশকের শুরু, প্রথম রঙিন ছবি করতে চলেছেন সত্যজিৎ, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’। চরিত্রদের পোশাক থেকে পাহাড়ি শহরটার কোথায় কুয়াশা, কোথায় মেঘ, কোথায়-বা রোদ সব কিছু এঁকে সংলাপ লিখেছিলেন তিনি। মুক্তির পঞ্চাশ বছর পর ছবিটিকে ফিরে দেখার উপলক্ষেই সত্যজিতের সেই প্রস্তুতি (সঙ্গে টাইটল কার্ড) প্রকাশ পেল নন্দন-এর নতুন বুলেটিনে (সম্পা: সন্দীপ রায়)। বর্ণময় ঝকঝকে আট পাতার এ-কাগজে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ নিয়ে লেখা ছাড়াও আছে ত্রুফোর ৮০ বছর পূর্তিতে তাঁকে নিয়ে অশোক বিশ্বনাথনের ও নির্মল দে’র শতবর্ষে সূর্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা। রাহুল দেববর্মনকে নিয়ে লেখা বইয়ের আলোচনা শঙ্করলাল ভট্টাচার্যের, আর তথ্যচিত্র নিয়ে অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ের।
|
সম্মান |
শিশু-কিশোর সাহিত্যের উন্নতির জন্য ১৯৫৩-য় সুইজারল্যান্ডের জুরিখে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল বোর্ড অন বুক্স ফর ইয়ং পিপল’ বা আইবিবিওয়াই। এতে সম্মানিত বইগুলি প্রদর্শিত হয় এবং স্থায়ী ভাবে থেকে যায় মিউনিখের ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ লাইব্রেরিতে। এ দেশ থেকে এ বার নির্বাচিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাকাবাবু’ সিরিজের ড্রেডফুল বিউটি (ভয়ঙ্কর সুন্দর), সেরা অনুবাদের জন্য। অনুবাদক নির্মলকান্তি ভট্টাচার্য। প্রকাশক পনিটেল বুকস। নির্মলকান্তি সম্প্রতি পুরস্কার নিলেন লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে। প্রয়াণের আগে এ খবরে খুশি হয়েছিলেন কাকাবাবুর স্রষ্টা।
|
ঘরের পথে |
ছয় দিনের উৎসব শেষে কেউ আগেই ফিরেছেন। শহরের নানা মেগা পুজোয় যাঁদের বায়না হয়েছিল, তাঁদের অনেকের ছুটি আজ। গতকাল ভাসানের বাদ্যি বাজিয়ে আজ ঘরের পথে। আসছে বছর আবার হবে, এই আশায়। কেউ কেউ ফিরবেন কালী বা জগদ্ধাত্রী পেরিয়ে। এই ভাবেই বাপ-ঠাকুর্দার পেশাকে টিকিয়ে রাখা। কুড়ি বছরের কুমোরটুলি পার্কের পুজোয় আঠারো বছর ঢাক বাজাচ্ছেন হুগলির মধুসূদন রুইদাস। বাকি সময় চাষের কাজ। বাবার কাছেই ঢাকে হাতেখড়ি। পরে গুরুর কাছে খুঁটিনাটি শেখা। ভোরের বাজনা, রকমারি আরতি, সন্ধিপুজো বা বিসর্জন সবের তাল-বোল আলাদা। নতুন প্রজন্মের আর অবশ্য ঢাকে আগ্রহ নেই, খুঁজছে অন্য পেশা। তবে মধুসূদনের আসছে বারের বায়না হয়ে গিয়েছে। বছর ঘুরে শহরে আবার দেখা মিলবে ওঁর মতো অনেক ঢাকির।
|
পুজো আসে, পুজো যায় |
