চোখ দু’টো দেখলে মনে হবে যেন দু’জোড়া চকোলেট ভরা হ্রদ। এতটাই বাদামি। উজ্জ্বল। নিজে চকোলেট ভালবাসেন বলেই হয়তো! তাঁর কথায়, “ডার্ক, বিটার চকোলেট।” আঙুলের লাল নেল পলিশ, লাজুক হাসি আর মৃদু ভাষণে তিনি আগাগোড়া আবেদনময়ী। আবার দলের মধ্যে খবর নিলে জানা যাবে, নেতার আসনে যখন বসেন তখন কাউকে রেয়াত করেন না। এক দিকে ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের ভক্ত। নিজে সেতার বাজান। অন্য দিকে, ফর্মুলা ওয়ানের মতো সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রযুক্তির নাড়ি নক্ষত্র আঙুলের ডগায়। ছেলে-মেয়েকে মানুষ করার পাশাপাশি দাপটে দল নিয়ে টক্কর দিচ্ছেন ফেরারি, মার্সিডিজ, ম্যাকলারেনের সঙ্গে। ‘হান্ড দ্যাট রকস দ্য ক্রেডল, রুলস দ্য ওয়ার্ল্ড’ বলে ইংরেজিতে একটা কথা আছে। মণীষা ক্যালটেনবর্ন যেন সেটারই রক্ত-মাংসের রূপ!
স্যবার দলের ভরাতীয় টিম প্রধান ফর্মুলা ওয়ানের পুরুষ শাসিত সমাজের চেহারাটাই বদলে দিয়েছেন। কোরিয়ায় আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের দায়িত্ব নিলেও গত দু’বছরে মণীষার মনি-স্পর্শে দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্যবার। কতটা কঠিন ছিল কাজটা? শনিবার টিম বিল্ডিংয়ের খোলামেলা আড্ডায় মণীষা বললেন, “অবশ্যই সহজ ছিল না! আমি তো পড়াশোনা করেছি আইন নিয়ে। কোনও দিনও ভাবিনি ফর্মুলা ওয়ানে পৌঁছে যাব।” তা হলে ফর্মুলা ওয়ানে কীসের টানে? মণীষার মুখটা উজ্জ্বল হল। বললেন, “পর্দার পিছনে যেটা চলে সেই পাগলামিটা। কী ভাবে একটা গাড়ি তৈরি হয়। তার পিছনে কত পরিকল্পনা, কত স্ট্র্যাটেজি গঠন।” স্যবার গোষ্ঠীতে আইন বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন। একটা কাজ ছিল ফর্মুলা ওয়ান দল সংক্রান্ত। সেই শুরু। তারপর ক্রমশ জড়িয়ে পড়েছেন। স্যবার এ বার চ্যাম্পিয়নশিপে ছ’নম্বরে। এর পিছনে গোটা বিশ্ব মণীষার কৃতিত্ব দেখলেও বিয়াল্লিশের পঞ্জাবি মেয়ে বললেন, “একা আমি নই, গোটা দল চেষ্টা করেছে। দলের ঘোর দুর্দিনেও টিমের কেউ স্যবার ছেড়ে যায়নি। এই আন্তরিকতাটাই সাফল্যের চাবিকাঠি।”
মণীষার বাইরের কোমলতাটা যা ঢেকে রাখে, সেটা ভিতরের ইস্পাত কাঠিন্য। যার জোরে ফর্মুলা ওয়ানের মতো চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার মঞ্চেও তিনি নিজের শর্তে কাজ করছেন। দেরাদুনে জন্ম। আট বছর পর্যন্ত সেখানেই বেড়ে ওঠা, স্কুলে পড়া। “তার পর বাবা-মা চলে এলেন ভিয়েনা। আমিও। গরমের ছুটিতে দেশে ফিরতাম। আজও যখনই সম্ভব হয় দেশে ফেরার চেষ্টা করি। তবে হিন্দিটায় মরচে পড়েছে,” লাজুক হাসেন মণীষা। আপাতত সুইৎজারল্যান্ডের বাসিন্দা। স্বামী জার্মান। দুই সন্তান। বড় ছেলে, ছোট মেয়ে। বললেন, “আমার বাচ্চারা তো কয়েকটা শব্দ হিন্দি ছাড়া বলেই না। ওদের চাপে জার্মান শ্বশুর-শাশুড়িকেও হিন্দি শিখতে হয়েছে।” একই ভাবে চান ফর্মুলা ওয়ানেও ভারতীয়ত্ব আমদানি করতে। শাড়ি পরতে দারুণ ভালবাসেন। “সুযোগ পেলেই শাড়ি পরি। ফর্মুলা ওয়ানের কোনও পার্টি-টার্টি থাকলে তো কথাই নেই।” ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের শাড়ি বোঝাই তাঁর আলমারিতে। আর ভালবাসেন আলুর পরোটা! বলিউডের সঙ্গেও যোগাযোগ আছে। শেষ দেখা ছবি, কাহানি। “একটা ফ্লাইটে দেখলাম। দারুণ লেগেছে!”
মণীষা মানেন, ফর্মুলা ওয়ান থেকে ভারতের পাওয়ার অনেক রয়েছে। বললেন, “এটা প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ধাপ। এর টানে আরও অনেক প্রযুক্তি ভারতে আসবে। যে দেশ নিজেকে টেকনোলজিতে এক নম্বরে দেখতে চায়, সেই দেশে ফর্মুলা ওয়ানকে কাজে লাগাবে না কেন?”
ভারতীয় জনতা কি শুনছে? |