নতুন প্রস্তাব সরকারের
বেশি জমি কিনতে গেলেও এ বার হলফনামা
মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা করায় রাজ্যে বড় মাপের বিনিয়োগ কার্যত বন্ধ। এই অবস্থায় সরকারের নতুন পরিকল্পনা হল, সিলিং অর্থাৎ ২৫ একরের বেশি জমি রাখার অনুমোদন পেতে হলে বিনিয়োগকারীকে হলফনামা দিয়ে রাজ্যকে জানাতে হবে, তিনি বাজারে গিয়ে একমাত্র ইচ্ছুক চাষিদের কাছ থেকেই জমি কিনছেন। প্রস্তাবিত নতুন এই প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট দীর্ঘ। এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, সরকার যেখানে শিল্পের অনুমতির জন্য ফর্মের বহর অনেকটা কমিয়েছে, ১৪ওয়াই ধারায় জমির ঊর্ধ্বসীমায় ছাড় দিয়েছে, সেখানে হঠাৎ এত দীর্ঘ প্রক্রিয়ার প্রস্তাব কেন? যাঁরা এখনও বিনিয়োগে আগ্রহী, এর ফলে তাঁরা নিজেদের আরও গুটিয়ে নেবেন না কি?
মহাকরণের বক্তব্য, বাম আমলে শিল্পের নামে বহু পরিমাণ জমি নিয়ে অনেকেই ফেলে রেখেছেন বলে সরকারের কাছে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি, জমি কেনার সময় অনেক ক্ষেত্রেই চাষিকে জমি দিতে বাধ্য করার অভিযোগও রয়েছে। ভূমি দফতরের এক মুখপাত্র জানান, শিল্পের জন্য জমি প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্পর্শকাতর বিষয়। তাই আইনে ছাড়ের সুবিধা বাড়ানো হলেও তার অনুমোদন দিতে আরও কঠোর হতে চায় সরকার। ওই মুখপাত্র জানান, হলফনামা দেওয়ার অর্থ, সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী বা সংস্থা এর জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন, সরকার নয়। হলফনামায় সেই তথ্য আদালতে নথি হিসেবে জমা থাকবে। ভবিষ্যতে ওই জমিকে কেন্দ্র করে জটিলতা দেখা দিলে আদালতেই তার মীমাংসা করতে হবে।
শিল্পের জন্য বেশি জমি রাখার সুবিধা করে দিতে সম্প্রতি ভূমি সংস্কার আইনের (১৪ওয়াই ধারা) সংশোধন করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু অতিরিক্ত জমি রাখার অনুমতি কত দিনে দেওয়া হবে, তাই নিয়ে দু’রকম মত তৈরি হয়েছে। মহাকরণের খবর, গোড়ায় শিল্প দফতর চেয়েছিল, নিয়ম মেনে সিলিংয়ের বেশি জমি রাখার আবেদন করলে দ্রুত তার অনুমোদন দিক ভূমি সংস্কার দফতর। এতে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। কিন্তু ভূমি সংস্কার দফতরের মতে, তাড়াহুড়ো করলে ভবিষ্যতে ওই জমি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হতে পারে সরকারকে।
এই টানাপোড়েনের মধ্যেই সরকারের শীর্ষকর্তাদের নির্দেশে শিল্প দফতর একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে। সেখানেই শিল্পের জন্য জমি কেনার ক্ষেত্রে লগ্নিকারীদের হলফনামা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি, সিলিংয়ের বেশি জমি রাখার অনুমতি দেওয়ার আগে সরকার কোন কোন পদক্ষেপ করবে, তা-ও বলা হয়েছে ওই প্রস্তাবে। দেখা যাচ্ছে: শিল্পের জন্য সিলিংয়ের বেশি জমির প্রয়োজন হলে বিনিয়োগকারীকে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা দিতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে। দফতর সেই রিপোর্ট পাঠাবে শিল্প দফতরের কাছে। ওই রিপোর্ট কোনও বিশেষজ্ঞ তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে মূল্যায়ন করাবে শিল্প দফতর। মূল্যায়ন করে তারা সুপারিশ জমা দিলে জমি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তা পাঠানো হবে ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে। পরবর্তী পদক্ষেপ করার জন্য ওই সুপারিশ সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছেও পাঠানো হবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তার পরে ওই প্রস্তাব মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠাবে ভূমি দফতর।
মহাকরণের খবর, মন্ত্রিগোষ্ঠীর কথা মতোই শিল্প দফতর প্রস্তাবটি তৈরি করেছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক সিলমোহর পরার অপেক্ষা। কিন্তু শিল্পমহলের ধারণা, এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় অনুমতি পেতে সময় বেশি লাগবে। অনেকেই বলছেন, একেই তো জমি অধিগ্রহণ থেকে সরকার হাত তুলে নেওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শিল্পমহলে। তার উপরে নিজে (সিলিংয়ের বেশি) জমি কিনলেও যদি এত ঝক্কি পোহাতে হয়, তা হলে বিনিয়োগ কি আদৌ আসবে?
সরকারের এক মুখপাত্রের বক্তব্য, প্রথমত, যে শিল্পস্থাপনের জন্য জমির আবেদন করা হচ্ছে, সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা বিশেষজ্ঞ দিয়ে না খতিয়ে দেখলে জমির অপব্যবহার হতে পারে। নতুন সরকার সেটা চায় না। দ্বিতীয়ত, যে জমি চাওয়া হয়েছে তা সব রকম জটিলতামুক্ত কি না, তা-ও অনুমতি দেওয়ার আগে ভাল করে খতিয়ে দেখা দরকার।
বস্তুত, এই নিয়ে বিরোধ রয়েছে প্রশাসনের মধ্যেই। একাংশের বক্তব্য, দ্রুত অনুমতি দিয়ে পরে মিউটেশনের সময় জমির জটিলতামুক্তির বিষয়টি দেখা হোক। অন্য অংশের মতে, সরকার অনুমতি দেওয়ার পর জমি নিয়ে কোনও জটিলতা দেখা দিলে তখন তা ফিরিয়ে নেওয়া কঠিন হবে। তাই অনুমতি দেওয়ার আগে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করার ভাবনাই সরকার মানতে চলেছে বলে সূত্রের খবর। এতে অনেক দেরি হলেও কিছু করার নেই বলে মন্তব্য করেন ওই মুখপাত্র। শিল্প দফতর সূত্রের খবর, আইন সংশোধনের পর এ পর্যন্ত ১৪ওয়াই ধারায় প্রায় ১৫টির মতো প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে আরও অন্তত দু’ডজন প্রস্তাব। অনুমোদন প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, “প্রস্তাব খতিয়ে দেখতে কিছু সময় তো লাগবেই।” তিনি অভিযোগ করেছিলেন, “অনেকে সরকারের তৈরি করে দেওয়া ফর্ম ঠিকমতো পূরণ না করেই প্রস্তাব জমা দিচ্ছেন। অনেকে মাঝপথে প্রকল্পটিই বদলে দিতে চাইছেন। কেউ কেউ আবার অনুমতি পাওয়ার পরেও শিল্পপ্রস্তাব পরিবর্তন করতে চাইছেন। এই সব দেখেশুনেই আমাদের এগোতে হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.