কারও বাড়ি সুভাষগ্রাম, কারও বেহালা, কেউ থাকতেন যোধপুর পার্ক। এখন ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম। ফোন বা ক্বচিৎ কারও আসা এটুকুই যোগসূত্র। পুজো ওদের কাছে আলাদা কিছু নয়। সঙ্গী টিভি, খবরের কাগজ। সময় কাটাতে বিজ্ঞাপন পড়া! স্বামী-সন্তান চলে যাওয়ায় বৃ্দ্ধাশ্রমই ঠিকানা কৃষ্ণা গঙ্গোপাধ্যায়ের। বাড়িতে সকলে থাকলেও চলে আসতে হয়েছে আন্নামণি সাহাকে। ‘যে দিন এলাম, সে দিনও জানতাম না, বৃদ্ধাশ্রম কী!’ ছেলেমেয়ে থাকলেও আট বছর বৃদ্ধাশ্রমে তাপস মুখোপাধ্যায়: ‘পরিস্থিতি বাধ্য করল।’ পুজোয় কারও ঠাঁই হয় আত্মীয়বাড়ি। কিন্তু ভাল লাগে না। একাকীত্ব, তবুও স্বাধীন এই ঠিকানায়। ‘কাছে পুজো হয় না। ঢাকের আওয়াজ কানে আসে না। পুজো আসে, পুজো যায়, আমরা টের পাই না।’ বললেন শহরের উপান্তে এক বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দারা।
|
দশে পা |
দশে পা! এতগুলো বছর পেরিয়ে এল কল্পনির্ঝর ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিকশন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। সারা দেশেই এ ধরনের স্বল্পদৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্রের উৎসব বিরল। গোটা দুনিয়ার ফিল্ম স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের বানানো বাছাই ছবি আসে এখানে। আসে পুনে ও সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন থেকেও। সঙ্গে অ্যানিমেশন ছবির অনন্য সম্ভার। নির্বাচিত একগুচ্ছ ভারতীয় ছবি থেকে সেরাগুলিকে দেওয়া হবে প্যাটন পুরস্কার। ১-৫ নভেম্বর ম্যাক্সমুলার ভবনে, গ্যেটে ইনস্টিটিউট ও কল্পনির্ঝর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে। বৃহস্পতিবার সন্ধে ছ’টায় উদ্বোধনে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়।
|
উৎসব ঘিরে |
|
বিকেল থেকে দর্শকদের ভিড়। রাতের সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। গভীর রাত অবধি রিজেন্ট পার্কের ‘লায়েলকা’র পুকুরে চলে প্রতিমা নিরঞ্জন। দুর্গা থেকে কালী চিত্রটা একই। দক্ষিণ শহরতলির নানা পুজোর সঙ্গে বাড়ি ও বহুতলের ভাসান এই পুকুরে। প্রায় ষাট বছর আগে শুরু। প্রবীণদের মতে লাল খানের পারিবারিক পুকুর ছিল এটি। আবার কারও মতে প্রায় চার বিঘের ওপর এই এলাকায় ছিল ইটভাটা। ক্রমাগত মাটি তোলায় পুকুরের জন্ম। চার দিকে হোগলার ঝাড় আর মাঠ, খেজুরের বাঁকানো ডাল থেকে লাফিয়ে ঝাঁপ ছেলে-ছোকরাদের। পুরনো অনেক পুকুর-জলা মুছে গেলেও হারায়নি পুকুরটি। আগে যাদবপুর থানা স্থানীয় সমন্বয় কমিটির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ভাসান নিয়ন্ত্রণ করত। গত বছর থেকে দায়িত্বে কলকাতা পুলিশ ও পুরসভা। ট্রাক থেকে সরাসরি প্রতিমা নামাতে তৈরি হয়েছে উঁচু বাঁধানো চাতাল। উৎসবকে ঘিরে বেঁচে আছে লাল খানের পুকুর।
|
এসো মা লক্ষ্মী |
|
ছবি: রুমি গঙ্গোপাধ্যায় |
