বুদ্ধের নামে যে দৌড়ের ময়দান, সেখানে যুদ্ধের আবহ যেন তীব্র হয়ে উঠছে। যার কেন্দ্রে রয়েছে ফেরারির সেই বিতর্কিত পতাকা লাগানো গাড়ি। এবং ভারত সরকার দফায় দফায় নিজেদের বিরক্তি জানানো সত্ত্বেও (এ দিন চিঠি দিয়েছে ক্রীড়া মন্ত্রক) যে বিষয়ে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসার কোনও ইঙ্গিত দেননি ফেরারি কর্তৃপক্ষ।
গত কাল বিবৃতি দিয়ে নিজেদের বিরক্তির কথা জানিয়েছিল বিদেশ মন্ত্রক। ইতালির নৌ-বাহিনীর পতাকা নিজেদের গাড়িতে লাগানোই শুধু নয়, ফেরারি নিজেদের ওয়েবসাইটে লিখেছে: ‘আমরা আশা করি, ভারতে আটক থাকা দুই ইতালীয় নৌ-সেনার ব্যাপারে ভারত ও ইতালি দ্রুত সমাধানে পৌঁছবে।’ এই দুই রক্ষীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা চলছে। এই ঘটনায় অত্যন্ত বিরক্ত বিদেশ মন্ত্রক সকালেই বিবৃতি দিয়ে বুঝিয়ে দেয়, ঘটনাটি মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়। তার পরে আজ চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক। তার পরেও নিজেদের অবস্থান থেকে সরেনি ফেরারি। বরং সেই অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়ে তারা দিল্লিকে ক্ষান্ত করার চেষ্টা করেছে এ দিন।
দিল্লি ঘটনাটিকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, সেটা বোঝা যায় কাল বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতির পরে আজ ক্রীড়া মন্ত্রকের চিঠিতে। ভারতীয় মোটরস্পোর্টস ফেডারেশনের (এফএমএসসিআই) প্রেসিডেন্ট ভিকি চন্দোককে ওই চিঠি পাঠানো হয়। শনিবার বেলার দিকে বুদ্ধ সার্কিটের প্যাডক এলাকায় দাঁড়িয়ে ভিকি জানান, চিঠির কথা তিনি ফেরারির টিমের প্রধান স্তেফানো দোমেনিকালিকে জানিয়েওছেন। কী লেখা রয়েছে চিঠিতে? ভিকি জানান, চিঠিতে রয়েছে: ‘ভারতীয় রেসে যেন এমন কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য না থাকে এবং এমন কোনও কাজ না হয় যা ভারতীয়দের আবেগকে আঘাত করে। যে দুই ইতালীয় নাবিক গ্রেফতার হয়েছেন, ফেরারির এই আচরণ তাঁদের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা বলে ব্যাখ্যা করা যেতেই পারে।’
এর কিছু পরেই এফএমএসসিআই এবং ফেরারির তরফে যুগ্ম বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, ইতালীয় দলের গাড়িতে পতাকা লাগানোর পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। ভারতের বিচার ব্যবস্থায় কোনও ভাবে হস্তক্ষেপ করার কোনও অভিসন্ধিও নেই ফেরারির। তবে পতাকা তাঁরা সরিয়ে দেবেন, এমন কোনও কথা দোমেনিকেলি এ দিন বলেননি।
ফেরারির আজকের বিবৃতিতে যা লেখা হয়েছে, তার সঙ্গে দলের চব্বিশ ঘণ্টা আগের অবস্থানের কোনও মৌলিক ফারাক নেই। লেখা হয়েছে, “ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই আমরা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, আমাদের উদ্যোগের পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। আমরা শুধু আমাদের নৌ-বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধাই জানাতে চেয়েছি।”
ভারতীয় আবেগে যাতে ধাক্কা না লাগে, সে জন্য এফএমএসসিআই-কে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। কিন্তু ভিকি চন্দোক আগাগোড়াই ফেরারিকে আড়াল করে গিয়েছেন। তাদের সুরেই তিনি বলেন, “ফেরারি কিন্তু প্রথম থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় নাক গলানো ওদের উদ্দেশ্য নয়। কারও ভাবাবেগে আঘাত করার কোনও চেষ্টা ফেরারি করেনি।” সংস্থার চেয়ারম্যান বিজয় মাল্য তো নিজেদের ঘাড়ে দায়িত্ব রাখতেই নারাজ। বেশ বিরক্ত হয়েই মাল্য বললেন, “বিষয়টা কূটনৈতিক। দুই দেশের সরকারের মধ্যে এ নিয়ে কথা হওয়া দরকার।”
ফেরারির প্রাক্তন টিম প্রধান জঁ টড এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক অটোমোবাইল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট। এফআইএ আজও এই বিতর্ক থেকে নিজেদের দূরে রাখল। |