এলাকা উন্নয়নের কাজে বছরে ৬০ লক্ষ টাকা খরচ করতে হিমশিম খাচ্ছেন বিধায়কেরা। অথচ প্রকল্পের টাকা ঠিক মতো খরচ হচ্ছে কি না, তা তদারকির যে ব্যবস্থা ছিল, নতুন সরকার সেটা বন্ধ করে দিয়েছে। সাংসদদের ক্ষেত্রে অবশ্য ওই ব্যবস্থা চালু আছে।
নিজের বিধানসভা এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন ও পরিষেবামূলক কাজের জন্য সরকারের কাছ থেকে এক জন বিধায়ক বছরে ৬০ লক্ষ টাকা পান। দুই কিস্তিতে ওই টাকা দেওয়া হয়। নতুন সরকারের আমলে গত দেড় বছরে এ রাজ্যের ২৯৫ জন বিধায়ক (এক জন মনোনীত) এ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন ২২৬.২০ লক্ষ টাকা।
কিন্তু রাজ্যের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই টাকার মধ্যে মাত্র ২১.৩৪% অর্থ খরচ করেছেন বিধায়কেরা। এ জন্য অবশ্য অধিকাংশ বিধায়কই আঙুল তুলেছেন জেলা অথবা পুর প্রশাসন এবং প্রকল্প রূপায়ণকারী সংস্থাগুলির দিকে।
অথচ সরকারি সূত্রেরই খবর, বিধায়কদের এলাকা উন্নয়নের কাজ তদারকি করতে একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থা চালু ছিল বাম আমলে। রাজ্য প্রশাসনেরই এক কর্তার কথায়, “এতে কাজে গতি আসত। কাজ শেষের শংসাপত্র পেতেও সুবিধা হত।”
কিন্তু ওই ব্যবস্থাটাই এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এলাকা উন্নয়নে সাংসদদের টাকা খরচের ক্ষেত্রে কিন্তু তদারকি ব্যবস্থা দিব্যি চালু আছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, এলাকা উন্নয়নের জন্য সাংসদরা এখন বছরে ৫ কোটি টাকা করে পান। এই টাকার ২% অর্থ তদারকির জন্য বরাদ্দ করা হয়। অফিস ঘরের ভাড়া, টেলিফোন-সহ যোগাযোগের খরচ, অডিট এবং এই সব কাজের জন্য লোক নিয়োগের খরচ ওই বরাদ্দ থেকে আসে।
সরকারি সূত্রের খবর, বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল প্রকল্প তদারকির জন্যও আগের আমলে ২% টাকা কেটে নেওয়া হত। ওই অর্থে এক জন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং এক জন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ করা হত। এখন সে সব বন্ধ। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, “আমাদের সময় তদারকি ব্যবস্থা চালু ছিল। মাঝে এক বার বন্ধ হলেও ফের তা চালু করা হয়। নতুন সরকার আসার পরে তদারকি ব্যবস্থা আবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”
গত দেড় বছরে রাজ্যের ১০০ জন বিধায়ক প্রকল্প রূপায়ণের হিসেব দাখিল করতে পারেননি। ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে এঁরা কেউই তাঁদের টাকার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট বা কাজ শেষের শংসাপত্র জমা দিতে পারেননি। তদারকি ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গিয়ে অবস্থা আরও জটিল হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও রাজ্যের এক তৃণমূল বিধায়কের বক্তব্য, “তদারকি ব্যবস্থা চালু থাকলেই যদি সব সমস্যা মিটে যেত, তা হলে সাংসদদের ক্ষেত্রে টাকা পড়ে থাকছে কেন?”
এর পাল্টা হিসেবে এক সাংসদ দাবি করলেন, সাংসদ তহবিলের টাকার অঙ্ক অনেক বেশি। টাকা দেয় কেন্দ্র। হিসেবও তাদেরই দাখিল করতে হয়। পদ্ধতিটাও অনেক জটিল। তাই সেখানে সময় লাগতেই পারে।
তবে সূর্যবাবু জানান, বিধায়ক তহবিল নিয়ে বিধানসভার যে কমিটি রয়েছে, সেখানে এই তদারকির বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা হয়েছে। সব দলের প্রতিনিধিরাই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ, তদারকির ব্যবস্থা থাকলে কাজে গতি আসবে। কমিটি এই নিয়ে সুপারিশও করেছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজ্য সরকারকে। |