বছরে মাত্র দু’টি দিন। লক্ষ্মীর হাত ধরে কিছু রোজগার। তাই বারাসত, বসিরহাট বা বারুইপুর থেকে ওঁদের চলে আসা কলকাতার বাজারে। সারা বছরের রুজি-রোজগার ভিন্ন। পেয়ারা বাগান রয়েছে বারাসতের খলিলের। সুভাষগ্রামের রফিক আহমেদও চাষবাস করেন। ফি-বছর লক্ষ্মী পুজোর আগের দিন এঁদের দেখা মেলে দক্ষিণ শহরতলির এক বাজারে। সঙ্গে রাশি রাশি কলাগাছ। লক্ষ্মীপুজোর অন্যতম উপকরণ কলাবউ আর নৌকো। তাই বানিয়ে লক্ষ্মীলাভ। পুরো ৪৮ ঘণ্টা ঘরছাড়া। পুজো আসার আগেই কলাগাছের জন্য জোগাড় করা হয় কোনও বাগান। গত কাল গভীর রাত পর্যন্ত কেনাকাটার পর ভোর থেকেই শুরু জোরকদমে হাত চালানো। ফি-বছর একই জায়গায় বসেন খলিল। তাই বাঁধা খদ্দের রয়েছে বেশ কিছু। বাকিটা অর্ডার মাফিক তৈরি করতে থাকেন। গড়ে বিক্রি আড়াইশোটি। বছরভর লক্ষ্মীকে ঘরে রাখতে ওঁদের তৈরি কলাবউকে আবাহন গেরস্তর ‘এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে, আমারই ঘরে থাকো আলো করে’।
|
মধুর স্মৃতি |
‘যৌবনের শুরুতে যেসব কষ্ট সহ্য করতে হয়, অনেকদিন বাদে সেগুলোর একটা মধুর স্মৃতি থাকে। তখন আর অনুতাপ, তিক্ততা, জ্বালা ওসব থাকে না। যেমন তখন অনেক সময় পয়সার অভাবে কলেজ স্ট্রিট থেকে হেঁটে হেঁটে শ্যামবাজারে যেতাম। এখন মনে হয়... বাঃ বেশ ভালই তো হত, তখন মোটেই ভাল লাগত না। পয়সার অভাব ছিল, আর আমি তো পূর্ববঙ্গের ছেলে, ফলে কলকাতায় সেরকম পরিচিতি তখন ছিল না।’ ৮ জুলাই নিজের বাড়িতে সুদর্শন সেনশর্মা ও সপ্রতিভ মণ্ডলকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সুদর্শন সম্পাদিত কারুকথা এইসময়-এ এটি ছাপা হয়েছে। ওঁরা পুজোর আগেই প্রকাশ করেছিলেন ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্মাননা সংখ্যা’। লিখেছেন অলোক রায় পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় সুতপা ভট্টাচার্য রামকুমার মুখোপাধ্যায় পিনাকী ঠাকুর প্রমুখ। পুনর্মুদ্রণেও সুনীলের কথোপকথন, সঙ্গে শঙ্খ ঘোষের সাক্ষাৎকার ও গদ্য, অশ্রুকুমার সিকদারের রচনা। সুনীলের জীবন ও গ্রন্থপঞ্জি।
|
প্রথম আলো |
পাঁচ বছরের ছোট্ট জীবনে প্রথম বার! মণ্ডপ ঘুরে ঠাকুর দেখল রিয়াংকা (সঙ্গের ছবি)। কার সঙ্গে এসেছ? আধো গলায় ফুটফুটে মেয়ের জবাব, ‘জেলার দিদির সঙ্গে’। সমবয়সীদের থেকে রিয়াংকার জীবন আলাদা। জেলেই জন্ম। মা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত। আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের লোহার গেটের ও পারই ওর ঠিকানা। সাড়ে তিন বছরের সঙ্গীতার জন্মও জেলে। তারও প্রথম ঠাকুর দেখা। সাড়ে পাঁচ বছরের নয়ন মণ্ডলের দাদু-বাবা-ঠাকুমা ৪৯৮-এ ধারায় দণ্ডিত। মা নেননি নয়নকে। জেলেই ঠাকুমার সঙ্গে থাকে ও। খেলাধুলো, পড়াশুনোর ব্যবস্থা রয়েছে, পুজোও হয়। তবু-ও কিছু যেন নেই। বাড়ির সকলকে কাছে পাওয়া থেকে বঞ্চিত এই সব নিষ্পাপ শিশুরা। তবে এ বারের নবমীর সকালটা ছিল খানিক অন্য রকম। