এখানকার নয়, প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের ঘটনা। কিন্তু উৎকোচ না-দিতে পারায় পুলিশের কাছে প্রত্যাখ্যাত এক তরুণের জীবন কী ভাবে অন্য খাতে বয়ে শেষমেশ মাওবাদে মোড় নিল, তা জেনে শিক্ষা নিতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
কী রকম?
আগুন লেগে কুঁড়েঘরের সঙ্গে ছাই হয়ে গিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার মার্কশিট ও শংসাপত্র। সে সবের ‘ডুপ্লিকেট’ পাওয়ার জন্য থানায় ডায়েরি করাতে গেলে পুলিশ চেয়ে বসল পাঁচ হাজার টাকা। পঞ্চাশ টাকাও দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না হতদরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে পুটুরাম মুন্ডার। প্রয়োজনীয় ওই সব নথিপত্রের অভাবে সে আর চাকরির দরখাস্ত করতে পারেনি। উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা তার বিফলেই গেল।
ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংহভূম জেলার জিয়ন গ্রামের সেই পুটুরামই পরবর্তী কালে হয়ে উঠল পুলিশের ত্রাস, মাওবাদী নেতা রঞ্জন মুন্ডা। গত অগস্ট মাসে ঝাড়গ্রামের কাছে যৌথ বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে রঞ্জন। তাকে জেরা করে জানা ঘটনা থেকে পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার থানাগুলিকেও শিক্ষা নিতে হবে বলে মনে করছেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ-কর্তারা। রাজ্য গোয়েন্দা শাখার (আইবি) অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল বাণীব্রত বসু বলেছেন, “রঞ্জন মুন্ডার ওই অভিজ্ঞতা থেকে মাওবাদী-প্রভাবিত এলাকায় পুলিশকে শিক্ষা নিতে হবে। আমরা থানাগুলিকে
|
রঞ্জন মুন্ডা |
সতর্ক করেছি।”
বারো বছর আগে ঝাড়খণ্ডের গুরাবান্ধা থানা ফিরিয়ে দিয়েছিল রঞ্জনকে। ওই অভিজ্ঞতার উদাহরণ টেনে ইতিমধ্যেই পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৩টি থানার পুলিশকে আদিবাসীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ওই সব এলাকায় সরকারি চাকরির আবেদনকারীদের ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট’ (ভি আর) যেন অনন্তকাল না-পড়ে থাকে, সেই বিষয়েও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে কোনও আবেদনকারীর ‘ভি আর’ তৈরি না-হলে তার কারণ সংশ্লিষ্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর বা সাব-ইন্সপেক্টর তাঁর ঊর্ধ্বতন অফিসারকে জানাবেন বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা মনে করেন, রঞ্জন মুন্ডার ওই অভিজ্ঞতাকে ঝাড়খণ্ডের ঘটনা বলে বিচ্ছিন্ন করে দেখা ঠিক হবে না। বরং সার্বিক ভাবে মাওবাদী সমস্যার শিকড়ে গিয়ে তার প্রতিকারের ক্ষেত্রে ওই ঘটনাটি চোখ খুলে দিতে পারে।
পুলিশ সূত্রের খবর, আদতে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা হলেও পশ্চিমবঙ্গের নয়াগ্রাম-গোপীবল্লভপুরে মাওবাদীদের ‘এরিয়া কমান্ডার’ রঞ্জন এই রাজ্যে অন্তত আটটি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত। পুলিশ জেনেছে, ঘাটশিলা কলেজের কলা বিভাগের ছাত্র পুটুরাম উচ্চ-মাধ্যমিকে পেয়েছিল ৫৬ শতাংশ নম্বর। সেটা ১৯৯৯ সাল। তার পর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসলেও উত্তীর্ণ হয়নি। ২০০০ সালে সেই অগ্নিকাণ্ডের পরে তিন বছর চাষবাস করে দিন গুজরান করছিল সে। ২০০৩ সালে পুটুরাম চলে যায় আগরায়। সেখানে ঠান্ডা পানীয় প্রস্তুতকারক একটি সংস্থার কারখানার শ্রমিক হিসেবে তার দৈনিক মজুরি ছিল ৩৫ টাকা। ২০০৬-এর গোড়ায় পুটুরাম বাড়ি ফিরে আসে। তত দিনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাওবাদী নেতা অনিল ঘোষ ওরফে অজয় এবং কমল মাইতি গুরাবান্ধা এলাকায় যাতায়াত শুরু করেছে। বাংলার ওই দুই নেতার প্রভাবেই মাওবাদীদের দলে যোগ দেয় পুটুরাম। |