জেলবন্দিদের মধ্যে মাওবাদী কারা, বাছতে গিয়ে হিমশিম রাজ্য কারা দফতর।
চলতি মাসে রাজ্য গোয়েন্দা দফতর জানতে চেয়েছে, সাম্প্রতিক কালে কত জন মাওবাদী বন্দি এ রাজ্যের জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন বা কত জন জামিন পেয়েছেন।
রাজ্যের সমস্ত জেলার পুলিশ সুপার এবং গোয়েন্দা প্রধানকে জানাতে বলা হয়েছে, ছাড়া পাওয়া ওই সব মাওবাদীদের বর্তমান গতিবিধিই বা কী রকম।
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই বিপাকে কারা-কর্তারা। কারণ, বন্দিদের মধ্যে কারা মাওবাদী, তা জানার উপায় তাঁদের নেই বলেই তাঁদের দাবি। তাঁদের এই অপারগতার কথা কারাকর্তারা জানিয়েও দিয়েছেন গোয়েন্দা বিভাগকে।
কেন?
রাজ্যের আইজি (কারা) রণবীর কুমারের কথায়, “আমাদের কাছে কোনও বন্দির তথ্য থাকা মানে তার নাম-ঠিকানা এবং কী কী ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, সেই তথ্য। এর থেকে কোনও মাওবাদী বন্দিকে পৃথক করার উপায় নেই।”
জেল দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণ ভাবে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে যে সব ধারায় মামলা রুজু হয়, তার মধ্যে খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণ, তোলা আদায়, বেআইনি অস্ত্র আইন ইত্যাদি থাকে। জেল কর্তাদের কথায়, “ওই সব ধারায় অনেক সময় সাধারণ বন্দিও থাকে, যারা মাওবাদী নয়।”
অনেক সময় মাওবাদীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২১ থেকে ১২৫ ধারা প্রয়োগ করা হয়। অনেক সময় স্বরাষ্ট্রসচিবের অনুমতি নিয়ে ইউএপিএ আইনও প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু মাওবাদী ছাড়া বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধেও ওই সব ধারায় মামলা হয়। ফলে কারও বিরুদ্ধে ওই আইনের প্রয়োগ দেখলেই তাকে মাওবাদী বলে দেওয়া যায় না।
এক কারা-কর্তার কথায়, “এ রাজ্যে ওই আইনে কেএলও বা গ্রেটার কোচবিহার আন্দোলনের নেতারাও বন্দি রয়েছেন। তাঁরা মাওবাদী নন।” জেল-কর্তারা বলছেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ চিহ্নিত করে বন্দিদের মধ্যে থেকে জঙ্গির তালিকা তৈরি করে দেওয়া হয়তো সম্ভব। কিন্তু মাওবাদীদের আলাদা করা সম্ভব নয়।
তা হলে জেলে কত জন মাওবাদী বন্দি রয়েছেন এবং কত জন ছাড়া পেয়েছেন, তার তথ্য কী ভাবে মিলবে? কারা দফতর এখন গোয়েন্দা বিভাগকে পাল্টা প্রশ্ন পাঠিয়েছে, “মাওবাদী বন্দির সংজ্ঞা কী হবে, আপনারা জানান। তা হলে তার ভিত্তিতে আমরা তালিকা তৈরি করে দিতে পারব।” সেই ‘সংজ্ঞা’ অবশ্য এখনও হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন কারা-কর্তারা। |