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে আলিপুরের আট জন কচিকাঁচার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের চৌদ্দো জন। বাইরে বেরিয়ে অনেকেই ভ্যাবাচাকা! কেউ জুড়ল কান্না। এক খুদের সান্ত্বনা অন্যকে, ‘কাঁদিস না, আমি তো কাঁদছি না।’ ফিরেই মায়েদের শোনানো বাইরের দুনিয়ার গল্প, দোলনা চড়া, ঠাকুর দেখা, প্রসাদ খাওয়া। ফিরে এসে জেলারের কাছে রিয়াংকার কান্না, ‘আন্টি, আমি ভেতরে যাব না, তোমার বাড়ি নিয়ে চল’। আই জি (কারা) রণবীর কুমারের আশ্বাস, পরের বার আবারও এ রকম বেড়ানোর ব্যবস্থা করবেন তাঁরা।
|
|
|
|
|
নিরভিমান |
পড়া আর পড়ানোর বিষয় ছিল অর্থনীতি। কিন্তু শুধু সেখানেই আটকে থাকেননি সৌরীন ভট্টাচার্য। রবীন্দ্রচর্চা থেকে প্রত্যহের যাপন সবের ভিতর আর বাইরের খুঁটিনাটি নকশার দিকে তাঁর খোঁজ। পোশাকি নাম সৌরীন্দ্রনাথ। শিক্ষকতা শুরু সিটি কলেজে। পরে কলকাতা আর দিল্লির নানা কলেজ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পর যোগ দেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখান থেকেই অবসর ১৯৭৭-এ। অর্থনীতি-চর্চার সীমানা প্রসারিত করেই কবিতা থেকে গান, নাটক থেকে ফিল্ম যা তিনি জানেন, তা তন্ন তন্ন করে জানেন। একদা বিবিধ অর্থনৈতিক প্রসঙ্গ বিশ্লেষণ করেছেন ‘প্রতিক্ষণ’-এ। পরে তা বইও হয়েছে উন্নয়ন: অন্য বিচার নামে। তাঁর অন্যান্য বই চাহিদাতত্ত্ব, পরিবর্তনের ভাষা, রাজনীতির বয়ান ও স্বচ্ছতার সংস্কৃতি, আধুনিকতার সাধ-আহ্লাদ, শুক-সারী সংবাদ, কেন আমরা রবীন্দ্রনাথকে পড়তে চাই এবং কী ভাবে ইত্যাদি। শেষোক্ত বইয়ে প্রথাগত চর্চার একেবারে বিপরীতে দাঁড়িয়ে তাঁর রবীন্দ্রপাঠ। বারবার মার্কস-প্রসঙ্গ আসে তাঁর লেখায়, তবু প্রথাগত অর্থে মার্কসবাদী হয়তো বলা যাবে না তাঁকে। ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নিজেকে বলতেন ‘মার্ক্সোলজিস্ট’। এই অভিধাটিই হয়তো তাঁর ক্ষেত্রে লাগসই। প্রকৃত অর্থেই তিনি এই সময়ের এক জন বিরল ভাবুক। যাঁর জিজ্ঞাসু আর প্রশ্নার্ত মনটি কূপমণ্ডূকতায় পর্যবসিত এই শহরে আজও আশ্চর্য সজীব। প্রিয় শিক্ষক প্রভাত সর্বাধিকারীর মতোই, যাঁর সঙ্গে তিনি প্রায় সারা জীবনের আত্মীয়তায় জড়ানো, নিজের যে কোনও পূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়ে অনায়াসে প্রশ্ন তুলতে পারেন তিনি। জন্ম ২২ অক্টোবর ১৯৩৭, বাংলাদেশের যশোহরে। সরল দৈনন্দিন জীবন আর উচ্চ চিন্তার যে আদর্শ আজ ক্রমশ ক্ষীয়মাণ, তিনি সেটিকে বহন করে চলেছেন আজও। নিজেকে সারা জীবন প্রতিপত্তি আর ক্ষমতাবৃত্তের বাইরে রেখে সদ্য পঁচাত্তর পূর্ণ করলেন আনন্দময়, নিরভিমান মানুষটি। |
|
|
|
|
|
|